১৮৭৬ সালে জয়পুর ভ্রমণে আসেন প্রিন্স অফ ওয়েলস। তাঁকে জানাতে জানাতে মহারাজা রাম সিং শহরের সব বাড়িঘর গোলাপি রঙে রাঙিয়ে তোলেন। পরবর্তীকালে প্রিন্স অব ওয়েলসই হন ভারতের অধীশ্বর, সম্রাট সপ্তম এডওয়ার্ড। আর স্বাধীন ভারতে রাজস্থানের রাজধানী বলে পরিচিতি পায় জয়পুর।
রাজপুতানার সংস্কৃতিতে গোলাপি রং আতিথেয়তার প্রতীক। সেই থেকেই শহরটাকে এই রঙে সাজিয়ে তোলার ভাবনা। এর নাম তাই পিঙ্ক সিটি বা গোলাপি শহর।
শহর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রাসাদ, শিল্পকর্ম, উদ্যান, দুর্গ, মন্দির, প্রশস্ত রাজপথ জয়পুরকে শুধু রাজস্থানের নয়, সমগ্র ভারতের এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করেছে। এখানকার স্থাপত্যে হিন্দু,মুঘল এবং পশ্চিমী ঘরানার মিশ্রণে এ শহর বিশ্বের এক অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
আরাবল্লী পাহাড়ের কোলে তিন দিকে পাহাড়ে ঘেরা কেল্লা-প্রাসাদ-বাগান সমন্বিত এক অপূর্ব নগরী। তাকে গড়ে তোলেন মহারাজ দ্বিতীয় সওয়াই জয়সিংহ। মহারাজ জয়সিংহ খুব অল্প বয়সে অম্বরের রাজা হন। ঔরঙ্গজেব তখন ভারত সম্রাট । যুবক জয়সিংহ এক বার সাক্ষাৎ করেন তাঁর সঙ্গে।
ঔরঙ্গজেব তাঁর ব্যবহার, বুদ্ধিমত্তায় খুশি হয়ে উপাধি দেন 'সোয়াই'। যার অর্থ হল, এক চতুর্থাংশের বেশি। সেই থেকে মহারাজার নতুন নাম হয় 'সোয়াই জয়সিংহ'। জয়সিংহ ছিলেন বিচক্ষণ, বুদ্ধিমান এবং বীর। এ ছাড়া সেই যুগে তিনি ছিলেন ভারতবর্ষের অন্যতম এক জন শ্রেষ্ঠ জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং স্থপতি।
এ হেন মহারাজা জয় সিংহের রাজধানী ছিল অম্বর পাহাড়ে। কিন্তু রাজ্য পরিচালনার সুবিধার জন্য তিনি সমতলে গড়ে তোলেন এক নতুন রাজধানী। রাজার নামেই নতুন রাজধানীর নাম হয় জয়পুর। এই নগরের স্থপতি ছিলেন এক বাঙালি। নাম, বিদ্যাধর ভট্টাচার্য।
ভাবলেও অবাক হতে হয় যে এক তরুণ বাঙালি আধুনিক জয়পুর শহরের নির্মাতা ছিলেন। শহর পরিকল্পনা করার সময়ে তিনি সমস্ত শহরকে ন'টি সমান আয়তক্ষেত্রে ভাগ করে নেন। যার মধ্যে প্রশস্ত রাজপথ, দোকান, বাজার, ঘর-বাড়ি, মন্দির, প্রাসাদ, সব কিছুই সুন্দর পরিকল্পিতভাবে স্থাপন করেন। হিন্দু স্থাপত্য বিদ্যা অনুসারেই গড়ে উঠেছিল ভারতের প্রথম পরিকল্পিত শহর।
সপ্তদশ শতকে জয়পুরের শাসক ছিলেন মহারাজা প্রথম জয় সিংহ। তাঁর প্রপৌত্র দ্বিতীয় জয় সিংহ জয়পুর শাসন করেছিলেন ১৬৯৯ থেকে ১৭৪৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। তাঁর আমলেই জয়পুর এক নতুন রূপ লাভ করে। এর পর থেকে জয়পুর রাজবংশের শাসকদের নামের আগে ‘সোয়াই’ হয়ে দাঁড়ায় চিরাচরিত উপাধি।
এর পরে রাজা হন রাজা রাম সিংহ। তাঁর আমলে গড়ে ওঠে এক নতুন জয়পুর শহর। অর্থাৎ আজকের জয়পুর, গোলাপি জয়পুর।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, মহারাজ রামসিংহের কলকাতা খুব পছন্দের শহর ছিল যেকারণে তিনি জয়পুরকে দ্বিতীয় কলকাতা বানাতে চেয়েছিলেন। কলকাতার ইডেন গার্ডেনের অনুকরণে তিনি জয়পুরে রামনিবাস গার্ডেন নির্মাণ করেন।
এছাড়া জয়পুর শহরের কেন্দ্রস্থলে মুঘল ও রাজপুত শিল্পকলার আশ্চর্য সংমিশ্রণে গড়ে তোলেন সিটি প্যালেস। এ ছাড়া জয়পুর বিখ্যাত যন্তর-মন্তর, হাওয়া মহল, রামবাগ প্রাসাদর জন্য। যা দেখতে প্রতি বছর হাজার হাজার বিদেশি জয়পুরে এ শহরে ভিড় জমান।
কী ভাবে যাবেন: হাওড়া থেকে সরাসরি ট্রেন রয়েছে। কাছের বিমানবন্দর জয়পুর। দিল্লি থেকে জয়পুর সড়ক পথে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার দূরত্ব। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।