সারা বছরের সাজ আর পুজোর শাড়ির সাজ আলাদা। শুধু পছন্দের শাড়ি পরলেই হল না। সাড়ে বারো হাতের কাপড়ে কত ভাবে নতুনত্ব আনা যায়, তা-ও দেখতে হবে। সে বিষয়ে সব সময়েই এগিয়ে টলিপাড়ার উজ্জ্বল তারকারা। তাঁদের সারা বছরের সাজই এ বার পুজোয় জোগাক অনুপ্রেরণা। এক শাড়িতেই হোক বাজিমাত।
শুরু হোক কালো দিয়ে। পুজোর সময়ে এমন শাড়ি বাড়ির বড়দের না পসন্দ। কিন্তু সুন্দরী তনয়ার অতি প্রিয় এই রঙেও যে উৎসবের গন্ধ আসতে পারে, নিজের সাজে দেখালেন মিমি চক্রবর্তী। এমনই একটি সাজের ছবি দেখিয়ে লিখলেন, ‘পুজো পুজো ভাব’। অনুরাগীরাও শিখলেন, এক রঙা কালো সিল্ককে দিব্যি পুজোর শাড়ি বানিয়ে ফেলা যায় শুধু সোনার চওড়া নেকলেসের ছোঁয়ায়!
উৎসবের সময়ে বাঙালি বাড়িতে আরও একটি রঙে আপত্তি ওঠে। সাদা। কিন্তু সেই সাদা শাড়িই সোনালি আধুনিক কায়দার ব্লাউজের সঙ্গে হয়ে উঠতে পারে নবমী-সন্ধ্যার চমক। সঙ্গে উঁচু করে বাঁধা খোঁপা আর বড় একটু দুলের যে কী আবেদন, তা তো দেখিয়েই দিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত স্বয়ং।
বাকি বছর সিঁথিতে রং না থাকলেও বহু বঙ্গ ললনার মাথায় দশমীর দিন লালের আভা দেখা যায়। তাতে যে সাজ মাঠে মারা যায় না, সে কথা প্রতি পুজোয় সযত্নে মনে করান অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। কালো চশমা, ভেলভেটের ব্লাউজ আনতে পারে সিঁদুর-গোলাপ-জমকালো গয়নার সাবেক বেশে আধুনিক মোড়।
ব্যাঙ্কের লকারে রাখা গয়না এ সময়ে বাড়িতে আসে। তার সদ্ব্যবহার করার উপায় শিখে নেওয়া যায় এমন কোনও সাজ দেখেই। শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়ের কাঞ্জিভরম শাড়ি নিয়ে নতুন করে আর কী বা বলা যায়। কিন্তু পুজোর দিনে চেনা কাঞ্জিভরমকে যে কত বেশি জমকালো করে তোলা যেতে পারে, তা দেখালেন অভিনেত্রী।
ভারী শাড়ি মানেই ভারী গয়না চাই? কোয়েল মল্লিক বলবেন, এমন সরল সমীকরণের কোনও প্রয়োজন নেই। নিজে যেমন গয়নায় স্বচ্ছন্দ, তেমনই উঠুক গায়ে। চওড়া সোনালি পা়ড়ের শাড়ির মাধুর্য তাতে বরং বাড়েই।
ঝলমলে শাড়ির কাছে নিজের চেহারার জেল্লা যেন ফিকে না লাগে। কী ভাবে এমন হবে? শিখিয়ে দেবে নুসরত জাহানের সাজ। ছিমছাম সাজে বিশ্বাসী এই টলি-কন্যার শাড়ির চমক আর ত্বকের ঔজ্জ্বল্য মিলেমিশে যেন একাকার। অলঙ্কার নানা রকম হয়। তবে সুন্দরীদের হাসির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে কি?
উজ্জ্বল সাজ মানেই অতিরক্ত রং নয়। রাইমা সেন সে কথা জানেন। সাজসজ্জায় আভিজাত্যের ঔজ্জ্বল্য কেমন হয়, দেখিয়ে দিচ্ছে রাইমার হাল্কা লিপস্টিক, মুক্তোর মালা আর ফিকে গোলাপি শাড়ির মেলবন্ধন।
বাঙালি মেয়েরা নানা ধরনের শাড়ি পছন্দ করেন ঠিকই। তবে তার সঙ্গের গয়না, ব্যাগ, ব্লাউজ— কোনও কিছুরই গুরুত্ব নেহাত কম নয়। চেনা লাল শাড়ি যে হয়ে উঠতে পারে ব্যক্তিত্বের পরিচয়, তা বলে দেয় পরনের গয়না। রুপোর আংটি আর ঝুমকো দুলে দেখিয়ে দিলেন সোহিনী সরকার।
কোন শাড়ি কী ভাবে পরবেন, তা-ও বুঝিয়ে দেবে সুন্দরীর মনের ভাব। লাল-হলুদ সুতির শাড়ি তো রয়েছে বাংলার ঘরে ঘরেই। কিন্তু সকলে কি বিদীপ্তা চক্রবর্তীর মতো রুপোর বড়সড় দুল আর কাঠের চুড়ি সঙ্গে পরেন? নাকি আঁচলের ব্যবহারে মনে করান পশ্চিমী সাজের স্কার্ফের ব্যবহারের কথা?
বিয়ের বেনারসি কত বারই বা গায়ে ওঠে? তবে তা-ও হয়ে উঠতে পারে পুজোর সাজের অঙ্গ। শুধু মানানসই আধুনিক কায়দার একটি ব্লাউজই যথেষ্ট। খালি গলা, হাতও খালি আর গায়ে ঝলমলে বেনারসি। চিরাচরিতের সঙ্গে যেন আধুনিকের বন্ধুত্ব স্থাপন করছে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের সাজ। কপালের লাল টিপ, খোঁপার লাল গোলাপ বলছে এ সাজে অনেক যত্ন আছে।
সব গয়না হার মানতে পারে গোলাপের কাছে, শাড়ির সঙ্গে মানিয়ে যায় যদি মাথায় গোঁজা ফুলের রং। কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিল্কের সাজএমনই বলছে। আর বলছে আরও একটি কথা। তা হল, সাবেক শাড়ির সাজে নিত্য নতুন চমক আনা একটি শিল্প। এ পুজোর নিজের অন্দরের শিল্পীকে বার করে আনা যায় শাড়ির ব্যবহারেই।