মা দুর্গার ভুবনবিজয়ী রূপ, তাঁর দশ হাতে দশ অস্ত্র, ত্রিনয়নে অভয় জ্যোতি, কিন্তু মা দুর্গার এই বিশেষ রূপের নেপথ্যে রয়েছে বিশেষ শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা।
পুরাণ মতে, মহিষাসুরকে বধ করতে সকল দেবতা ধ্যানমগ্ন হয়ে দেবীর আরাধনা করেছিলেন। তাই, সকল দেবতার শক্তি সঞ্চিত হয়েই দেবী দুর্গার সৃষ্টি।
দেবী দুর্গার তিন চোখ ও দশ হাত মূলত রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। হিন্দু শাস্ত্রের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে দেবীর এই রূপের বিভিন্ন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
বলা হয়, দেবীর বাম চোখ বাসনা বা চন্দ্রের প্রতীক। ডান চোখ কর্ম বা সূর্যের প্রতীক। আর কপালের নেত্র জ্ঞান বা অগ্নির প্রতীক।
দেবী দুর্গার দশ হাতেরও ব্যখ্যা রয়েছে। রূপক অর্থে দেবীর দশ হাতে রয়েছে দশটি অস্ত্র। এই সব অস্ত্রেরই রয়েছে নানা প্রতীকী অর্থ। যেমন-
চক্র: চক্র দিয়েছিলেন শ্রী বিষ্ণু। চক্র দৃঢ়তা এবং সংহতির প্রতীক। দেবী দুর্গার হাতে চক্র থাকার অর্থ সমস্ত সৃষ্টির কেন্দ্রে অবস্থান করছেন দেবী।
ত্রিশূল: দেবাদিদেব মহাদেব দুর্গাকে তার ত্রিশূল দান করেছিলেন। এই ত্রিশূলের তিনটি ফলা মানুষের তিন গুণ, সত্ত্ব, তমঃ, রজঃ -এর প্রতীক। সত্ত্ব অর্থাৎ ধর্ম জ্ঞান, রজঃ অর্থাৎ অহঙ্কার এবং তমঃ অর্থাৎ অন্ধকার। এই তিনটি গুণের সমন্বয়ে সমস্ত মানুষের সৃষ্টি। এই তিন গুণের প্রতীকী রূপই হলো দেবাদিদেব মহাদেবের ত্রিশূলের তিনটি ফলা।
শঙ্খ: দেবতা বরুণ দিয়েছিলেন শঙ্খ, যা অহংকারের প্রতীক। এই শঙ্খের ধ্বনিতে স্বর্গ, মর্ত্য ও নরক জুড়ে থাকা সমস্ত অশুভ শক্তি ভীত ও দুর্বল হয়ে পড়ে।
বজ্র: দেবতা ইন্দ্র দিয়েছিলেন বজ্র, সংকল্পের দৃঢ়তা ও সংহতির প্রতীক। এই দুই গুণের মাধ্যমেই নিজের লক্ষ্যকে অর্জন করার দৃঢ়তা তৈরি হয়।
সাপ অথবা নাগপাশ: দেবীর হাতে থাকে সাপ। পুরাণ মতে, এই সাপ শুদ্ধ চেতনার প্রতীক।
গদা: যমরাজ দিয়েছিলেন গদা, যা ‘কালদণ্ড’ নামেও পরিচিত। এই অস্ত্র আনুগত্য, ভালোবাসা এবং ভক্তির প্রতীক।
তীর-ধনুক: দেবতা পবন দুর্গাকে তীর-ধনুক দান করেন। এই অস্ত্র ইতিবাচক শক্তির প্রতীক।
তলোয়ার: ভগবান গণেশ মা দুর্গাকে তলোয়ার দেন। এই তলোয়ার বুদ্ধির প্রতীক, যা দিয়ে সমস্ত বৈষম্য ও অশুভকে বিনাশ করা যায়।
ঘণ্টা: দেবরাজ ইন্দ্রের বাহন ঐরাবত মা দুর্গাকে দান করেছিলেন ঘণ্টা। এর ধ্বনি অশুভ শক্তির বিনাশের ইঙ্গিত দেয়।
পদ্ম: ব্রহ্মা দেবী দুর্গাকে পদ্ম ফুল দান করেন। এ পদ্ম জ্ঞান ও আধ্যাত্মিক চেতনার উত্থানের প্রতীক। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।