সরকারি নির্দেশ মেনে অতিমারি আবহেও হচ্ছে দুর্গাপুজো। জাঁকজমক পূর্ণ না হলেও বিধি অনুযায়ী চলে জেলার বড় পুজো গুলোর সঙ্গে সাজছে পাড়ার ছোট পুজো গুলোও। তবে বেশির ভাগ পুজো কমিটির সদস্যরাই এবার পুজোর খরচ জোটাতে অঙ্ক কষেও বাজেটের টাকা জোগাড় করতে পারছেন না। বিজ্ঞাপন না থাকায় পুজোর চাঁদা আদায়ের দিকেই জোর দিচ্ছেন উদ্যোক্তারা। যদিও শাসক দলের জেলা সভাপতি আবুতাহের খান বলেন, ‘‘এই অতিমারির সময়ে মানুষের আয় তলানিতে ঠেকেছে। পুজো উদ্যোক্তাদের অনুরোধ করব যাতে অন্তত পক্ষে এবছর মানুষের কাছ থেকে জুলুম বাজি করে চাঁদা আদায় করা না হয়।’’
করোনা ঠেকাতে দীর্ঘ ছ’মাস লকডাউন ছিল। তার জেরে বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন। দোকানপাট বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। আনলক পাঁচ পর্যায়ে বহু ক্ষেত্রে ছাড় মেলায় সবে মাত্র ভিড় জমছে বাজারে। অন্য বছর গুলোতে লাভের মুখ দেখার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের প্রচারের স্বার্থে বিজ্ঞাপন দিতেন বড়, মেজ এমনকি ছোট প্রতিষ্ঠান গুলিও। কিন্তু ব্যবসায় মন্দাচলার কারণে বিজ্ঞাপনে বিরতি টেনেছেন তাঁরা। বহরমপুরের বিষ্টুপুরের এক পুজো কমিটির সম্পাদক সুশোভন চৌধুরী বলেন, ‘‘বিজ্ঞাপন না থাকায় পুজোর বাজেট বাড়াতে সাহস পাইনি। ক্লাবের প্রতিবেশীদের চাঁদাই ভরসা এবছর।’’
আরও পড়ুন: লকডাউনের একঘেয়েমি কাটাতে প্রতিমা গড়ল অর্ঘ্যদীপ, পুজোয় সামিল হবেন পড়শিরা
গত বছর জেলার পুজো কমিটি গুলিকে সরকার ২৫হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছিল। এবছর পরিস্থিতি বিচারকরে সেই অনুদান দ্বিগুণ বাড়িয়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা করা হয়েছে। তবু জেলার পুজো উদ্যোক্তাদের অনেকেই পুজোর চাঁদা আদায়ে এলাকা বাসীদের চাপ দিচ্ছেন বলেন অভিযোগ। শহরের বড় পুজো আয়োজকদের একজন বলেন, ‘‘যতই নমো নমো করে পুজো করা হোক না কেন, তারও তো একটা খরচ আছে। একে বিজ্ঞাপন নেই, তার উপরে পুজোর চাঁদাও যদি মানুষ না দিতে চান, তাহলে পুজোর মণ্ডপ থেকে আলোকসজ্জার খরচ জোটাবে কে?’’ জেলার এক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী নবরতন গুলগুলিয়া বলেন, ‘‘বিগত বছর গুলোর সঙ্গে এবছর কোনও তুলনাই চলে না। কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিজ্ঞাপন দেব কোথা থেকে!’’
বিজ্ঞাপন নেই। নেই চাঁদার জোগান। বারোয়ারি পুজো কি থাকবে তার চেনা ছন্দে?
বহরমপুরের সুতির মাঠ এলাকায় চাকরি জীবীর সংখ্যা বেশি বলে দাবি ওই এলাকার এক পুজো কমিটির সম্পাদক আনন্দমোহন বিশ্বাসের। করোনায় চাকরি জীবীদের উপর কোনও প্রভাব পড়েনি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এবছর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ভোগবিতরণ, বসে খাওয়ানো হচ্ছেনা। তাই গত বারের মতো পরিবার পিছু হাজার টাকা চাঁদাই ধার্য করা হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: পঙ্ক্তি ভোজন আবার হবে আসছে বছর
খাটিকতলা বালক সংঘের পুজো কমিটির সম্পাদক রাম প্রসাদ রায় বলেন, ‘‘আমাদের পাড়ায় সাকুল্যে ১৭৫জন লোকের বাস। গত বছর ৫০বছর পূর্তিতে পাড়ার লোকজনকে দেড়হাজার চাঁদা দিতে বলা হয়েছিল। এবছর তা কমিয়ে হাজার টাকা করা হয়েছে। তাঁরা তা না দিলে পুজো করব কোথা থেকে।’’ সেখানেই আপত্তি শহরবাসীর। বহরমপুর শহরের এক বাসিন্দা প্রীতম ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সামর্থ্য অনুযায়ী চাঁদা দিলে তা নিতে অনেকেই আপত্তি করেন।’’ বহরমপুরের বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘করোনা ও লকডাউনের জেরে অর্থনৈতিক ভাবে মানুষ বিপর্যস্ত। আশা করব চাঁদা আদায়ের জন্য জোর জুলুম হবেনা।’’