প্রতীকী ছবি।
লাফিয়ে বাড়তে থাকা সংক্রমণ এবং দেশব্যাপী মৃত্যু মিছিলের মধ্যে সাঙ্গ হল পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন পর্ব। বাংলায় ক্ষমতায় ফিরছে তৃণমূল কংগ্রেস। কেরল, তামিলনাড়ুতেও প্রতিষ্ঠা হয়নি ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার। বরং করোনার মতো জাতীয় সমস্যার তুলনায় নির্বাচনকে, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখলের লড়াইকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ায় সমালোচনায় বিদ্ধ বিজেপি-র নেতা-মন্ত্রীরা। যাঁরা দীর্ঘ দিন সিংহভাগ সময় কাটিয়েছেন ভোট প্রচারে। তবে এই নির্বাচনী ফলে শেয়ার বাজার হয়তো খুশি হবে না কেন্দ্রের শাসক দলের দুর্বলতা ধরা পড়ায়। আজ বাজারে এর তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়তে পারে। যদিও সূচকের গতিপথ তৈরি করবে চার লক্ষের দিকে ছুটে চলা সংক্রমণ ও রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যু রুখতে কেন্দ্রের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ক্ষমতা। প্রতিষেধক প্রয়োগে তাদের এগোনোর গতি। আর্থিক কর্মকাণ্ডের কত কম ক্ষতি হচ্ছে তার হিসেব।
জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে বহু সংস্থার আর্থিক ফল ভাল হওয়ায় গত সোম থেকে বৃহস্পতিবার সেনসেক্স উঠেছিল ১৮৮৮ পয়েন্ট। কিন্তু শুক্রবারই পড়ে যায় ৯৮৪। কারণ, লগ্নিকারীদের আতঙ্ক। আংশিক লকডাউন শুরু হয়েছে অনেক রাজ্যেই। তার মেয়াদও বাড়ছে সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায়। ধাক্কা খাচ্ছে চাহিদা, উৎপাদন, বিপণন, বণ্টন, আর্থিক লেনদেন-সহ অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সবক’টি শর্ত। আশঙ্কা, এতে বহু সংস্থাই আর্থিক ভাবে দুর্বল হবে। ফলে সমস্যা হবে ঋণে শোধে। যার প্রভাবে বাড়তে পারে ব্যাঙ্কগুলির অনাদায়ি ঋণ।
তার উপরে হোটেল, পর্যটন এবং বিমান শিল্পের ক্ষত গভীর হচ্ছে। বেকারত্ব আরও বাড়ার আশঙ্কা চেপে বসছে। বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা কমাতে শুরু করেছে বৃদ্ধির পূর্বাভাস। শুক্রবারের ধস সেই কারণেই। কারণ, দেশ যে হারে এগোবে বলে আশা ছিল, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ আঁচ করতে না-পারায় এবং তাকে রুখতে ব্যর্থ হওয়ায় তা হয়তো মিটবে না। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, সংক্রমণ এখনও শিখরে ওঠেনি। অর্থাৎ আরও গভীর ব্যথা অপেক্ষা করছে। সেটা হলে, বাজারেও তার দাগ লাগবে। বিশেষত সার্বিক লকডাউনের আশঙ্কাও যেহেতু উড়িয়ে দেওয়া
যাচ্ছে না।
এরই মধ্যে অর্থনীতির জন্য ভাল খবর, এপ্রিলে ১,৪১,৩৮৪ কোটি টাকার রেকর্ড জিএসটি আদায়। দেশ স্বাভাবিক বর্ষা (৯৮%) পাবে বলে আবহাওয়া দফতরের ঘোষণা। আর মার্চে মূল আটটি পরিকাঠামো শিল্পে ৬.৮% উৎপাদন বৃদ্ধি। যা ৩২ মাসে সর্বাধিক। যদিও এই হিসেব সত্যিই স্বস্তির কি না, সেই সন্দেহ থাকছেই। তবে মার্চ ত্রৈমাসিকে বহু সংস্থা ভাল মুনাফা করেছে। যেমন, হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের লাভ ৪১% বেড়ে হয়েছে ২১৪৩ কোটি টাকা। রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ়ের দ্বিগুণেরও বেশি (১২৯%) বেড়ে ছুঁয়েছে ১৪,৯৯৫ কোটি টাকা। লোকসান কাটিয়ে অ্যক্সিস ব্যাঙ্ক নিট লাভ করেছে ২৯৬০ কোটি টাকা।
(মতামত ব্যক্তিগত)