পুজো এসে পড়ল বলে! সবাই নিজের নিজের পছন্দের কেনাকাটা করছে। নিজের প্রিয় রঙের পোশাক কিনছে। বাড়িতে ফিরে ঠিক করে ফেলছে, এবার দুর্গাপুজোর কোন দিন কোন সাজে সাজবে। শারদীয় উৎসবের কোন দিন কোন রঙের পোশাক পরবে। কিন্তু সেই সব সিদ্ধান্ত কি আমরা জেনে-বুঝে নিই? নাকি স্রেফ নিজেদের পছন্দ মতো নিই? তাতে আমাদের ভালো না খারাপ হয়, জানি কি?
প্রথমেই বলা ভাল, দুর্গাপুজো আর কেবল পাঁচ দিনের নেই। মহালয়ার পরের মুহূর্তে দেবীপক্ষ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখন কার্যত দুর্গাপুজোর অন্তত ঠাকুর দেখা চালু হয়ে যায়। শহর কলকাতার প্রায় সমস্ত বড় পুজোর উদ্বোধন শুরু হয়ে যায় মহালয়ার পরের দিন, কোথাও কোথাও মহালয়ার সন্ধে থেকেই।
অবাঙালিদেরও প্রতিপদ থেকে শুরু হয় নবরাত্রি। ন’দিন-রাত ধরে নবমী অবধি নবরাত্রি পালনের পর বিজয়া দশমীর দিন দশেরা পালিত হয় দেশ জুড়ে। শাস্ত্রে কথিত আছে, নবরাত্রির মতো দুর্গাপুজোতেও রঙের বিশেষ গুরুত্ব আছে। নবরাত্রিতে মা’কে ন’টি পৃথক রূপকে পুজো করা হয় ন’টি ভিন্ন ভিন্ন রং মা দুর্গাকে নিবেদনের মাধ্যমে।
শাস্ত্র অনুসারে নবরাত্রিতে ৯টি রঙ মা দুর্গার ৯টি রূপের প্রত্যেকটি রূপকে চিহ্নিত করে। সেজন্য শাস্ত্রবিদদের ব্যাখ্যায়, মা দুর্গার আশীর্বাদ পেতে গেলে নবরাত্রির ন’টা দিনের যে দিনটায় ন’টা রঙের যে রঙটিতে মা দুর্গার ন’টি রূপের যে রূপটা চিহ্নিত হয়, আমাদের সেদিনটিতে সেই নির্দিষ্ট রঙের পোশাক পরা উচিত। তা হলে মা দুর্গা খুশি হয়ে আমাদের আশীর্বাদ দেন।
সেই মতো কোন দিন কোন রঙের নতুন জামাকাপড় আমরা পরলে মা দুর্গার কৃপা পাব সেটা দেখে নেওয়া যাক— প্রতিপদ - নবরাত্রি তথা দেবীপক্ষের প্রথম দিন দেবী দুর্গা মা শৈলপুত্রী রূপে পূজিত হন। হলুদ কাপড়ে যে পুজো করতে হয়। সেজন্য প্রতিপদে আমাদের হলুদ রঙের নতুন পোশাক পরলে সৌভাগ্য লাভ হয়।
দ্বিতীয়া – এ দিন মায়ের ব্রহ্মচারিণী রূপকে পুজো করা হয়। দেবীর এই রূপের সবুজ পছন্দের রং। তাই এ দিন সবুজ জামাকাপড় পরলে মা দুর্গার কৃপা প্রাপ্তি ঘটে আমাদের।
তৃতীয়া - দুর্গার মা চন্দ্রঘণ্টা রূপের পুজো করা হয় এ দিন। যে মূর্তির খয়েরি খুব পছন্দের রঙ। তাই এ দিন খয়েরি রঙের পোশাক পরলে মা দুর্গা খুশি হন।
চতুর্থী - মা কুষ্মান্ডার পুজো হয় এ দিন। মা দুর্গার এই রূপের পছন্দের রঙ গেরুয়া। তাই তৃতীয়ায় আমরা যদি গেরুয়া তথা কমলা রঙের নতুন পোশাক পরি, তা হলে মায়ের আশীর্বাদ পেতে পারি।
পঞ্চমী - এদিন মা স্কন্দমাতার পুজো হয়। মা দুর্গার এই রূপের প্রিয় রং সাদা বলে এদিন আমাদের নতুন পোশাকের রং-ও শুভ্র সাদা হলে উপকার লাভ হয়।
মহাষষ্ঠী - দুর্গা ষষ্ঠীতে মা দুর্গার মা কাত্যায়নী রূপের পুজো হয়। কাত্যায়নীর পছন্দের রঙ লাল। তাই আমরা ষষ্ঠীতে লাল রঙের পোশাক পরলে মায়ের আশীর্বাদ পাওয়ার সম্ভবনা থাকে।
মহাসপ্তমী - মায়ের কালরাত্রি রূপের পুজো হয় এ দিন। দুর্গার এই রূপের পছন্দের রঙ নীল। তাই এবার সপ্তমীতে নীল রঙের পোশাক পরলে দুর্গার আশীর্বাদ পেতে পারেন।
মহাষ্ঠমী - মা দুর্গার মহাগৌরী রূপ এ দিন পূজিত হয়। মহা গৌরীর প্রিয় রঙ গোলাপী। তাই অষ্টমীর সন্ধ্যেয় আমাদের নতুন পোশাকের রঙও গোলাপি হলে মা দুর্গার কৃপাদৃষ্টি পেতে পারি আমরা।
মহানবমী - নবরাত্রির শেষ দিন এদিন। মহা নবমীতে দুর্গার মা সিদ্ধিধাত্রী রূপের পুজো করা হয়। মায়ের এই রূপের পছন্দের রঙ বেগুনি। নতুন পোশাক-কাপড়ও এদিন আমরা বেগুনি রঙের পরলে মা দুর্গার আশীর্বাদ লাভ করতে পারি।