উষ্ণতার পারদ কমেনি এক ফোঁটাও। এ দিকে ত্বক ও চুলে শীতের টান রীতিমতো ভাবিয়ে তোলার মতো। অন্য দিকে মাথার উপর উৎসবের মরসুমের দ্বিতীয় দফাও।
এই সময় ত্বক ও চুলের প্রয়োজন বিশেষ যত্ন, বাড়তি নজর! শর্মিলা সিংহ ফ্লোরার কাছে রয়েছে এর দারুণ সব টিপস, এক ঝলকে চোখ বুলিয়ে নিন এই প্রতিবেদনে।
শর্মিলা জানালেন, “শীতের হাওয়ায় এর মধ্যেই মুখের ও সারা শরীরের ত্বকে রুক্ষ টান বোঝা যাচ্ছে। এই সময় সকলের ত্বক ও চুলই এখন শুষ্কতার ঝামেলায় ভুগছে। অনেকেই যারা তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যায় ভোগেন, তাঁরা এই মুহুর্তে ব্রন ইত্যাদি সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। তাই সেই সব থেকে বাঁচতে বাড়িতে নিয়মিত অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী গাছের জেল, ভিটামিন সি যুক্ত ক্রিম ইত্যাদি দিয়ে ত্বক ও চুলের চর্চার প্রয়োজন। "
ত্বক ভালো রাখার আসল চাবিকাঠি হল, আপনি কী রকম খাবার খাচ্ছেন বা সারাদিনে কত খানি জল খাচ্ছেন তার উপরেই বেশিরভাগটাই নির্ভর করে। ফ্লোরার মতে, “পুজোর দিনগুলিতে অনেক বাইরের তেল-মশলা যুক্ত খাবার খাওয়া হয়েছে, যা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ত্বকের জেল্লাকে কমিয়ে দেয়। তাই আপাতত সকলের আবার একটু বুঝে শুনে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার দিকে মন দিন, সঙ্গে প্রচুর জল খান, তবেই না ত্বক উজ্জ্বল দেখাবে!”
হেমন্তের প্রথম হাওয়া বইতে না বইতে বাজারে মিলছে নানা রকমের মরসুমি ফল। যেমন, আপেল, শশা, বেদানা, মুসাম্বি লেবু ইত্যাদি। এই ফলগুলি শুধু খেলেই যে ত্বকের জন্য ভাল তাই নয়, আবার আপনি ভাল করে বেটে বা কুরিয়ে প্যাকের মতো মুখেও লাগাতে পারেন। তাতেই আপনার ত্বক হবে উৎসবের আমেজের প্রথম সারির জেল্লাদার।
ধরুন, মনে হল পার্লারে আসবেন, তাহলে ফ্লোরার উপদেশ, “যাঁদের ত্বক ব্রনপ্রবণ, তাঁরা ব্রন প্রতিরোধী ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিতে পারেন মুখের জন্য। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য হাইড্রা ফেসিয়াল এবং শুষ্ক ত্বকের জন্য ভিটামিন সি যুক্ত ফেসিয়ালই আদর্শ।"
এছাড়াও, শীতের এই শুষ্কতা থেকে বাচতে, ভিটামিন সি যুক্ত ক্রিম, নাইট ক্রিম, গোল্ড ফেস ওয়াশ ইত্যাদি ব্যবহার করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। তাঁর কথায় জানা গেল, এই মুহূর্তে ভাল ক্রিম যুক্ত ফেশিয়ালই একমাত্র শুষ্কতা থেকে বাঁচাতে পারে রুক্ষ ত্বককে, তাই গোল্ড, প্ল্যাটিনাম, ভিটামিন যুক্ত ফেসিয়াল বেছে নিন।
আবার উৎসবের আমেজে সান্সক্রিনকে ভুলে গেলে চলবে না! যাঁদের তৈলাক্ত ত্বক তাঁরা বেছে নিন ৩০ এসপিএফ ও সাধারণ থেকে শুষ্ক ত্বকের জন্য দরকারী ৪০ এসপিএফ যুক্ত ভাল সান্সক্রিন, সুরক্ষিত থাকবে আপনার ত্বক।
পুজোর আগে অনেকেই ফেসিয়াল করিয়েছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ? শ্রীমতী ফ্লোরার মতে, “দেখতে দেখতে পুজোর আগের ফেশিয়ালের অনেক দিনই হয়ে গিয়েছে, পুজো থেকে লক্ষ্মীপুজো অবধি সময় ধরে টানা যে মেকআপ ও বাইরের ধুলোবালির মুখোমুখি হয়েছেন সবাই, তাতে ফেশিয়ালের সেই প্রভাব প্রায় ধুয়ে মুছে গিয়েছে। "
তাই ত্বককে সবাই বাঁচাতে ও জেল্লা ফিরিয়ে আনতে এই বার প্রয়োজন হাইড্রেটিং ফেসিয়াল। ত্বকের এই শুষ্কতাঁর জন্য যে ধরনের খেয়াল রাখা প্রয়োজন অফিস যাতায়াত শুরু হয়ে যাবার দরুণ অনেকেই সেই নজর দিতে পারচেন না। তাঁরা উৎসবের মরশুমে ঝলমল করতে চাইলে অবশ্যই নিজেদের জন্য পার্লারে গিয়ে ট্রিটমেন্ট করুন।ফ্লোরা জানাচ্ছেন, “অফিসের নিত্য যাত্রীদের জন্য ঘরোয়া উপায়ের উপর ভরসা না করে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া দরকার”।
আবার যারা বাড়িতে থাকেন, তাঁরা নিজেদের ত্বকের জন্য বানিয়ে নিতে পারেন মুসুর ডাল বেটে তার স্ক্রাব, এতেই সপ্তাহান্তের ধুলোবালি উঠে গিয়ে জেল্লা ফিরে আসবে আপনার ত্বকে। তবে তাঁর বারবার সতর্কতা, “ভাল ক্রিম ব্যবহার করতে ভুললে চলবে না কোনওভাবেই!”আর শুধু বাড়িতে কিনে প্রসাধনী মাখার ছক? নৈব নৈব চ!
ফ্লোরা বললেন, “যেমন শরীরের অসুস্থতার জন্য প্রয়োজন চিকিৎসকের মতামত, তেমনি ত্বকের জন্য উপদেষ্টা হতে পারেন কোনও ভাল বিউটিশিয়ন। " তাই উৎসবের ক’দিন আগে অযথা ঝুঁকিপ্রবণ পরীক্ষা নিরীক্ষার বদলে ভেবে ফেলুন কত সহজে আপনি ভাল উপদেশ পেয়ে যেতে পারেন হাতের কাছে স্যালোতে! নিজের ত্বক ও চুল বুঝে সেই রকমি সামগ্রী ব্যবহার করা উচিত।
বিশেষ টিপ হিসেবে ত্বকের ক্ষেত্রে খাবার ও জীবন যাপনের বিশাল নজর কাড়া ভূমিকা রয়েছে। রোজ ফল খান, হাঁটাহাঁটি করুন, জল খান ও নিজের শরীরের যত্ন নিন।
নিজের ঘরেই ১৫টি লবঙ্গ জলে দিয়ে ফুটিয়ে রাখুন। তার পর রাতের বেলা সেই জলে বরফের কিউব দিয়ে মুখে লাগাবেন। সকালের মধ্যে ত্বকের জেল্লা হবে দেখার মতো। এই তরল আপনি সংগ্রহে অনায়াসে রেখেও দিতে পারেন, বেশ ক’দিন চলবে।