কৃত্তিবাসের রামায়ণে উল্লেখ রয়েছে দেবী দুর্গার কাছে শক্তি প্রার্থনা করেছিলেন রাম। কিন্তু আরও এক মহাকাব্যে, অর্থাৎ মহাভারতে দু্র্গার উপাসনা নিয়ে কী বলা হয়েছে?
মহাভারতের বিরাট পর্বে উল্লেখ রয়েছে দেবী উপাসনার কথা। রাজ্যভ্রষ্ট যুধিষ্ঠির ১২ বছর বনবাসে ছিলেন। তার পরে কী হল?
দ্রৌপদী ও বাকি চার ভাইকে নিয়ে বিরাটনগরের পথে রওনা হলেন যুধিষ্ঠির।। কারণ, এর পর তাঁদের অজ্ঞাতবাস। পঞ্চপাণ্ডব ও দ্রৌপদী নাম বদল করলেন। জয়, জয়ন্ত, বিজয়, জয়ৎসেন ও জয়দ্বল নাম হল পাণ্ডবদের।
ঋষিদের উপদেশে অজ্ঞাতবাসের সাফল্য কামনায় যুধিষ্ঠির ‘দুর্গাৎ তারয়সে দুর্গে তৎ ত্বং দুর্গা স্মৃতা, জনৈ’ স্তব করে দুর্গার আরাধনা শুরু করেন।
মহাভারতের বর্ণিত দুর্গার সঙ্গে এখনকার পূজিতা দুর্গার মিল রয়েছে। যুধিষ্ঠির যে দেবীর স্তব করেছিলেন, তাঁর সৃষ্টি হয়েছিল দেবতাদের দেহ নিঃসৃত পুঞ্জীভূত তেজ থেকেই।
মহিষমর্দিনীর ঘোর রূপের উপাসনা করেছিলেন যুধিষ্ঠির।
যুধিষ্ঠির-বন্দিতা দেবী চতুর্ভুজা, চতুর্বক্তা ও সিংহারূঢ়া। মাথায় জটামুকুট ও অর্ধচন্দ্র। মুখমণ্ডল পূর্ণচন্দ্রের মতো।
এই দেবী অতসী বর্ণের, সুচারুদশনাও। চোখ নীল পদ্মের মতো গভীর ও সুন্দর। মহাভারতের দেবী কখনও আবার অষ্টভুজাও।
অষ্টভুজা দেবীর আট হাতে শোভা পায় বর, অভয়, পানপাত্র, পদ্ম ফুল, ঘণ্টা, পাশ ধনু ও মহাচক্র।
যুধিষ্ঠির দুর্গাকে অসুরবিনাশিনী ভগবতী বলেছিলেন- এমনই উল্লেখ রয়েছে মহাভারতে। নিজেদের শরণাগত হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বর চেয়েছিলেন জয়ী হওয়ার।
কৌরবদের পরাজিত করে রাজ্য ফিরে পাওয়ার বর দিয়েছিলেন দুর্গা। বিরাট পর্বের পরে ভীষ্ম পর্বে দুর্গা উপাসনা করেছিলেন পাণ্ডবরা।
কৃষ্ণের নারায়ণী সেনা-সহ দু্র্যোধনের বিশাল সেনাবাহিনী দেখে হতচকিত হয়ে পড়েন অর্জুন। কৃষ্ণই অর্জুনকে উপদেশ দেন দু্র্গার উপাসনা করার। স্তোত্রপাঠ শুরু করেন অর্জুন।
অর্জুন দেবীকে বিন্ধ্যবাসিনী, চতুর্ভুজা, চতুর্বক্তা, চণ্ডী, সিদ্ধ-সেনানী, কাত্যায়নী, জয়া-বিজয়া, শূলধারিণী সম্বোধন করেছিলেন বলে জানা যায়।
অর্জুনের উপাসনায় তুষ্ট হন দেবী। শত্রুজয়ের বর পান তৃতীয় পাণ্ডব। এর পরের গল্প সকলেরই জানা। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে পরাস্ত হন কৌরবরাই। সখা কৃষ্ণকে পাশে নিয়ে জয়ী হন পঞ্চপাণ্ডব। তথ্য-মহাভারত, অগ্নিপুরাণ।