অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ছবি: পিটিআই।
বিপুল বরাদ্দ আর সেই অর্থ খরচের লক্ষ্য স্রেফ ঘোষণাই থেকে গেল। প্রায় কোনও লক্ষ্যই পূরণ হল না বলে অভিযোগ তুললেন বিরোধীরা।
আজ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করার পরে কংগ্রেসের অভিযোগ, পরিকাঠামো হোক বা দলিত-আদিবাসী-সংখ্যালঘুদের কল্যাণ, শিক্ষা হোক বা স্বাস্থ্য— এ বারের বাজেটে সব ক্ষেত্রে একটি মিল। তা হল, গত বাজেটে অর্থমন্ত্রী এই সব গুরুত্বপূর্ণ খাতে যে পরিমাণ টাকা খরচের কথা ঘোষণা করেছিলেন, তার কোনওটিই বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে সেই অর্থে খরচ ছাঁটাই করেই এ দিন রাজকোষ ঘাটতি বা আয়-ব্যয়ের ফারাক কমানোর কৃতিত্ব দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী।
গত বাজেটে পরিকাঠামো-সহ মূলধনী খাতে ১০ লক্ষ কোটি টাকার বেশি ব্যয়-বরাদ্দের কথা ফলাও করে বলেছিল মোদী সরকার। বাজেটের সংশোধিত হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এর মধ্যে সাড়ে ন’লক্ষ কোটি টাকার মতো ব্যয় করতে পেরেছে তারা। কংগ্রেসের অভিযোগ, পরিকাঠামোর পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংখ্যালঘু, সমাজের দুর্বল সম্প্রদায়, তফসিলি জাতি, জনজাতির জন্য প্রকল্পেও একই দশা। চলতি অর্থবর্ষে এই সমস্ত খাতে যত টাকা খরচের ঘোষণা হয়েছিল, তা কোনও ক্ষেত্রেই পুরো হয়নি। যখন আর্থিক অসাম্য বাড়ছে, তখন গরিব, প্রান্তিক মানুষের হাতে টাকা তুলে দেওয়ার বদলে মোদী সরকার খরচ ছাঁটাই করেছে। তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের বক্তব্য, ‘‘এর পরেও আগামী জুলাইয়ে পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশের কথা বলে মোদী সরকার ভোটে জিতে যাওয়ার ভাব দেখাচ্ছে। আসলে মোদী সরকার বাস্তব থেকে দূরে বুদ্বুদের মধ্যে বাস করছে।’’
এমনিতেই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে গত পাঁচ বছরে শিক্ষা-স্বাস্থ্যে ধাপে ধাপে খরচ কমানোর অভিযোগ রয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরে প্রথম দু’বছরে মোদী সরকার মোট খরচের মাত্র ২.৪ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে খরচ করেছিল। শেষ তিন বছরে তা ২ শতাংশেরও নীচে নেমে এসেছে। একই ভাবে, শিক্ষা খাতেও প্রথম বছরে ৩.৩ শতাংশ খরচ হয়েছিল। এখন তা ২.৫ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে। আজ অন্তর্বর্তী বাজেটে অর্থমন্ত্রী আগামী আর্থিক বছরে শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতে খরচ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের অভিযোগ, ‘‘২০২৪-২৫ সালেও স্বাস্থ্য খাতে মোট খরচের মাত্র ১.৮ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ মোট খরচের মাত্র ২.৫ শতাংশ। এত কম খরচে সরকারের এত বড় বড় প্রতিশ্রুতির কোনওটাই পূরণ হবে না।’’
গত বছর বাজেট পেশ করার সময়ে চলতি অর্থবর্ষে রাজকোষ ঘাটতি জিডিপি-র ৫.৯ শতাংশে কমিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েছিলেন নির্মলা। সংশোধিত হিসেবে তা কমিয়ে ৫.৮ শতাংশ করেছেন তিনি। গত বাজেটে চলতি আর্থিক বছরে জিডিপি-র অনুমান ছিল প্রায় ৩০১ লক্ষ কোটি টাকা। এখন জিডিপি ২৯৬ লক্ষ কোটি টাকার মতো
হবে বলে অনুমান। অর্থমন্ত্রী বলছেন, ‘‘আনুমানিক জিডিপি কম হওয়া সত্ত্বেও রাজকোষ ঘাটতিতে উন্নতি হয়েছে।’’ নির্মলার দাবি, আর্থিক শৃঙ্খলার পথে হেঁটেই তিনি আগামী অর্থবর্ষে রাজকোষ ঘাটতি ৫.১ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য স্থির করেছেন। ২০২৫-২৬ সালে ঘাটতি ৪.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যেও অবিচল থাকছেন।
কংগ্রেস মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতের কটাক্ষ, ‘‘মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার সময়ে রাজকোষ ঘাটতি ছিল ৪.৮ শতাংশ। এখন তা ৫.৮ শতাংশ। গত দশ বছরে মোদী সরকার একবারও রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি। এখন কোন মুখে আর্থিক শৃঙ্খলার কথা বলছে? সরকার কেনই বা সমাজ কল্যাণ থেকে কৃষি পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে খরচ ছাঁটাই করছে?’’
কংগ্রেসের অভিযোগ, মোদী সরকার যে চারটি ভোটব্যাঙ্ককে পাখির চোখ করছে, তার মধ্যে কৃষক অন্যতম। অথচ সেই কৃষি ক্ষেত্রেও বরাদ্দের তুলনায় ৪ হাজার কোটি টাকা কম খরচ হয়েছে। সামাজিক উন্নয়নে ৫৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ করে বাস্তবে ৪৭ হাজার কোটি টাকাও খরচ হয়নি। বাজেট নথি বলছে, চলতি আর্থিক বছরে সংখ্যালঘু উন্নয়নে ৬১০ কোটি টাকা ব্যয়ের কথা ছিল। খরচ হয়েছে ৫৫৫ কোটি টাকা। দলিত উন্নয়নে ৯৪০০ কোটি টাকার বেশি খরচের কথা ছিল। এর মধ্যে ২,৬০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ই হয়নি। আদিবাসী উন্নয়নে প্রায় ৪,৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও, তার মধ্যে খরচ হয়নি প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।