সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে কে না জানে! কিন্তু আমাদের দেশের কোন জায়গায় রোজদিন সর্ব প্রথম সূর্যালোকের দেখা পায়, জানেন কি?
উত্তরটি অরুণাচল প্রদেশ। দেশের সর্ব প্রথম সূর্যালোকের দেখা পায়। সেই জন্য এই রাজ্যের নাম অরুণাচল প্রদেশ।
সুইৎজারল্যান্ডের সৌন্দর্যকেও হার মানানো ছবির মতো উপত্যকা, বরফাবৃত পাহাড় চুড়ো, ভারতের সবচেয়ে বেশি ঘনত্ব সমৃদ্ধ ঘন অরণ্য।
এঁকেবেঁকে বয়ে চলা নদী, ১৯৬২ সালের চিন-ভারত যুদ্ধের সাক্ষী থাকা ভয়ঙ্কর-সুন্দর গিরিপথ, অবর্ণনীয় সুন্দর বৌদ্ধমঠ, আকর্ষণীয় উপজাতীয় সংস্কৃতি অরুণাচলকে পর্যটনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য করে তুলেছে। এই অরুণাচলের দশটি অসামান্য জায়গার সন্ধান এই প্রতিবেদনে।
তাওয়াং বৌদ্ধমঠ: অরুণাচলের তাওয়াং শহরেই আছে ভারতের বৃহত্তম বৌদ্ধমঠ। এক কথায় অপূর্ব, অবর্ণনীয়। দশ হাজার ফুট উঁচুতে সপ্তদশ শতকে নির্মিত এই মঠ তার সোনালি চুড়ো, অত্যন্ত আকর্ষণীয় কারুকলা, এক বিশাল-সুউচ্চ বৌদ্ধমূর্তির জন্য পৃথিবীময় প্রসিদ্ধ। মঠের প্রাচীন পুঁথির সংগ্রহের টানে দূর-দূরান্ত থেকে ইতিহাসবিদ ও বৌদ্ধ পন্ডিতরা এই মঠে আসেন। এ ছাড়াও তাওয়াং ভ্যালি’র সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর। সবুজ গালিচা ভরা মাঠে বসে দূরের পাহাড় চুড়োর দিকে তাকিয়ে সময় কী ভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যায়, বোঝাও যায় না।
জিরো উপত্যকা: অনেক ভূ-পর্যটকের মতেও জিরো উপত্যকার সামনে সুইজারল্যান্ডের আলপস্ পর্বতের উপত্যকাগুলোও নাকি নগণ্য!। এখানকার নিস্তব্ধ উপত্যকা, রঙিন গ্রামে ততোধিক রঙিন 'আপাতানি' উপজাতীয় সম্প্রদায়ের মানুষ, তাল-এ ‘ওয়াইল্ডলাইফ স্যাঙ্কচুয়ারি’ এবং প্রকৃতির মাঝে হাইকিং পর্যটকদের ব্যাপক আকৃষ্ট করে। সেপ্টেম্বর মাসে এখানে এলে 'জিরো অ্যানুয়াল মিউজিক ফেস্টিভ্যাল'-এর আনন্দও উপভোগ করতে পারবেন।
নামদাফা ন্যাশনাল পার্ক: বন্য জীবন দেখতে উৎসাহীরা এই ন্যাশনাল পার্কে এলে স্বর্গীয় আনন্দ উপভোগ করবেন। পূর্ব হিমালয়ের মিশমি পাহাড়ের কোলে এই ন্যাশনাল পার্কে স্নো লেপার্ড, ক্লাউডেড লেপার্ড, বাঘ সহ দেখতে পাবেন আরও অনেক কিছুই।
বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও অবিশ্বাস্য সুন্দর নানান প্রজাপতি দেখতে পাবেন। নামদাফা ন্যাশনাল পার্কের অন্য দুই আকর্ষণ বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিড এবং অপূর্ব সুন্দর অজানা কয়েকটা ঝর্ণা।
বমডিলা: ৮৫৩০ ফুট উঁচু এই পাহাড়ি শহরটা থেকে কামেং উপত্যকার অপূর্ব সুন্দর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। বমডিলাতেও একটি আকর্ষণীয় বৌদ্ধমঠ আছে। এই শহরে আপেল বাগান দেখতে পাওয়া যায়। এই বাগানের আপেল হিমাচল প্রদেশ বা কাশ্মীরের আপেলের থেকে প্রকৃতি ও স্বাদে আলাদা। এই শহর ১৯৬২ সালে চিনাদের ভারত আক্রমণের সাক্ষী। সেলা গিরিপথের প্রবেশদ্বারও বমডিলা।
সেলা গিরিপথ: ১৩৭০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত সেলা গিরিপথ বা ‘পাস্’ ভারতীয় সেনাবাহিনীর পরিকল্পনামাফিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। সেলা লেক, যার অন্য নাম প্যারাডাইস লেক, এই গিরিপথের অন্যতম আকর্ষণ। এই লেক শীতকালে সম্পূর্ণ বরফে জমে যায়। মনে করা হয়, জোসেলা গিরিপথের শুধু আশেপাশেই মোট ১০১টি লেক আছে। সেলা গিরিপথ হিন্দু ও বৌদ্ধ, দুই ধর্মের মানুষের কাজেই অত্যন্ত পবিত্র স্থান। প্রাচীন ও মধ্যযুগে এই গিরিপথ দিয়েই অসম ও তিব্বতের মধ্যে ব্যবসাবাণিজ্য চলত।
বুম লা পাস: ১৯৬২র ভারত-চিন যুদ্ধের থেকে এই গিরিপথের ঐতিহাসিক তাৎপর্যে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। চিন থেকে পালিয়ে মহামহিম দালাই লামা ভারতে আশ্রয় নিতে বুম লা পাস-এর পথই নেন। এই গিরিপথের তিনটে অন্যতম সেরা দ্রষ্টব্যস্থান স্যাংস্টার, পাথরের স্তূপ স্মৃতিস্তম্ভ ও ইন্দো-চিন পার্সোনেল মিটিং পয়েন্ট।
আলো: কমলালেবুর বাগান, সবুজে সবুজ উপত্যকা, পাহাড়ের শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য ‘আলো’কে অরুণাচলের অত্যাশ্চর্য দ্রষ্টব্যস্থান করে তুলেছে! পাখি দেখার উৎসাহীদের কাছে এই পর্যটন স্থান যেন স্বর্গ! এখানকার ঈগল নেস্ট ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি অবশ্য দ্রষ্টব্যস্থান।
ইটানগর: অরুণাচলের রাজধানীই শুধু নয়, ইটানগর এ রাজ্যের সব চেয়ে সুন্দর শহর। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত একটি অতি উন্নত শহর ইটানগর। শহর জোড়া সাংস্কৃতিক স্থাপত্যের নিদর্শন দেখবার মতো।
মেচুকা উপত্যকা: ভারতবর্ষের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় উৎসবগুলোর মধ্যে একটি ‘লোসার উৎসব’ এই মেচুকা উপত্যকায় পালিত হয়। রাজ্যের পশ্চিম সিয়াং জেলায় অবস্থিত এই উপত্যকা সারা বছর ভারতীয় সেনাবাহিনী দ্বারা প্রবল পাহারায় থাকে। আবার এ দেশের সব চেয়ে পরিচ্ছন্ন স্থানেরও অন্যতম মেচুকা উপত্যকা।
দিরাং: অরুণাচলের পশ্চিম কামেং জেলার দিয়াং এক ছোট্ট গ্রাম। ভূস্বর্গের চেয়ে কম নয় এতটুকু। আবহাওয়া সারা বছর মনোরম। বিভিন্ন উপজাতির বসবাস দিরাঙে। যারা মহান সাংস্কৃতিক সম্প্রীতির বন্ধনের বাস করে। দিরাঙে ইয়াক্ রিসার্চ সেন্টার, সাংতি উপত্যকা এবং দিরাং জং অন্যতম দেখার স্থান। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।