উৎসবের মরসুম চলছে রমরমিয়ে। দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজোর পর এ বার কালীপুজো আগামী ২৪ অক্টোবর, সোমবার। কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিতে পুজো। আলোর রোশনাইয়ে মিশে থাকে গা ছমছমে আবহ।
এই বেলা আমাদের আশপাশের ভুতুড়ে জায়গাগুলি এক বার ঝালিয়ে নিলে কেমন হয়? আসুন এই কালী পুজোর প্রাক্কালে দেখে নেওয়া যাক কলকাতার ভূতের বাড়ির হদিস।
ন্যাশনাল লাইব্রেরি: ১৮৩৬ সালে নির্মিত এই ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে রয়েছে দুর্লভ বইয়ের সংগ্রহ। রাতের অন্ধকারে নাকি এক মহিলার কান্না শোনা যায় বলে জানিয়েছেন রক্ষীরা। কেউ কেউ বলেন, লর্ড মেটক্যাফের স্ত্রী-র আত্মা এখনও এখানে ঘুরে বেড়ায়। কোনও বই পড়ার পরে সেটি ঠিক করে তাকে তুলে না রাখলে নাকি ঘাড়ের কাছে ভারী নিশ্বাসের শব্দ শোনা যায়।
পার্কস্ট্রিট কবরখানা: গোরস্থানে সাবধান! দিনের বেলায় এই স্থান প্রেমের হলেও নাকি রাত হলেই হয়ে ওঠে ভয়াবহ। এই কবরখানা ঘিরে রয়েছে নানা অদ্ভুত গল্প। আত্মাদের ফিরে আসার অলৌকিক ঘটনা, ব্রিটিশ বিরোধীদের কান্না নাকি হাড় হিম করে তোলে। কান পাতলে নাকি আজও শোনা যায় ইংরেজদের আর্তনাদ। এখানে প্রথম কবরটি দেওয়া হয় ১৭৬৭ সালে।
নিমতলা ঘাট: ১৮২৮-এর মার্চ মাসে তৈরি হয় শ্মশান। এবং তখন থেকেই এখানে শব দাহ করা শুরু হয়। এই শ্মশানে অনেকেই অশরীরীর উপস্থিতি অনুভব করেছে বলে শোনা যায়। এর পাশাপাশি এও প্রচলিত আছে যে, ভূতনাথ মন্দিরের পাশে পুরনো শ্মশানে গভীর রাতে আজও কিছু ছায়ামূর্তি দেখা যায়। প্রতি কালীপুজোর রাতে এখানে আরাধনা করেন কাপালিক এবং অঘোরী সাধুরা।
পুতুল বাড়ি: উনিশ শতকে তৈরি হয় এই বিখ্যাত প্রাসাদ। শোনা যায়, বাড়ির মালিকের মেয়ে পুতুল খেলতে ভালবাসত, তাই বিভিন্ন পাথরের মূর্তি দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল এই পুতুল বাড়ি। পরবর্তীকালে এই বাড়ির মালিকানা কলকাতার এক বাবুর হাতে যায়। তিনি নাকি উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করতেন। শোনা যায়, অল্পবয়সি মেয়েদের তুলে এনে যৌন নির্যাতন চালিয়ে বাড়ির মধ্যেই পুঁতে ফেলা হত তাদের। এই নির্যাতিতা মেয়েদের অতৃপ্ত আত্মা নাকি আজও ঘুরে বেড়ায় বাড়ির আনাচে-কানাচে।
রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশন: এক সময়ে নাকি বেশ কিছু ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী থেকেছে এই স্টেশন। রাতে স্টেশনে অস্বাভাবিক দৃশ্য দেখতে পাওয়া এবং পরক্ষণেই তা মিলিয়ে যাওয়া, এই অভিজ্ঞতাও নাকি হয়েছে বহু যাত্রীর। এ ছাড়া শেষ মেট্রো ধরতে গিয়ে অনেকেই চোখের সামনে ছায়া মূর্তি ভেসে উঠতে দেখেছেন বলেও শোনা যায়। অনেক আগে, যখন গ্রেটার কলকাতার ধারণা গড়ে ওঠেনি, ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনার বেশির ভাগই ঘটত এই স্টেশনকে কেন্দ্র করে।
রাইটার্স বিল্ডিং: রাত বাড়লে ফাঁকা রাইটার্সে নাকি আজও শোনা যায় পায়ের শব্দ, কান্নার আওয়াজ! ১৯৩০-এর ৮ ডিসেম্বর, প্রখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী বিনয়, বাদল এবং দীনেশ তৎকালীন ইনস্পেক্টর জেনারেল কর্নেল সিম্পসনকে গুলি করে হত্যা করেন। এখানে অশরীরীর উপস্থিতির কথা শোনা যায় বিশেষত পঞ্চম ব্লকে, অর্থাৎ যেখানে সিম্পসনকে হত্যা করা হয়েছিল। সন্ধ্যার পরে এখনও সচরাচর কেউ থাকতে চায় না এখানে।
হাওড়া ব্রিজ: শুধুমাত্র সৌন্দর্যের দিক থেকেই নয়, ভুতুড়ে জায়গার দলেও কবেই নাম লিখিয়েছে হাওড়া ব্রিজ। ভোর ৩টে নাগাদ অনুশীলন করতে আসা কুস্তিগীরদের মধ্যে অনেকেই নাকি দেখেছেন জলের উপরে একটা ভাসমান হাত! কেউ ডুবে যাচ্ছে ভেবে সাহায্য করতে গিয়েছেন যাঁরা, তাঁরাও নাকি আর ফিরে আসেননি। এ ছাড়াও শোনা যায়, রাতে সাদা শাড়ির এক মহিলাকে ব্রিজের ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে দেখেছেন অনেকেই।
হেস্টিংস হাউস: ইংরেজ আমলে গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের বসতবাড়ি এখন কলেজ। ছাত্রীদের মধ্যে নাকি অনেকেই দেখেছেন, ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সাদা চামড়ার এক ব্যক্তি। অনেকের ধারণা, ওয়ারেন হেস্টিংসের অতৃপ্ত আত্মা এটি। আবার অন্য দিকে জানা যায়, এই হেস্টিংস হাউসের মাঠে ফুটবল খেলতে গিয়ে মারা যান এক কিশোর। অনেকে বলেন, সেই কিশোরের হাসি ও ফুটবল খেলার আওয়াজও নাকি শোনা যায় রাতের দিকে।
ভারতীয় জাদুঘর: একাধিক ভৌতিক কাহিনি রয়েছে এই ভারতীয় জাদুঘর ঘিরে। স্পিক সাহেব, শ্রমিকের মৃত্যু, এক সময়ের নাচঘর ছাড়াও সব থেকে ভয়াবহ গল্প যাকে ঘিরে, তা হল এখানে রাখা এক মিশরীয় মমি। বহু রক্ষী নাকি তাকে রাতবিরেতে ঘুরতে দেখেছেন। আবার বেশ কিছু কর্মচারী নাকি শুনতে পেয়েছেন, আলতো পায়ে কে যেন হেঁটে যাচ্ছে সিঁড়ি দিয়ে। শিহরণ জাগানো দমকা বাতাস পাক খেতে থাকে এই মমিকে ঘিরে। তৈরি হয় এক গা ছমছমে পরিবেশ।
উইপ্রো অফিস: সল্টলেকের এই অফিসে কর্মচারীরা নাকি প্রায়ই রাতের শিফটে বিভিন্ন ছায়ামূর্তি দেখতে পান। আবার অনেক নাকি নাকি কানের পাশে চাপা স্বরে অশরীরীর কণ্ঠস্বরও শুনেছেন। ওই অফিসের সব থেকে ভয়ঙ্কর জায়গা নাকি তিন নম্বর টাওয়ারের তিন তলা। যে কারণে এই জায়গাটিতে যাওয়া-আসা নিষিদ্ধ, তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে থাকে বছরের বেশির ভাগ সময়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অফিসবাড়ি তৈরি হওয়ার আগে এখানে একটি কবরস্থান ছিল। সেই সময়ে নাকি সেখানে একাধিক ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনাও ঘটে।