শহর, কিন্তু নিরিবিলি। শহুরে সমস্ত সুযোগসুবিধে রয়েছে, অথচ পাহাড়, উপত্যকা, নদী, হ্রদ, জলপ্রপাত, হিমবাহ মিলেমিশে ভরপুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। সঙ্গে গভীর ভক্তিভাব জাগ্রত করে অতুলনীয় সব মন্দির, দেবত্বস্থানগুলি।
এমনকি দু-দু’টো আন্তর্জাতিক সীমানা ভাগ করছে এরা। উত্তরে চিন আর পূর্বে নেপালের সঙ্গে। গাড়োয়াল ও কুমায়ুন পর্বতমালার পাদদেশে এরকম বহু বহু শৈল শহর পাবেন শুধু একটা রাজ্যেই।
বলতে গেলে পাশাপাশি, একটার পর একটা, যেন পড়শি! এক নজরে উত্তরাখন্ডের শৈলশহর গুলির খোঁজ এই প্রতিবেদনে।
নৈনিতাল: অনেক হ্রদ থাকায় নৈনিতালকে স্থানীয় লোকজনেরা বলেন, ভারতের ‘লেক জিলা’। তার মধ্যে সব চেয়ে জনপ্রিয় আর দর্শনীয় নৈনি। চোখের আকৃতির প্রাকৃতিক তাজা হ্রদ। নয়-নয় করে সাতটা পাহাড় চূড়ায় ঘেরা নৈনি হ্রদ। এই শৈল শহরের আরেকটি মনোমুগ্ধকর জায়গা নয়না দেবী শক্তিপীঠ। ভীষণ পবিত্র হিসেবে সর্বজনবিদিত।
উত্তরাখণ্ডের একমাত্র চিড়িয়াখানা নৈনিতালেই আছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২১০০ মিটার উঁচুতে। চিড়িয়াখানায় অন্যতম সেরা আকর্ষণ সাইবেরিয়ার বাঘ আর স্নো লেপার্ড। বিমানে গেলে নিকটতম বিমানবন্দর পন্তনগর, ৫৫ কিলোমিটার। ট্রেনে গেলে নিকটতম স্টেশন কাঠগোদাম, ২৩ কিলোমিটার।
রানিক্ষেত: আলমোড়া জেলায় অবস্থিত এই ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের শৈলশহরের স্থানীয় নাম রানির দেশ। আপেল বাগান, পাইন গাছের সারি, ভ্যালু ড্যাম, গল্ফ গ্রাউন্ড, ঝুলা দেবী রামমন্দির- এ সব এখানকার দ্রষ্টব্যস্থান। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কুমায়ুন রেজিমেন্টের সদর দফতর রানিক্ষেতে। নৈনিতাল থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে রানিক্ষেত। সড়কপথে যাওয়া ভাল।
হরিদ্বার: এই শৈল শহরের নামের অর্থ, প্রভূর প্রবেশদ্বার। হরিদ্বার কুম্ভ মেলার জন্য পৃথিবী বিখ্যাত। হর কি পাউরি ঘাটে সন্ধেবেলায় গঙ্গা আরতি দেখার স্বাদ এক অনির্বচনীয় অভিজ্ঞতা। শোনা যায়, রাজা বিক্রমাদিত্য ভাইয়ের স্মরণে এই ঘাট নির্মাণ করিয়েছিলেন। ব্রহ্মকুন্ডে অত্যাশ্চর্য আরতি এক ঐশ্বরিক দৃশ্য। এছাড়াও ঘুরে দেখার মতো চিল্লা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, রাজাজি জাতীয় উদ্যান। সরাসরি ট্রেন বা বিমান যোগাযোগ না থাকায় হরিদ্বার সড়কপথে যাওয়া ভাল।
দেরাদুন: উত্তরাখণ্ডের রাজধানী শহর। অথচ নিরিবিলি, শান্ত, সমাধিস্থ, সঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মিলেমিশে এমন এক পবিত্র আবহ যে, মানুষ মাত্র এখানে মানসিক ভাবে শান্তি অনুভব করে। আবার পাশাপাশি ঘুরে দেখার মতো জায়গা প্রচুর। ‘শারধা’, যার অর্থ হাজার গুণ বসন্ততার জলপ্রপাতে সালফারের মতো দুষ্প্রাপ্য আকরিক সব সময় মেলে।
সহস্ত্রধারার কাছে রোপওয়ে চড়ার আনন্দ, রবার'স কেভ, মালসিডিয়া পার্ক, রাজাজি ন্যাশনাল পার্ক, তপোবন মন্দির— গুহা, জলপ্রপাত, দেবত্বস্থান, সব মনকে ভালো করে দেয়। মাইন্ড্রোলিং মঠ অন্যতম সেরা বৌদ্ধ নিদর্শন, এশিয়ার মধ্যেই সবচেয়ে উঁচু স্তুপ। দেরাদুন জশন স্টেশন ভারতের প্রায় সব বড় শহরের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। নিকটতম বিমানবন্দর ২০ কিলোমিটার দূরের জলিগ্রান্ট।
মুসৌরি: মনসুর নামে এক ধরনের গুল্ম, তার থেকে এই শৈলশহরের নাম মুসৌরি। গাড়োয়াল পর্বতমালার পাদদেশে ব্রিটিশদের সাজানো পর্যটককেন্দ্র। ৭০০০ ফুট উঁচু। বরাবরের মতো এখনও দেশের অন্যতম সেরা হনিমুন তথা মধুচন্দ্রিমার জায়গা।
মুসৌরিতে কেম্পটি ফলস, লালটিব্বা, ক্যামেলস ব্যাক রোড, কোম্পানি বাগান, শহরের সর্বোচ্চ পয়েন্ট- গান হিল, দ্য মল থেকে কেবল কার ভ্রমণ, মল রোড থেকে বিখ্যাত দুন উপত্যকার অতুলনীয় দৃশ্য একবার দেখলে জীবনে ভোলার নয়। দেরাদুন থেকে সড়ক পথে পৌঁছনো সবচেয়ে আরামদায়ক।
ঋষিকেশ: একই সঙ্গে আধ্যাত্মিক বিশ্রাম ও স্বাস্থ্য ফেরানোর শৈলশহর এবং রোমাঞ্চকর দুঃসাহসিক খেলার জায়গা ঋষিকেশ। রিভার রাফ্টিং, বাঞ্জিজাম্পিং, রক ক্লাইম্বিংয়ের জন্য ভারত বিখ্যাত ঋষিকেশ। আবার যোগ ও ধ্যানের বিশ্ব রাজধানী বলা হয় ঋষিকেশকে। যমজ সেতু রাম ও লক্ষণ সেতু গঙ্গার ৭৫০ ফুট উপর থেকে ঝুলছে! পরমার্থ নিকেতনে গঙ্গা আরতি এক অপার্থিব সৌন্দর্য। হরিদ্বার ও দেরাদুন থেকে সড়কপথে যেতে হয়। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।