কিন্তু নির্বাচনের পরে সরকারি ভাবে তা প্রকাশ হওয়ার পরে জানা যায়, বেকারত্বের পরিসংখ্যানের বিষয়টি সত্যি। তার পরে থেকে এনএসও-র সব রিপোর্টই স্পষ্ট হয়েছে কাজের বাজারের মলিন ছবি।
প্রতীকী ছবি।
অতিমারির আগে কিংবা পরে, কাজের বাজার নিয়ে মোদী সরকারকে ক্রমাগত বিঁধে আসছে বিরোধীরা। এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রক জানাল, গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে সারা দেশে গুরুত্বপূর্ণ ন’টি সংগঠিত শিল্প ক্ষেত্রে মোট ৩.১৪ কোটি মানুষ কাজ করেছেন। জুলাই-সেপ্টেম্বরে যা ছিল ৩.১০ কোটি। অর্থাৎ, সংগঠিত ক্ষেত্রে কাজের পরিধি বাড়ছে। যদিও কেন্দ্রের এই দাবিই তুলে দিয়েছে একাধিক প্রশ্ন। প্রত্যেক মাসে কিংবা বছরে যত মানুষ কাজের বাজারে পা রাখছেন, নতুন কাজের সংখ্যা তার ধারেপাশেও পৌঁছচ্ছে কি? তা ছাড়া ভারতের কর্মিবাহিনীর সিংহভাগই যুক্ত রয়েছেন অসংগঠিত ক্ষেত্রে। কেন্দ্রের সমীক্ষায় সেই ক্ষেত্রের ছবি স্পষ্ট নয়। বেসরকারি পরামর্শদাতা সংস্থা সিএমআইই-র রিপোর্টে কিন্তু ইঙ্গিত, ওই ক্ষেত্রের অবস্থা এখনও ভয়াবহ।
এ দিন কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব টুইট করে জানান, সংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের তৃতীয় রাউন্ডের সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলির সঙ্গে যুক্ত যে সমস্ত সংস্থায় ১০ জন বা তার বেশি মানুষ কাজ করেন, সেগুলিকে নিয়ে চালানো হয়েছিল সমীক্ষা। ষষ্ঠ আর্থিক সমীক্ষা অনুযায়ী, সেগুলিতেই সংগঠিত ক্ষেত্রের প্রায় ৮৫% মানুষ কাজ করেন। মন্ত্রীর দাবি, দেশে কাজের বাজার যে মাথা তুলছে তা সর্বশেষ রিপোর্টে স্পষ্ট।
মন্ত্রীর এই দাবি ঘিরেই তৈরি হয়েছে একাধিক ধন্দ। এর আগে একই সমীক্ষায় জানানো হয়েছে, গত এপ্রিল-জুনে এই ক্ষেত্রগুলিতে ৩.০৮ কোটি মানুষ যুক্ত ছিলেন। অর্থাৎ, পরের দু’টি ত্রৈমাসিকে তা বেড়ে যথাক্রমে হয়েছে ৩.১০ কোটি এবং ৩.১৪ কোটি। প্রশ্ন উঠছে, দেশের সাম্প্রতিক আর্থিক পরিস্থিতিতে কি কাজ তৈরির এই গতি যথেষ্ট? আবার ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষের আর্থিক সুমারিতে এই সমস্ত ক্ষেত্রে ২.৩৭ কোটি কাজের কথা বলা হয়েছিল। সেই হিসাবে আট বছরে কাজ বেড়েছে ৭৭ লক্ষ। কেন্দ্র কি এই ‘উন্নতিকে’ সন্তোষজনক মনে করছে?
কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার আগে বছরে দু’কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেই সময়ে এনডিএ-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, তিনি ক্ষমতায় আসার পরে কাজের বাজার উল্টে আরও ঝিমিয়ে পড়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে জাতীয় পরিসংখ্যান দফতরের (এনএসও) ফাঁস হয়ে যাওয়া রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছিল, ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে সারা দেশে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৬.১%। যা সাড়ে চার দশকের সর্বোচ্চ। সেই সময়ে মোদী সরকার ওই রিপোর্টটি অসম্পূর্ণ বলে দাবি করেছিল। কিন্তু নির্বাচনের পরে সরকারি ভাবে তা প্রকাশ হওয়ার পরে জানা যায়, বেকারত্বের পরিসংখ্যানের বিষয়টি সত্যি। তার পরে থেকে এনএসও-র সব রিপোর্টই স্পষ্ট হয়েছে কাজের বাজারের মলিন ছবি।