দেউলঘাটার কালো দুর্গা
পুরুলিয়া মানেই ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি। লাল মাটির রাস্তা এবং ছৌ নাচে মেতে ওঠে মন। কিন্তু আপনি কি জানেন এই পুরুলিয়াতেই আছে ভারতের সব থেকে পুরনো দুর্গা মূর্তি। পুরুলিয়া শহর থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে কংসাবতী নদীর তীরে দেউলঘাটা অঞ্চল। জঙ্গলে ঘেরা মনোরম এই দেউলঘাটায় রয়েছে প্রায় দু’হাজার বছরের পুরনো দুর্গা মন্দির। পোড়া মাটির এই মন্দিরেই অধিষ্ঠান রয়েছে দেবী দুর্গা।
বৌদ্ধ মন্দিরের আদলে তৈরি এই মন্দির। ইতিহাস বলছে, পাল বংশের আমলে তৈরি হয়েছিল প্রাচীন মন্দির। মন্দিরের গায়ে রয়েছে অসাধারণ পাথরের ভাস্কর্য। মন্দিরের দরজা ত্রিভুজাকৃতি। এই সব কিছু যেন জানান দেয় গৌরবময় ইতিহাসের।
দেউলঘাটা মন্দির
এখানে প্রতিষ্ঠিত মাতৃ মুর্তি সাধারণ দেবী দুর্গার রূপ নয়। চমক রয়েছে দেবীর বিগ্রহতেও। দেবীর বর্ণ কালো। সাধারণত মায়ের বাঁ পা মহিষের উপর থাকলেও এখানে তা নয়। বরং দেবীর ডান পা রয়েছে মহিষের উপরে। দেবী মূর্তির মাথার উপর রয়েছে চক্র স্তম্ভ। পায়ের তলায় আছে পরীদের মূর্তি। মায়ের দু’পাশে রয়েছে অষ্ট মাতৃকা রূপ। শোনা যায়, আগে নাকি মন্দির থাকলেও মাতৃ মূর্তি ছিল গাছের তলায়। সেখানেই হত পুজো। তারপর রোদ জলে মূর্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল বলে বিগ্রহ স্থাপন করা হয় মন্দিরের ভিতরে।
এখনও নিয়ম মেনে করা হয় নিত্য পুজো। পুজোর চার দিন থাকে বিশেষ ব্যবস্থা। প্রথা মেনেই মহালয়ার দিন থেকে চণ্ডী পাঠ দিয়ে শুরু হয় পুজোর। এখনও হয় বলি। সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীতে হয় ছাগ বলি। এই পুজো দেখতে ভিড় জমান বহু মানুষ। শুধু দেশ নয় ভারতের সব থেকে প্রাচীন দুর্গা পুজো দেখতে ভিনদেশ থেকেও ছুটে আসে মানুষ।
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।