মহালয়ার পুণ্য লগ্নে অসুর বিনাশের জন্য ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের মিলিত তেজে দেবীর আগমন। চণ্ডীতে দেবী দুর্গাকে দশপ্রহরণধারিণী আখ্যা দেওয়া হয়েছে। দশ প্রহরণধারিণী অর্থাৎ দশ হাতে দশ রকম অস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে অসুর বা অপশক্তির বিনাশ করেন দুর্গা। জন্মলগ্নেই অসুররাজ মহিষাসুরের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য দেবতারা দেবীকে সাজিয়ে তোলেন নিজ নিজ অস্ত্র দিয়ে। জানেন কি, কীসের প্রতীক এই এক একটি অস্ত্র?
শঙ্খ : শঙ্খ বা শাঁখ বাজিয়েই যুদ্ধের সূচনা হত। শাঁখ দেবীর বাম হাতে থাকে। পুরাণ মতে বরুণদেব দেবীকে এই অস্ত্র প্রদান করেন। বলা হয়, এই শাঁখ বাজিয়েই দেবী মহিষাসুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন।
চক্র: দেবীর ডান হাতে সবার উপরে থাকে চক্র। ত্রিদেবের এক দেব, বিষ্ণু এই চক্র প্রদান করেন। এই চক্র সুদর্শন চক্র নামেও পরিচিত। যাকে ব্রহ্মাণ্ডের প্রতীক ও বলা হয়।
কালদণ্ড: ধর্মরাজ যম দেবী মহামায়াকে এই গদা বা কালদণ্ড প্রদান করেন। এই অস্ত্র মহিষাসুরকে বধ করার জন্য সম্মোহিত শক্তি হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
পদ্ম: পদ্ম আলোর প্রতীক। দেবী দুর্গাকে পদ্ম ও অক্ষমালা দেন সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা। দেবী দুর্গাকেও শ্রী গণেশের মতো শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্ম ধারীও বলা হয়।
তির-ধনুক: পুরাণ মতে দেবীর বাম হাতে থাকে তির-ধনুক। পবনদেব দুর্গাকে এই অস্ত্র প্রদান করেন। কাল্পনিক লক্ষ্য ভেদের অস্ত্র রূপে তা সজ্জিত থাকে দেবীর হাতে।
বজ্র: দেবরাজ ইন্দ্রের অস্ত্র হল বজ্র। দৃঢ়তা ও সংহতির প্রতীক। সংহতি পুর্ণ সমাজ জীবন সবার কাম্য। তাই দেবীর হাতে শোভা পায় এই অস্ত্র।
সর্প: নাগরাজ প্রদান করেন সর্প। দেবী দুর্গার বাম হাতে নীচের দিকে থাকে সাপ বা নাগপাশ। নাগপাশ বিশুদ্ধ চেতনার প্রতীক।
কুড়ুল: পুরাণ মতে বিশ্বকর্মা প্রদান করেন কুড়ুল। যা রক্ষক ও ধংসাত্মক শক্তির প্রতীক রূপে গণ্য করা হয়।
ত্রিশূল: দেবাদিদেব মহাদেব প্রদান করেন ত্রিশূল। তাকেই দেবীর প্রধান অস্ত্র হিসাবে ধরা হয়। ত্রিকাল দণ্ড রূপে এই অস্ত্র সমগ্র বিশ্বে খ্যাত। এর তিনটি গুণ হল সত্ত্ব বা দেব গুণ, রজঃ বা জীব গুণ, তমঃ বা রাক্ষস গুণ। সনাতনী রূপ অনুযায়ী দেবী দুর্গা দু’হাতে ত্রিশূল দিয়ে বধ করেন মহিষাসুরকে।
দশ অস্ত্রে সজ্জিত দেবীকে কুবের দেন অলঙ্কার। সূর্য প্রদান করেন কাঞ্চনবর্ণ। হিমালয় দেন বাহন সিংহ। দেবতাদের প্রদান করা মিলিত শক্তি ও অপার তেজে দেবী দুর্গা হয়ে ওঠেন শক্তিশালী ও অসীম শক্তির অধিকারী। তার পর মহিষাসুরকে বধ করে তিনিই হন মহিষাসুরমর্দিনী।