Changpa Valley

আকাশগঙ্গার নীচে চাংপাদের ঘরে আজও পাওয়া যায় ইতিহাসের গন্ধ

ঠান্ডা মরুভূমি, এমারাল্ডে হৃদের নীল জল, পাহাড়ের গায়ে পাথর আর মাটির তৈরি বাড়ি— লাদাখের ছবি বলতে এ সবই চেনা। কিন্তু এর বাইরেও আছে অন্য এক লাদাখ। যেখানে এখনও পর্যটকদের আনাগোনা কম, কম বলিউডের প্রভাব, নেটদুনিয়ায় কম সে লাদাখের ছবি। এমনই এক লাদাখের নাম চাংথাং। চাংপা যাযাবরবের নিজেদের মাটি, তাঁদের পায়ের ছাপ-ওয়ালা গাড়ির টায়ারের ছাপ-বিহীন তিব্বতী ভূমিরূপ।

Advertisement
আনন্দ উৎসব ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:৪৭
Share:
০১ ১০

গত ১৮-১৯ বছরে লাদাখ বদলে গিয়েছে অনেকটা। অনেকেরই হয়তো বছর ২০ আগে লেহ শহরে ঢোকার অভিজ্ঞতা এখনও মনে আছে। পাথর আর মাটির বাড়িই তখন বেশির ভাগ। হাইওয়ের দু’পাশে তখন কোথায় এত সেনাছাউনি! লোকজন বলতে, বেশির ভাগই স্থানীয়। এথনিক লাদাখি পোশাকের মানুষ খুঁজে পেতে এখন আলোকচিত্রীরা ঘুরে ঘুরে হদ্দ হয়ে যান। তখন চার পাশের বেশির ভাগ মানুষই স্থানীয় পোশাকে। পর্যটকদের ভিড় নেই, গাড়ি নেই, দোকান-রেস্তোরাঁ কিছু নেই।

০২ ১০

এখন লেহ জমজমাট। খুঁজলে তিন তারা হোটেল পর্যন্ত পাওয়া যেতে পারে। বিদেশি পর্যটকদের জন্য প্রত্যেক বাঁকে কন্টিনেন্টাল রেস্তোরাঁ। পথে নানা মাপের, নানা দামের গাড়ির ভিড়। সঙ্গে বাইক। দূরে পাহাড়ের গায়ে নামগিয়াল সিমো। নামগিয়াল রাজাদের বংশের মন্দির। মাটি আর পাথরের তৈরি মঠ।

Advertisement
০৩ ১০

এ সবের বাইরে তিব্বতী লাদাখ দেখতে চান? তাহলে বেরিয়ে পড়তে হবে লেহ ছাড়িয়ে। লেহ থেকে যে পথগুলি সো মোরিরি নামের হৃদের দিকে গিয়েছে, তার একটি চাংথাং উপত্যকার মধ্যে দিয়ে। এ পথেই বাস চাংপা যাযাবরদের। সকালে রওনা হয়ে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যাবে চাংপাদের এলাকায় পৌঁছোতে। স্থানীয় লাতো গ্রামে তাঁদের বাস। সেখান থেকেই ভেঁড়া নিয়ে চড়াতে বেরিয়ে পড়েন তাঁরা। ঘুরে বেড়ান চাংথাং উপত্যকায়। প্রথম দর্শনেই তাঁদের দেখে বিস্ময় জাগে। তিব্বতী পোশাক, ভবঘুরে জীবন, মুখে একগাল নির্ভেজাল হাসি— সব মিলিয়ে চাংপাদের ঘরে অভ্যর্থনার অভাব হয় না।

০৪ ১০

চাংপা দলের আড্ডায় এসে পড়লে, সকলেরই থাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে চাংপাদের তাঁবুর মতোই তাঁবুতে। দিন তিনেক কাটিয়ে ফেলতে পারেন এখানে। খাবার বলতে, সঙ্গে আনা কিছু জিনিস খেতে পারেন। পাশাপাশি স্থানীয় খাবারও পাওয়া যাবে।

০৫ ১০

কেন এমন মরুভূমির মাঝে, জনহীন প্রান্তরে জীবনে এখনও নিজেদের আটকে রেখেছেন চাংপারা? এক সময় লাদাখ থেকে তিব্বতের লাসা যাওয়ার পথ ছিল। হয়তো খুঁজে দেখলে এখনও সে পথের অস্তিত্ব পাওয়া সম্ভব। সে পথেই বর্তমান চাংপাদের পূর্বজরা যাতায়াত করতেন। ঘুরে বেড়াতেন ভেঁড়া নিয়ে। তেমনই এক গোষ্ঠী থেকে যান এই চাংথাং এলাকায়। তার পরে সিন্ধুনদে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। সীমান্তে বসেছে কাঁটাতার। দু’পাশে জমা হয়েছেন দু’দেশের সেনা। ইচ্ছে থাকলেও এ দেশের চাংপারা আর ঘুরতে যেতেও পারেননি পূর্বজদের পথগুলি ধরে।

০৬ ১০

ইচ্ছে। ইচ্ছেকে বড় গুরুত্ব দেন এই জনগোষ্ঠীর মানুষগুলি। ইচ্ছে হয়নি বলেই, কোনও দিন মরুভূমি, জনহীনপ্রান্ত ছেড়ে শহরে হাজির হননি। এখনও হিন্দি তো দুরঅস্ত, লাদাখি ভাষাও জানেন না তাঁরা। কথা বলেন চাংসখাট ভাষায়। তিব্বতি ভাষারই এক ডায়ালেক্ট এই চাংসখাট। তবে শুধু চাংপা নন, এখানকার বাসিন্দা ফালপারাও।

০৭ ১০

অনেক চাংপাই এখন আর পশুপালন করেন না। তাঁরা লাতো গ্রামের পাকা বাসিন্দা। চাষবাস করেন। সেখানেই গবাদি পশু পোষেন। তাঁরা নিজেদের চাংপা বলে ডাকেন। আর যাঁরা এখনও এই চাংথাংয়ের বালিপথে ঘুরে বেড়ান, তাঁবু ফেলেন, আবার তাঁবু উঠিয়ে চলে যান অন্যত্র— তাঁরা নিজেদের বলেন ফালপা। ভেঁড়া পালনই তাঁদের প্রধান জীবিকা। তবে সেই ভেঁড়ার মাংস তাঁরা খান না। ভেঁড়া পালন করেন পশম সংগ্রহের জন্য। এই যে এত দামি পশমিনা, তা সংগ্রহ করেন এই ফালপারাই। তাঁদের ভেঁড়ার গলার লোমই হাতঘুরে চলে যায় শহরে, যেখানে এখন পর্যটকদের ভিড়।

০৮ ১০

এই এলাকার অন্যতম আকর্ষণীয় খাবার হল চিজ। চমরী গাইয়ের দুধ থেকে বানানো এই চিজ। শুধু চাংপারাই, থুড়ি ফালপারাই নাকি বানান এই চিজ। রাতের হাড়কাঁপানো শীতের মধ্যে এই চিজ গা গরমও করে দিতে পারে কিছুটা।

০৯ ১০

রাতে রেবো-র মধ্যে ঢোকার পালা। চমরী গাইয়ের পশমে বানানো তাঁবুর স্থানীয় নাম রেবো। ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে একবার আকাশের দিকে তাকাতে পারেন। শেষ কবে এমন আকাশ দেখেছেন, মনে করতে পারবেন না। ভাগ্য ভাল থাকলে স্পষ্ট দেখতে পাবেন আকাশগঙ্গা। আর তা দেখেই বুঝতে পারবেন, কেন আকাশের নীচে, ঠান্ডা বালির উপর তাঁবু ফেলে আজও জীবন কাটিয়ে চলেছেন চাংপারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement