বিবেক দেবরায়। — ফাইল চিত্র।
দেশে জিএসটি-র একটি হার থাকা উচিত বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেক দেবরায়। যদিও তা কোনও দিন হবে না বলেই ধারণা তাঁর। সোমবার এক অনুষ্ঠানে সমস্ত ধরনের করছাড় তোলার পক্ষেও সওয়াল করেছেন তিনি। তবে জানিয়েছেন, এগুলি পরিষদের সুপারিশ নয়। তার পরেই বিবেকের মন্তব্য ঘিরে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, যে কথা তিনি বলেছেন তাতে আমজনতার স্বার্থ মাথায় রাখা হয়নি।
এখন জিএসটির চারটি হার— ৫%, ১২%, ১৮% এবং ২৮%। কিছু পণ্যে করছাড় মেলে। সোনা, হিরের মতো দামি ধাতুতে তার হার আলাদা। এই ব্যবস্থা চালুর সময়ে যুক্তি ছিল, চাল-ডালের মতো খাদ্যপণ্য, ওষুধের মতো জরুরি পণ্য, গাড়ির মতো বিলাসবহুল এবং তামাক-মদের মতো ক্ষতিকর জিনিসে একই পরিমাণে কর বসানো বাঞ্ছনীয় নয়। যে কারণে আলাদা আলাদা হার ধার্য হয়। ক্ষতিকর পণ্যে বসে বাড়তি সেস-ও।
জিএসটি চালুর আগে ও পরে কর আদায় একই রাখতে তার হার ১৭% হওয়া উচিত বলে এর আগে জানিয়েছিল কেন্দ্রের আর্থিক বিষয়ক বিভাগ। দেবরায় বলেন, বর্তমানে জিএসটি-র গড় হার ১১.৫%। তা ছাড়া ভারতে জিডিপি-র মাত্র ১৫% কর আদায় হয় কেন্দ্র ও রাজ্যের হাত ধরে। অথচ পরিকাঠামোয় সরকারের খরচ অনেক বেশি। বিভিন্ন হার জটিলতাও বাড়ায়। বিবেকের দাবি, ‘‘জিএসটির ক্ষেত্রে তাই আমার মতে একটি হারই থাকা উচিত। ...কিন্তু তা কখনও হবে বলে মনে হয় না।’’ তবে কোনও সময়ে অভিন্ন হারের ব্যবস্থা চালু হলে তা প্রথমে আয়কর বা কোম্পানি করের মতো প্রত্যক্ষ করে হওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
সব ধরনের করছাড় তুলে দেওয়ার পক্ষেও সওয়াল করেছেন বিবেক। তাঁর দাবি, ভারতে সরকার জিডিপি-র ৫%-৫.৫% রাজস্ব হারায় শুধু বিভিন্ন করছাড়ের কারণে। এ দেশে কর ফাঁকি দেওয়া অপরাধ হলেও, ছাড়ের সুযোগ নিয়ে কম কর দেওয়া আইনের মধ্যেই পড়ে। যে কারণে কোনও ছাড়ই থাকা উচিত নয়। বহু ছোট সংস্থা কর্পোরেট করের বদলে ব্যক্তিগত আয় দেখিয়ে কর দেয়, এই যুক্তিতে ব্যক্তিগত ও সংস্থার করের হার আলাদা হওয়া উচিত নয় বলেও মন্তব্য তাঁর।
যদিও বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, দেশে ধনী শিল্পপতি এবং আমজনতাকে একই হারে কর দিলে আদতে সমস্যায় পড়বেন দ্বিতীয় ভাগের আওতায় থাকা সাধারণ মানুষই। তা ছাড়া করে ছাড় তুলে নিলে সামান্য আয় থেকে যেটুকু টাকা বাঁচানোর সুযোগ তাঁরা পান, সেটাও থাকবে না। ইতিমধ্যেই আয়করের বিকল্প ব্যবস্থা এনেছে কেন্দ্র। যেখানে অধিকাংশ করছাড়ই তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা পুরো বন্ধ হলে মানুষের দুর্দশা বাড়বে বলেই মত তাঁদের।