বাঙালির পুজো-পুজো ভাবে কোনও খামতি হয় না। পাল্লা দিয়ে চলে খানাপিনা, রূপচর্চা, পোশাকআশাক নিয়ে মাতামাতি।
কয়েক বছর ধরে যেমন, কালীপুজোর সাজপোশাকের মধ্যে দেখা যাচ্ছে সিল্ক, মোডাল, জর্জেট ইত্যাদি কাপড়ের উপর সিক্যুইন বা চুমকির কারুকাজের ঝকমকে শাড়ি বা ইন্দো-পশ্চিমী ধাঁচের ফ্যাশন।
তবে দীপাবলির চমকদার সাজের ভিড়ে বাংলার ঘরের হ্যান্ডলুম আর সুতিতেই কী ভাবে ঝড় তুলবেন কেতাদুরস্ত রূপে? টিপস দিলেন পোশাকশিল্পী অনুশ্রী মলহোত্র। উৎসবের মরশুমে অন্য রকম কে না সাজতে চায়! তবে সিফন, জর্জেট আর স্বচ্ছ নেটের শাড়ি ও পোশাকের ভিড়ে নিজেকে নজর কাড়া সাজাতে চাইলে এই বছর মন দিন সুতির শাড়ি ও পোশাকের দিকে। হাতে কাজ করা নকশাদার এমন পোশাক দারুণ মানাবে এ বারের দীপাবলিতে।
অনুশ্রী মলহোত্র জানালেন, ‘‘দীপাবলিতে আমি কখনওই সিফন বা জর্জেট জাতীয় শাড়ি বা পোশাক পরতে বলি না। বাজির ফুলকি থেকে সুরক্ষিত রাখতে সব সময়ই উজ্জ্বল রঙের বা নকশার সুতির শাড়ি পরা উচিত। অনেকেই মনে করেন সুতি বা তাঁতের শাড়ি পরলে তাঁদের মোটা দেখাবে, ধারণাটি কিন্তু এক্কেবারে ভুল।’’
এখনকার দিনের হ্যান্ডলুম সুতির শাড়ি, এমনকি তাঁতের শাড়িও আগের মতো খুব ফুলে ফুলে থাকে না বা শক্ত, খড়মড়ে হয় না। অনুশ্রী জানাচ্ছেন, ‘‘গায়ে লেপ্টে থাকা সুন্দর চেহারার আভাস দিতে এখন সুতির শাড়ির সাজেই হতে পারে কেল্লাফতে।’’
যেমন ধনেখালি তাঁতের কো-অর্ড সেট। তাতে যদি থাকে সিক্যুইনের এক ঘেয়ে চমকের বদলে গুজরাতি কচ্ছ ধাঁচের কাজে ছোট কাঁচের ঠাসা নকশা, তা হলে তো কথাই নেই। আপনার স্নিগ্ধ সাজ আপনাকে আরও মোহময়ী করে তুলবে।
তাঁতে বা সুতির মধ্যে শরীর-জোড়ানো পোশাক পরতে পারেন, এতে আপনি হবে আরও আকর্ষণীয়া। সেখানে ফ্যাশনদুরস্ত লাগার জন্য থাকুক মাছের মোটিফ বোনা তাঁতের কাপড় দিয়ে তৈরি যে কোনও পোশাক। এতেই খুব ‘ট্রেন্ডি’ লাগবে আপনাকে!
অনেকে লেহেঙ্গা পরতে চান কালীপুজোর দিন। সুতির কাপড়ের ফুরফুরে লেহেঙ্গার নীচের দিকের পাড়ে যদি থাকে কন্ট্রাস্টিং রঙের কুরুশের লেস বসানো, তা হলে তো সবার নজর ঘুরবেই আপনারই দিকে।
এখন সমাজমাধ্যমের দৌলতে যুবতী ও তরুণীরা ব্লাউজ বা চোলি পরছেন, একদম সাহসী ও অন্য রকম ধাঁচের। তাঁদের পছন্দের সমীকরণে বদলে গিয়েছে চিরাচরিত কাটের জায়গায় সব্যসাচী কাট, ডিপ ভি নেক, বিকিনি কাট ইত্যাদি। সেই রকম হাল ফ্যাশনের কাটের ব্লাউজ কিনে নিতে পারেন। অনুশ্রী বলছেন, ‘‘সুতির কাপড়ে অনায়াসে বানিয়ে নিতে পারেন এই রকম কাটের ব্লাউজ। এতেই আপনাকে লাগবে ছকভাঙ্গা সুন্দরী!’’
তিনি আরও জানাচ্ছেন যে, ‘‘“লেহেঙ্গা পরলে সঙ্গের ওড়নার জন্য সবাই পছন্দ করেন ফুরফুরে স্বচ্ছ সিফনের বা নেটের ওড়না। তবে আমার মতে আরও চমকদার ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠার জন্য আদর্শ হল সিল্কের ওড়না। এতে অনেক তাঁত শিল্পী ও রেশমশিল্পীরা আরও হ্যান্ডলুমের কাজে উৎসাহ পাবেন, তাঁদের উদ্যাপনের দিকটাও ভেবে দেখা যাবে!’’
কালীপুজো যেমন আলোর উৎসব, তেমনই উজ্জ্বল রঙের উৎসবও বটে! তাই সাধারণ সময়ের প্যাস্টেল বা মিউটেড রং ছেড়ে অনুশ্রীর মতে, উজ্জ্বল রঙের খেলায় মাতুন। আপনার পোশাকে থাকুক তার ছাপ।
উজ্জ্বল লাল রঙের যদি উপরের টপ বা ব্লাউজ পরেন, তা হলে নীচে শারারা পরুন। এই শারারা হতে পারে ঘিয়ে সাদা রঙের, তাতে থাকুক লাল কুরুশের লেস ও লাল সুতোর কাজ দিয়ে বসানো কাঁচের নকশা। সঙ্গের ওড়নাতে থাকুক উজ্জ্বল রঙের ব্লক প্রিন্ট। এতেই আপনি হবেন বন্ধুদের আড্ডায় মধ্যমণি!
ফ্যাশন দুনিয়ায় এখন এক রঙা শাড়ির সঙ্গে সেই একই রঙের ব্লাউজের ট্রেন্ড নজরে আসছে খুব। উজ্জ্বল লাল বা সোনালি রঙের শাড়ির সঙ্গে একদম একই রঙের ব্লাউজ পরতে পারেন। ব্লাউজে থাকুক একটু মিরর-ওয়ার্ক বা কাঁচের কাজ, ডিপ নেকের সাহসী ছোঁয়া। সঙ্গে হালকা কাজল ও টিপ! ব্যস, আপনার সাজ নিয়ে আলোচনা হবে সব্বার মধ্যে।
আর যদি লাল, কমলা, ফুশিয়া রঙের শাড়িতে সাজতে চান, তা হলে বেছে নিন ভারী কন্ট্রাস্টিং রঙের ব্লাউজ। সুতির সাজেই বলে বলে কিস্তিমাত করবেন অনেক অন্য রকম সাজকেও। সঙ্গে চুমকি বা শিমারের কাজের বদলে যদি কাঁচের কাজ থাকে, সেই চমকে পারদ চড়বে আরও অনেক বেশি।