— প্রতীকী চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার পরিবর্তে রাজ্যের শস্য বিমার উপর আস্থা রেখে সার এবং কৃষি-প্রকল্পগুলিতে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি তুলল রাজ্য সরকার। শনিবার গোটা দেশের অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রাক বাজেট বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। নবান্ন সূত্রের দাবি, সেই বৈঠকে রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রের একাধিক পদক্ষেপ কার্যকর করার প্রস্তাব দিয়েছেন শিবরাজ। কেন্দ্রের বার্তা, খরচ কমিয়ে উৎপাদন বাড়াতে কেন্দ্রীয় পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করা হোক। উৎপাদক এবং ক্রেতার মধ্যে দামের বৈষম্য দূরীকরণে রাজ্যগুলির মতামতও চেয়েছে কেন্দ্র। রাজ্যের তরফে দাবি করা হয়েছে, গোবিন্দভোগ চালের রফতানিতে উৎসাহ দিতে পদক্ষেপ করুক কেন্দ্র।
সূত্র জানাচ্ছে, এ দিনের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা কার্যকর করা (পশ্চিমবঙ্গ তা করেনি), কৃষি সংক্রান্ত একাধিক গবেষণাগার স্থাপন-সহ বেশ কিছু পদক্ষেপের প্রস্তাব করেছিলেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী। রাজ্যের তরফে কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় শিবরাজকে জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ফসল বিমা যোজনার কার্যকারিতা কেন্দ্রের তুলনায় অনেক বেশি। কারণ, এখানে কৃষকদের বিমার প্রিমিয়াম দিতে হয় না। তা দেয় সরকার নিজে। তা ছাড়া স্যাটেলাইট ছবির মাধ্যমে যাচাই করে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক বিমার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়। বৈঠকের পরে শোভনদেব বলেন, “আমাদের কোনও কৃষককে আত্মহত্যা করতে হয় না। কৃষকবন্ধু, মৃত্যুকালীন আর্থিক সুবিধা, পেনশন, বিমা, সুলভে কৃষি যন্ত্রাংশ ইত্যাদির সুবিধা রাজ্য সরকার দিচ্ছে। এ রাজ্যের কৃষকদের আর্থিক পরিস্থিতি দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভাল।”
শিবরাজ রাজ্যগুলিকে জানিয়েছেন, আনাজ, ফল-সহ একাধিক উৎপাদনে কৃষকেরা খুব কম দাম পাচ্ছেন। কিন্তু সেগুলি যখন বড় শহরে পৌঁছচ্ছে, তখন তার দাম খুব চড়া হচ্ছে। এই ব্যবধান কী ভাবে কমানো যায়, তাতে প্রত্যেকের মতামত চেয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে তাঁর বার্তা, ক্ষুদ্র সেচ, উন্নত বীজ তৈরি, প্রযুক্তির ব্যবহার ইত্যাদির মাধ্যমে খরচ কমিয়ে উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে এগোচ্ছে কেন্দ্র। এ ব্যাপারে রাজ্যগুলিরও সহযোগিতা প্রয়োজন।
এই সূত্রেই শিবরাজকে শোভনদেব জানিয়েছেন, দেশের জনসংখ্যার ৯.৮% এ রাজ্যে রয়েছে। দেশের মোট কৃষিজমির ২.৯% রয়েছে এখানে। আবার ৯৬% কৃষকই ক্ষুদ্র কৃষক পর্যায়ে। চাল, পাট উৎপাদন এ রাজ্যে হয় সর্বোচ্চ। আলু উৎপাদনের নিরিখে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে এ রাজ্য। ভুট্টায় তা পঞ্চম। মাছ এবং আনাজ উৎপাদনও হয় উল্লেখযোগ্য হারে। সব মিলিয়ে রাজ্যের কৃষি বাজেট প্রায় ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকার। কিন্তু কৃষি সংক্রান্ত প্রকল্পগুলিতে কেন্দ্রের বরাদ্দ সেই বাজেটের মাত্র ৫%। এই অর্থে গবেষণাগার স্থাপন-সহ বাকি কাজ কী ভাবে সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শোভনদেব। তাঁর আরও অভিযোগ, ২০২১ সালে কেন্দ্রের থেকে ৫.৪ লক্ষ মেট্রিকটন সার পাওয়া যেত। কিন্তু এখন তা কমে দাঁডিয়েছে ১.২৭ লক্ষ মেট্রিকটনে। আবার এখানকার মাটির জন্য প্রয়োজনীয় ফসফেট এবং পটাশিয়ামের দাম বেড়েছে অনেক গুণ। শোভনদেব বলেন, “কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রীকে বলেছি, কৃষকের স্বার্থবিরোধী এমন কোনও পদক্ষেপ বাজেটে করবেন না। স্বামীনাথনের প্রস্তাব মেনে ন্যূনতম সহায়কমূল্য নির্ধারণ করতে হবে।”
নবান্নের অভিযোগ, এ রাজ্যে জৈব উপায়ে তৈরি গোবিন্দভোগ চালের চাহিদা বিশ্বজোড়া। কিন্তু তার রফতানিতে উৎসাহ দিচ্ছে না কেন্দ্র। বরং সেই উৎসাহ পাচ্ছে বাসমতি চাল। শোভনদেব জানিয়েছেন, গোবিন্দভোগকেও রফতানির জন্য প্রয়োজনীয় ‘কোড’ দিক কেন্দ্র। তা আয়বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।