কাশ্মীরের অপর নাম যদি ভূস্বর্গ হয়ে থাকে, তাহলে হিমাচল প্রদেশকে স্বর্গভূমি বলা যেতে পারে! এই পাহাড়ি রাজ্যে কুলু-মানালির বাইরেও কত যে অপরূপ জায়গা আছে, তার ঠিকঠিকানা নেই। একেকটা যেন প্রাকৃতিক রত্ন!
কোনওটা অপরিচিত ট্যুরিস্ট স্পট, আবার কোনওটা অদেখা গ্রাম। বেশি পর্যটক হয়তো যান না, কিন্তু কেউ গেলে তিনি যে ঠকবেন না, বাজি ধরে বলা যায়! তাই আসুন না, হিমাচল প্রদেশের প্রাকৃতিক রত্নভান্ডারের খোঁজে যাই।
১. নাহান: হিমাচলের ছোট্ট শৈলশহর। চণ্ডীগড় থেকে বেশি দূর নয়। গাড়িতে ঘন্টা তিনেকের দূরত্ব। এক কালে সিরমুর এস্টেটের সদর ছিল। ট্রেকিং, হাইকিং যাঁদের প্রিয়, তাঁদের জন্য দুর্দান্ত পছন্দের জায়গা। নির্জন, নিরিবিলি, সামনেই পাহাড়-চুড়ো, পাহাড়ের কোলে ঝরণা, মন্দির- সব মিলিয়ে যাকে বলে 'পিকচার পোস্টকার্ড' দৃশ্য! পাহাড়ি শহরের সর্পিল জঙ্গুলে পথ পেরিয়ে ঘুরে আসতে পারেন বাধোলিয়া মন্দির। নীচে নামার সময় পাবেন জালাল নদী।
এতটাই নির্জন চারপাশ, দিনের বেলায় নিশ্চিন্তে স্নান সারতে পারেন নদীতে। রাতে তারা ভরা আকাশ, ঝিঁঝিঁর নিরবিচ্ছিন্ন ডাক ঠিক যেন অলৌকিক পরিবেশের সৃষ্টি করে! ভোর হলে বেরিয়ে পড়ুন রেনুকাজি মন্দিরের উদ্দেশ্যে। পুরাণ অনুসারে ভগবান পরশুরামের মা রেনুকাজি। মন্দিরের পাশেই বিরাট হ্রদ। পরশুরাম তাল। চারপাশ এতটাই অবিশ্বাস্য রকমের নির্জন যে, গাছের পাতা পড়লেও শব্দ পাবেন!
২. দোভি: কুলু থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে এক অপরূপ নৈসর্গিক পাহাড়ি গ্রাম। বেড়াতে গিয়ে সম্পূর্ণ নিরালা পরিবেশ যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য আদর্শ শৈলস্থান এটা। উচ্ছ্বল বিপাশা নদী, ধৌলধার এবং পিরপাঞ্জাল পর্বতশ্রেণীর চরাচরব্যাপি ক্যানভাস অতুলনীয় নয়নাভিরাম। প্যারাগ্লাইডিং, খরস্রোতা বিপাশা বা বিয়াস-এ র রাফটিঙ, বৌদ্ধ কলোনি, মনাস্টারি এখানকার বৈশিষ্ট্য। অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করলে হোটেলে না থেকে সুইস ক্যাম্পেও থাকতে পারেন।
৩. রেনুকাজি: প্রকৃতির কোলে শ্বাসরুদ্ধকর স্থাপত্য। রেনুকা হ্রদে মন্দিরের সৌন্দর্য প্রতিচ্ছবি প্রতিফলিত হয়ে এক ম্যাজিক পরিবেশের সৃষ্টি করে!
৪. কাসোর্গ ভ্যালি: সারি সারি আপেল বাগান, পাইন-দেবদারু গাছের জঙ্গল, শীতল আবহাওয়া, দূষণমুক্ত বাতাসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার সুখ এখানকার বৈশিষ্ট্য। এই উপত্যকার মতো এত বিস্তৃত আপেলের বাগান এ দেশের আর কোথাও নেই।
৫. কল্পা - হিমাচল প্রদেশের বৃহত্তম জেলা এটাই। তবে এর আসল বৈশিষ্ট্য অপরূপ কিন্নর কৈলাস পর্বতের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক দৃশ্য দেখার আদর্শ ট্যুরিস্ট স্পট।
৬. গদাগুশাইনি - এক কথায় প্রকৃতির লীলাভূমি। ছোট্ট ছোট্ট কুঁড়েঘরের সারি, স্বচ্ছ জল, নির্মল আবহাওয়া- সব মিলেমিশে যেন এক স্বর্গীয় স্থান! এরকম জায়গায় নিজের সঙ্গে একা থাকতেই ইচ্ছে করে বেশি।
৭. শোজা - হিমাচলের আরও একটি অতুলনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা কম পরিচিত স্থান। এখানকার পাহাড়ি দৃশ্য শ্বাসরুদ্ধকর, এতটাই অভূতপূর্ব!
৮. সাহো: প্রকৃত অর্থে প্রকৃতিকে ভালবাসলে আপনাকে এখানে আসতেই হবে। অনবদ্য এক পাহাড়ি গ্রাম। এই ছোট উপত্যকা 'নেচার থেরাপি'র উপযুক্ত গন্তব্যস্থল।
৯. নারকান্দা: সিমলা থেকে গাড়িতে মাত্র দু'ঘন্টার পথ। জনবিহীন শৈলশহর। এখানকার কটেজ বা হোম স্টে-তে উঠে ট্রেকিং আর হাইকিংয়ে বেড়িয়ে পড়ার রোমাঞ্চই আলাদা! এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।