ফাইল চিত্র।
তেলের আমদানি খরচে জেরবার মোদী সরকারের তুরুপের তাস যখন বৈদ্যুতিক গাড়ি, ঠিক তখনই কয়েকটিতে আগুন লাগার ঘটনায় সংশয় দানা বাঁধল দেশ জুড়ে। প্রশ্ন উঠল, দুর্ঘটনায় পড়া গাড়িগুলির প্রযুক্তি, গুণমান এবং সেগুলিতে নজরদারির ব্যবস্থা নিয়েও। জল্পনা, তাড়াহুড়ো করে দেশে পুরোদস্তুর বৈদ্যুতিক গাড়ি আনতে গিয়ে নিরাপত্তায় ফাঁক থেকে যাচ্ছে না তো! পরিস্থিতি জটিল হতে পারে আঁচ করে সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী সুরক্ষার বিষয়টিতে জোর দিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন গাড়ি শিল্পকে। বলেছেন, এমন গাড়ির গুণগত মান বজায় রাখার মাপকাঠি নিয়ে জারি হবে নির্দেশিকা। যদিও শিল্পের দাবি, বিশ্ব মানের মাপকাঠি মেনেই গাড়ি তৈরি হয়। তবে মানছে, ব্যাটারি এবং গাড়ির সুরক্ষায় আরও জোরালো পরীক্ষা দরকার। বিশেষজ্ঞদের মতে, জরুরি ভারতের আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই ব্যাটারি-প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা।
বৈদ্যুতিক গাড়ির সংগঠন এসএমএইভি-র ডিরেক্টর জেনারেল সোহিন্দর গিলের দাবি, ব্যাটারিতে আগুন লাগার একাধিক কারণ থাকতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যাটারির সেল আনে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি। ক্ষতিগ্রস্ত সেল থেকেও আগুন লাগতে পারে। তাই ব্যাটারি বসানোর সময় সব কিছু খতিয়ে দেখতে হবে গাড়ি সংস্থাগুলিকেও। যেমন, একশো শতাংশ পরীক্ষা করে এবং সুরক্ষার কারণে অল্প চার্জ দিয়ে (৩০% মতো) কারখানায় পাঠানো হচ্ছে কিনা। কারখানায় আসার পথে সেটির ক্ষতি হয়েছে কিনা। ব্যাটারির ন্যূনতম কার্যক্ষমতা এবং তার ব্যবহার নিরাপদ কিনা। সোহিন্দরের বার্তা, গাড়ির দক্ষতা বাড়াতে গিয়ে গুণমানের সঙ্গে আপস করলে চলবে না সংস্থাগুলিকে। বাজারে গাড়ি আনার আগে পুরোদস্তুর পরীক্ষা জরুরি।
টিসিজি ক্রেস্ট-এর রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর সাসটেনেব্ল এনার্জির প্রধান বিজ্ঞানী অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ব্যাটারিতে বিপুল শক্তি সঞ্চিত থাকে। যেমন, টেসলার গাড়ির ক্ষেত্রে তা প্রায় ১০-১২টি ডিনামাইটের সমান। ব্যাটারি থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ ও বাড়তি তাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সঠিক সুরক্ষাবর্মে (ব্যাটারি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) জোর দিচ্ছেন তিনি।
অভীক জানান, ব্যাটারির ক্যাথোড তৈরির উপাদান নিকেল চড়া তাপমাত্রায় ইলেক্ট্রোলাইটের সঙ্গে বিক্রিয়া করে তাপ উৎপাদন করে। তাতে ক্যাথোড-অ্যানোডের মধ্যেকার পলিমারের বিভাজিকা কুঁকড়ে গিয়ে তারা পরস্পরের সংস্পর্শে এলেও তাপ তৈরি হয়। বাড়তি তাপেই আগুন লাগার আশঙ্কা। তাই গ্রীষ্ম প্রধান দেশের সঙ্গে মানানসই ব্যাটারি ও প্রযুক্তি নিয়ে আরও গবেষণা দরকার। এখন নিকেলের বদলে লিথিয়াম আয়রন ফসফেট দিয়েও ক্যাথোড তৈরি হচ্ছে। সেই ব্যাটারি তৈরির খরচ কম, দ্রুত চার্জ হয়, গাড়ির
সুরক্ষা বেশি, দাবি তাঁর।
তবে চার্জ দেওয়াও কিছু বিধি থাকে। সোহিন্দর ও অভীকের মতে, নিরাপদে ব্যাটারির ব্যবহার বোঝাতে হবে ক্রেতাকেও।