প্রতীকী ছবি।
পাঁচ বছরের মধ্যে অর্থনীতিকে ৫ লক্ষ কোটি ডলারে নিয়ে যেতে দেশে বিশ্ব মানের পরিকাঠামোয় ১০২ লক্ষ কোটি টাকা লগ্নির স্বপ্ন ফেরি করেছিল মোদী সরকার। ডিসেম্বরে তার প্রাথমিক রূপরেখা প্রকাশ করেছিল তারা। বুধবার আর্থিক বিষয়ক সচিব অতনু চক্রবর্তীর নেতৃত্বে টাস্ক ফোর্সের চূড়ান্ত রিপোর্ট জানাল, প্রকল্পের খরচ বেড়ে হতে পারে ১১১ লক্ষ কোটি। করোনার এই কঠিন সময় এই অঙ্কই ফের প্রশ্ন তুলে দিয়েছে বিভিন্ন মহলে, এত টাকা আসবে কোথা থেকে?
করোনা যুঝতে দেশ জুড়ে লকডাউন চলছে। ঝিমিয়ে থাকা অর্থনীতিতে স্তব্ধ আর্থিক কর্মকাণ্ড। সরকার কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিলেও, এখনও পর্যন্ত গড়াতে শুরু করেনি কল-কারখানার চাকা। এরই মধ্যেই এ দিন অর্থমন্ত্রীর কাছে জমা পড়ল এই রিপোর্ট। বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, এই বিপুল খরচের অধিকাংশটাই (৭৯%) কেন্দ্র ও রাজ্যের করার কথা। কিন্তু কর বাবদ আয় যাদের ক্রমশ কমছে, তারা এত টাকা পাবে কোত্থেকে? চাহিদায় গতি না-ফিরলে বাদবাকি ২১ শতাংশের জন্য সংস্থাগুলিই বা লগ্নি করবে কেন? বাজারে বন্ড ছেড়ে আদৌ কত টাকা তোলা যাবে, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
আরও পড়ুন: মার্কিন রিপোর্টে বিদ্ধ মোদী সরকার
প্রকল্পে নজরদারি, তা কার্যকর করা ও অর্থ জোগাড়ে তিনটি কমিটি তৈরি হবে। এর মধ্যে তৃতীয়টির কাজই সব চেয়ে জটিল, ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
পরিকাঠামোয় পরিকল্পনা
• ২০২০-২৫ অর্থবর্ষে পরিকাঠামোয় খরচ ১১১ লক্ষ কোটি টাকা। প্রাথমিক রিপোর্টে যা ১০২ লক্ষ কোটি হবে বলে মনে করা হয়েছিল।
• এই হিসেবের মধ্যে ধরা হয়েছে বিভিন্ন নির্মীয়মাণ প্রকল্পের খরচও।
• এর মধ্যে ৩৯% খরচ বহন করবে কেন্দ্র, ৪০% রাজ্যগুলি এবং ২১% বেসরকারি ক্ষেত্র।
• খসড়া প্রস্তাব অনুসারে, চলতি অর্থবর্ষে ১৯.৫ লক্ষ কোটির প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। পরের চার অর্থবর্ষে লক্ষ্য ১৯, ১৩.৮, ১২.৮ ও ১১.১ লক্ষ কোটি টাকা।
• কর্পোরেট বন্ড, মিউনিসিপ্যাল বন্ডের মতো ঋণপত্র নির্ভর প্রকল্প এনে, উদ্বৃত্ত জমি বেচে, পরিকাঠামোয় পুঁজি জোগানোর আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে এই টাকা তোলার কথা বলা হয়েছে।
প্রশ্ন যেখানে
• আগে থেকেই অর্থনীতি ঝিমিয়ে। সংস্থাগুলি হাত গুটিয়ে লগ্নি থেকে। তার উপরে নেমেছে করোনার থাবা। এই অবস্থায় কারা পুঁজি ঢালতে রাজি হবে?
• প্রস্তাবে কেন্দ্র ও রাজ্যের মোট ৭৯% লগ্নির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তাদের হাতেই বা টাকা কই! আয় তো কমছে।
• কাজকর্ম চালু না-হলে রাজকোষে কর বাবদ আয় আসা নিয়েও সংশয় তৈরি হবে। ফলে কেন্দ্র বা রাজ্যগুলির পক্ষে পরিকাঠামোয় হাত খুলে খরচ করা সম্ভব হবে না। তার উপরে স্বাস্থ্য খাতে খরচ না-করে যেখানে উপায় নেই। রয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রকে আর্থিক ত্রাণ দেওয়ার দায়ও।
• বহু প্রকল্প থমকে থাকায় খরচ বেড়েছে আগেই। করোনায় কাজ বন্ধ। ফলে তা আরও বাড়ার আশঙ্কা। বাড়তি টাকা দেবে কে?