বাংলায় কালী পুজো শুরু হয় সম্ভবত পঞ্চদশ শতকে। নবদ্বীপের প্রসিদ্ধ তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ বাংলায় প্রথম কালী পুজোর প্রচলন করেন। নানা অলৌকিক শক্তির অধিকারী ছিলেন তিনি। তা-ও মনে একটা ক্ষোভ ছিল।
শোনা যায়, তিনি স্বয়ং মায়ের নির্দেশ পেয়েছিলেন, বাংলায় কালী পুজো প্রচলন করার। বাংলায় মায়ের কোন রূপের পুজো হবে, তা নিয়েও নাকি স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন মা ভবতারিণী।
রাত্রি শেষে প্রথম যে রমণীর মুখ প্রথম দেখতে পাবেন, তারই অবয়বে বাংলায় কালী পুজোর প্রচলন করতে হবে। স্বপ্নে এমনই ছিল মায়ের আদেশ।
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে কৃষ্ণানন্দ গঙ্গা স্নানে গেলেন। ফেরার পথে দেখলেন, এক গোয়ালিনী তার ডান পা তুলে হাতের মুঠোয় গোবর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
কৃষ্ণানন্দকে দেখে লজ্জায় তিনি জিভ বার করে ফেললেন। সেই রূপকে কল্পনা করেই তৈরি হল মাতৃমুর্তি। সে দিক থেকে দেখতে গেলে, তন্ত্র মতেই প্রথম কালী পুজোর শুরু।
এ-ও জানা যায়, কৃষ্ণানন্দের আগেও বাংলায় কালী সাধক ছিলেন। তাঁরা মায়ের পুজো করতেন। তবে সেই পুজোর নিয়ম ছিল আলাদা। তামার টাটে কালী যন্ত্র এঁকে তাঁর পুজো করা হত। পরে অষ্টাদশ শতকে নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র মহা সমারোহে কালী পুজো শুরু করেন।
তাঁর পৌত্র ঈশানচন্দ্রের উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে কালী পুজো। এই হল মা ভবতারিণীর পুজোর ইতিহাস। তন্ত্র মতে কালীপুজোর মূল উপকরণ ‘পঞ্চ ম’। এই নৈবেদ্যই কালী পুজোর প্রধান অঙ্গ। এই পঞ্চমকার একটি তান্ত্রিক শব্দ। তন্ত্র সাধনার ক্ষেত্রেই এই ‘পঞ্চ ম’-এর ব্যবহার হয়ে থাকে।
তবে ‘পঞ্চ ম’-এর সাধনা নিয়ে হরেক মতভেদ রয়েছে। একটি মত অনুযায়ী, ‘পঞ্চ ম’ হল মদ্য (মদ),মাংস (মাংস),মৎস্য (মাছ),মুদ্রা (অঙ্গভঙ্গী), মৈথুন (যৌনকর্ম)। মায়ের চরণে এই পঞ্চমকার নিবেদনেই সিদ্ধিলাভ করতে পারেন সাধকেরা।
তবে সব কালী সাধক এই মতের অনুসারী নন। ‘বাম-হস্ত পথ’ বা বামাচারী তান্ত্রিকরাই এই পদ্ধতি অনুসরণ করেন। ‘দক্ষিণ-হস্ত পথ’ বা (দক্ষিণাচারী) তান্ত্রিকরা এই মতের বিরোধিতা করেন।
তামসিক (পশ্বাচার), রাজসিক (বীরাচার) বা দিব্যাচার বা সাত্ত্বিক সাধনার অংশ হিসাবে এই পাঁচটি উপাদানের বিভিন্ন অর্থ রয়েছে।