গিরিবর হিমালয়ের পত্নীর নাম মেনা বা মেনকা। তাঁদের দুই মেয়ে। বড় মেয়ে জাহ্নবী, ছোট পার্বতী। দেবতাদের অনুরোধে জাহ্নবীকে স্বর্গে পাঠিয়ে দেন হিমালয়। গঙ্গা পরে মর্ত্য আর পাতালেও প্রবাহিনী হন। আর উমা (পার্বতী) তপস্যা করে মহাদেবকে পতিত্বে বরণ করেন।
বাল্মীকি রামায়ণ বলছে, বিয়ের পর শতবর্ষ সহবাস করলেন শিব-পার্বতী। কিন্তু তাঁদের কোনও পুত্র হল না। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন দেবতারা। তাঁদের দুশ্চিন্তা হল, শেষ পর্যন্ত শিব-পার্বতীর যে পুত্র জন্মাবে তাঁর তেজবীর্য সহ্য করার মতো কেউ ত্রিলোকে থাকবে না।
দেবতারা মহাদেবের শরণাপন্ন হলেন। বললেন— হে দেবাদিদেব, আপনার তেজ ধারণের ক্ষমতা কোনও লোকের নেই, ত্রিলোকের হিতার্থেই আপনার তেজ আপনি নিজে ধারণ করে রাখুন। নইলে সব লোক উচ্ছিন্ন হবে। মহাদেব সম্মত হলেন।
মহাদেব বললেন— ঠিক আছে, আমি আর উমা যে যার স্বশরীরে তেজ ধারণ করব। কিন্তু শতবর্ষ সম্ভোগে আমার যে তেজ বিচলিত হয়েছে, উমা ছাড়া আর কে তা ধারণ করবে? সুরগণ বললেন— হে দেব, আপনার হৃদপদ্ম থেকে যে তেজ স্খলিত হয়েছে, তা ধারণ করবে বসুন্ধরা।
মহাদেব তৎক্ষণাৎ তেজ পরিত্যাগ করলেন। সেই তেজে প্লাবিত হল পৃথিবী। দেবতাদের অনুরোধে বায়ুকে সঙ্গে নিয়ে অগ্নি সেই রুদ্রতেজে প্রবেশ করলেন। এর ফলে শ্বেত পর্বত এবং অত্যুজ্জ্বল শরবন তৈরি হল।
বাল্মীকি রামায়ণের কাহিনী অনুসারে, এই শরবনেই পরে গঙ্গার গর্ভে জন্মাবেন মহাতেজা কার্ত্তিকেয় বা কার্তিক। সে অন্য প্রসঙ্গ। আপাতত শিব দেবতাদের অনুরোধে বসুন্ধরাতে নিজ তেজ মোচন করলেও, পার্বতী হলেন রুষ্ট। অভিশম্পাত করলেন বসুন্ধরা আর দেবতাদের।
উমা দেবতাদের বললেন— আমি পুত্রকামনায় স্বামীর সহবাসে ছিলাম, তোমরা তাতে বিঘ্ন ঘটিয়েছ। আজ থেকে তোমরা স্বদারে সন্তান লাভ করতে পারবে না। আমার শাপে তোমাদের পত্নীরা বন্ধ্যা, নিঃসন্তান হবে।
এর পর পার্বতী পৃথিবীকে বললেন— অবনি, আমার অভিশাপে তুই বহুরূপা আর বহুভোগ্যা হবি। আমার পুত্র হয় তুই চাস না। আমার শাপে তুইও কোনও দিন পুত্রপ্রীতি অনুভব করতে পারবি না।
পার্বতীর এই অভিশাপের কাহিনি রয়েছে বাল্মীকি রামায়ণে। বাংলায় হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য এবং রাজশেখর বসুর অনুবাদ থেকে এই প্রতিবেদনের কাহিনিটি নেওয়া হয়েছে।