—প্রতীকী চিত্র।
ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের ঋণ নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি মানতে না চাইলেও শিল্প মহলের একাশের অভিযোগ, সরকার বারবার বার্তা দিলেও ছোট সংস্থাগুলিকে ঋণ জোগানোর ব্যাপারে অনীহা দেখায় ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি। সম্প্রতি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের এক রিপোর্টেও তেমনই মন্তব্য করা হয়েছে। এ বার সিডবি এবং ঋণ সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ ও উপদেষ্টা সংস্থা ট্রান্সইউনিয়ন সিবিলের এক যৌথ সমীক্ষা রিপোর্টেও জানানো হল, গত অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকে ঋণের চাহিদা বৃদ্ধির হারের চেয়ে ঋণের জোগান বৃদ্ধির হার ছিল অনেকটা কম।
ভারতের ছোট সংস্থাগুলির একাংশ অসংগঠিত ক্ষেত্রভুক্ত। ফলে তাদের অনেকেই নথির অভাবে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ পায় না। আবার নথি থাকলেও তাদের বন্ধক ছাড়া ঋণ না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ব্যাঙ্কগুলির বিরুদ্ধে। ঋণ জোগানোর জন্য সরকার এবং রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের বার্তা সত্ত্বেও। রিপোর্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জানুয়ারি-মার্চে ছোট শিল্পের ঋণের চাহিদা এক বছর আগের তুলনায় ৩৩% বেড়েছিল। কিন্তু ঋণের জোগান বেড়েছিল মাত্র ১১%। সমীক্ষকদের ব্যাখ্যা, ঋণদাতাদের অতি-সতর্কতাই এর জন্য দায়ী। সিডবি-সিবিলের বক্তব্য, ছোট সংস্থার প্রসার এবং নতুন সংস্থার ঋণ নেওয়ার ছবি উজ্জ্বল হয়েছে। উন্নতি হয়েছে খেলাপি ঋণের হারেও। অথচ যথাযথ তথ্য বিশ্লেষণ এবং সংস্থাগুলির সম্পদের গুণমান বৃদ্ধির তথ্য হাতে থাকলেও ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলির অনীহা দূর হচ্ছে না।
সিডবির সিএমডি শিব সুব্রহ্মণ্যনের দাবি, ছোট শিল্পের পুনরুজ্জীবনের জন্য সরকার সংস্কারমুখী পদক্ষেপ করায় ঋণের চাহিদা বেড়েছে। সেই চাহিদা পূরণ করার জন্য ঋণদাতাদের উৎসাহিত করবেন তাঁরা। সিবিলের এমডি-সিইও রাজেশ কুমারের মত, চাহিদা ও জোগানের মধ্যে সেতুবন্ধন করাই ঋণদাতাদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। নতুন সংস্থাগুলির ঋণের চাহিদার সুযোগ নিতে হবে ব্যাঙ্কগুলিকে।
ঋণ বৃদ্ধির হার কম থাকার পিছনে ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের উদ্যোগের অভাব রয়েছে বলে মনে করেন ছোট শিল্পের অন্যতম সংগঠন ফিসমের সেক্রেটারি জেনারেল অনিল ভরদ্বাজ। একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, বিশ্ব জুড়ে রফতানির বাজার ঝিমিয়ে। এই অবস্থায় ঋণ নিয়ে ব্যবসা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শিল্প মহলও কিছুটা সতর্ক। আবার উল্টো দিকে, বিকল্প পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও অলসতা দেখা যাচ্ছে ব্যাঙ্কগুলির মধ্যে। ছোট শিল্পের মধ্যে যে সমস্ত ক্ষেত্রে পরিস্থিতি তুলনায় ভাল, সেখানে ঋণ বণ্টনে জোর দেওয়া উচিত ব্যাঙ্কগুলির। যেমন, অতিমারিতে বিপুল ধাক্কা খেলেও এখন পরিষেবা ক্ষেত্র, বিশেষ করে হোটেল-রেস্তরাঁ ব্যবসা কার্যত তুঙ্গে। অথচ এই সব ক্ষেত্রে ঋণ বণ্টনে সক্রিয়তার অভাব রয়েছে। ঋণ বণ্টনে উপযুক্ত পরিকল্পনা তৈরির ব্যাপারে ব্যাঙ্কিং মহলের কাছে আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা।