প্রতীকী চিত্র।
‘ড্রপ আউট’-এর সংখ্যা বাড়ছে। শুধু লেখাপড়ায় নয়, কেব্ল টিভির পরিষেবা নেওয়ার ক্ষেত্রেও। করোনার দু’দফা ধাক্কায় দেশে লাফিয়ে বেড়েছে বেকারত্ব। বেতনে কোপ পড়েছে বহু মানুষের। অনেকে চিকিৎসার খরচের ধাক্কায় বিপর্যস্ত। তার উপরে তেলের দাম আগুন হওয়ায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দর চড়ছে। কারণ পরিবহণের খরচ বেড়েছে। সংসারের অত্যাবশ্যক খরচ সামলাতে তাই কেব্ল টিভির পরিষেবার খরচেই কাটছাঁট করছেন বহু গ্রাহক। লোকাল কেব্ল টিভি অপারেটরদের (এলসিও) দাবি, এলাকার ভিত্তিতে গড়ে ২৫%-৫০% গ্রাহক হয় পরিষেবা নেওয়া বন্ধ করেছেন, নয়তো কম দামি প্যাকেজে ঝুঁকছেন। ফলে আয় কমছে তাঁদেরও। ডিটিএইচ পরিষেবার পরে স্মার্ট ফোন, স্মার্ট টিভির দৌলতে কিছুটা ধাক্কা খেয়েছিল কেব্ল টিভি পরিষেবা। তবু দেশের বেশিরভাগ পরিবারেই ভরসা ছিল কেব্ল সংযোগে টিভি দেখা। বিশেষত করোনা সংক্রমণের আবহে, যখন ঘরবন্দি মানুষের জীবনে অন্য বিনোদন উধাও।
কলকাতার এক প্রবীণ এলসিও-র দাবি, শহরের অধিকাংশ গ্রাহক মাসে ২৫০-৩০০ টাকা খরচ করেন। তাঁদের ২০%-৩০% এখন তা বন্ধ রেখেছেন। ৩০০-৪০০ টাকার প্যাকেজ থেকে কম দামি প্যাকেজে যাচ্ছেন কেউ। সহমত বিশ্ব বাংলা কেব্ল টিভি অপারেটর্স ইউনিয়নের সহ সম্পাদক বিদ্যুৎ দেব অধিকারী। বলছেন, এই প্রবণতা বেশি গ্রামে। তাই রাজ্যে নিষ্ক্রিয় সেট টপ বক্সের সংখ্যা ৫০% ছুঁয়েছে।
ওই সংগঠনেরই মুর্শিদাবাদের কর্তা মহম্মদ বলছেন, তাঁর ১০ হাজার বক্সের মধ্যে এখন চালু অর্ধেক। গ্রামীণ এলাকায় মাসে গ্রাহকেরা গড়ে ১৭০-১৮০ টাকা খরচ করলেও এখন সংযোগ বন্ধ রেখেছেন অনেকেই। একাংশ শ’দেড়েক টাকার বেসিক প্যাকেজের সঙ্গে বড়জোড় জনপ্রিয় একটি-দু’টি চ্যানেল জুড়ে খরচ কমাচ্ছেন। অপারেটরেরা বলছেন, শোধ দেওয়ার চিন্তায় ঋণ নিয়ে ব্যবসা চালাতে ভয় পাচ্ছেন তাঁরা। কারণ, আয় কমছে। সরাসরি আর্থিক সাহায্যের আর্জিও জানাচ্ছেন একাংশ। দাবি, ইন্টারনেটের ব্যবসা বাড়লেও তা কেব্লের ক্ষতির চেয়ে কম। সেখানে টেলি সংস্থাগুলির সঙ্গে সস্তার মাসুল বা নানা অফারের প্রতিযোগিতাতেও এঁটে উঠতে পারছেন না অপারেটরেরা। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, গ্রামে অনেকে ক্ষুদ্রঋণ সংস্থার থেকে ধার নেন। ফলে সাংসারিক খরচ ও ঋণের কিস্তি সামলে টিভির টাকা থাকছে না। করোনায় আক্রান্ত বহু পরিবারও প্রয়োজন মেটানোর অর্থ সংস্থানে ব্যস্ত। তাই কেব্লের টাকা চাইলে আসছে আর্জি, ‘‘হয় ক’মাস নিখরচায় পরিষেবা দিন, নয়তো বন্ধ করুন।’’
বিদ্যুতের কথায়, ‘‘ওঁদের সমস্যাটা বুঝছি। কিন্তু আমরা নিরুপায়। পরিষেবা খরচ, কর্মীদের বেতন মেটাব কী করে?’’ গত বছর একটি মাল্টি সার্ভিস অপারেটর (এমএসও) সংস্থা তিন মাসের অর্ধেক টাকা আগাম মেটানোয় ধারে গ্রাহকদের পরিষেবা দেওয়া গিয়েছিল দাবি করে এ বারও সব এমএসও-র কাছে সেই আর্জি জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, অর্থনীতিবিদদের হুঁশিয়ারি ছিলই। তেল, চিকিৎসা, খাদ্যপণ্যের মতো অত্যাবশ্যক পণ্যের দামে রাশ টানা না-গেলে, অত্যাবশ্যক নয় এমন পণ্য-পরিষেবার চাহিদা কমবে। কারণ, মানুষ তার খরচ কমাতে বাধ্য হবেন।