দেশে করোনা সংক্রমণ এক দিনে এক লক্ষ পার করেছে। এই খবরে সপ্তাহের প্রথম লেনদেনের দিনেই কাঁপুনি ধরল শেয়ার বাজারে। যার জেরে দিনের মাঝে এক সময়ে সেনসেক্স নেমে গেল ১৪৪৯ পয়েন্ট। পরে অবশ্য কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়ে ৪৯,১৫৯.৩২ অঙ্কে দিন শেষ করে সূচকটি। তবে সেটাও বৃহস্পতিবারের চেয়ে ৮৭০.৫১ পয়েন্ট কম। সব মিলিয়ে এক দিনেই বিএসই-র লগ্নিকারীরা হারিয়েছেন ২.১৬ লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ। একই ভাবে নিফ্টিও ২২৯.৫৫ পয়েন্ট পড়ে থেমেছে ১৪,৬৩৭.৮০ অঙ্কে। ডলারের সাপেক্ষে আজ পড়েছে টাকার দামও। ১ ডলার ১৮ পয়সা বেড়ে হয়েছে ৭৩.৩০ টাকা।
বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল আর্থিক কর্মকাণ্ড। ছন্দে ফিরছিল ব্যবসা বাণিজ্য। কিন্তু তার মধ্যেই দ্বিতীয় ঢেউয়ের আছড়ে পড়া এবং আগের তুলনায় আরও দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকা সংক্রমণ অর্থনীতির চাঙ্গা হওয়ার প্রক্রিয়াটাকেই অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। জিয়োজিৎ ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের গবেষণা বিভাগের প্রধান বিনোদ নায়ারের দাবি, সংক্রমণ যে বাড়তে পারে তার ইঙ্গিত ছিলই, কিন্তু বাস্তবে তা আশঙ্কার থেকেও খারাপ চেহারা নিয়েছে। যা অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর গতিপথকে ফের শ্লথ করে দিতে পারে। বানচাল হতে পারে লগ্নিকারীর অল্প সময়ের মধ্যে দুর্দিন কাটিয়ে ওঠার আশা।
লগ্নিকারীদের উদ্বেগ বাড়িয়ে সোমবারই মার্চে উৎপাদন শিল্পে বৃদ্ধির হার কমার ইঙ্গিত দিয়েছে আইএইচএস মার্কিটের সমীক্ষা। এ বার ফের চলাফেরা, কাজ-কারবারে কড়াকড়ি (মহারাষ্ট্র, কর্নাটকের মতো কিছু রাজ্যে) বা লকডাউন অর্থনীতিকে আরও কতটা ক্ষতবিক্ষত করবে, সেই প্রশ্ন ঘুরেছে দেশ জুড়ে। বেকারত্ব কতটা মাথাচাড়া দিতে পারে, সেই হিসেব শুরু হয়েছে। কড়াকড়ির জেরে বৃদ্ধির হারে ধাক্কা লাগার আশঙ্কা করছে নমুরা, কেয়ার রেটিংসের মতো উপদেষ্টা ও মূল্যায়ন সংস্থাগুলিও। ভয়, ফের বিক্রিবাটা কমলে চলতি অর্থবর্ষের এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে সংস্থাগুলি হিসেবের খাতাতেও তার প্রভাব পড়তে পারে। যে কারণে এ দিন বহু লগ্নিকারী শেয়ার বেচে মুনাফা তুলে নিয়েছেন, দাবি বিশেষজ্ঞদের।
তার উপরে বুধবার এই অর্থবর্ষের প্রথম ঋণনীতি ঘোষণা রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের। শুরু হয়েছে বৈঠক। ইঙ্গিত, মূল্যবৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ বারও সুদের হার এক থাকতে পারে। কিন্তু তার বাইরেও কিছু থাকবে কি না, সেই চিন্তাতেও সতর্ক লগ্নিকারীদের একাংশ।