রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামার নাম নেই। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনে বিশেষ ফৌজি অভিযান (স্পেশ্যাল মিলিটারি অপারেশন) শুরু করে রুশ সেনা।
তার পর থেকে হাজার দিন কেটে গেলেও পূর্ব ইউরোপে থামছে না যুদ্ধ। বরং সংঘাতের উত্তাপ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলতে রাজি নয়।
তবে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এ বার এক ধাপ এগোল ইউক্রেন। রাশিয়ার সঙ্গে চলতে থাকা সংঘাতের মধ্যে নতুন লেজ়ারভিত্তিক আকাশ প্রতিরক্ষা অস্ত্র প্রকাশ্যে আনল ভোলোদিমির জ়েলেনস্কির সরকার।
ইউক্রেনের তরফে সেই লেজ়ারভিত্তিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রকাশ্যে আনার পরে অনেকেই মনে করছেন, শীঘ্রই নতুন অস্ত্রটি যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতির পট পরিবর্তন করে দিতে পারে।
চলতি সপ্তাহে ইউরোপ প্রতিরক্ষা শিল্প সম্মেলনে অস্ত্রটি প্রকাশ্যে এনেছে ইউক্রেন। সেই অস্ত্র দেখে তাক লেগেছে অস্ত্রের বড় বড় কারবারিদের।
ইউক্রেনের ‘আনম্যানড সিস্টেমস ফোর্সেস’ বাহিনীর কম্যান্ডার কর্নেল ভাদিম সুখরেভস্কি জানিয়েছেন, তাঁদের নয়া আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এক মাইল দূর থেকেও শত্রুপক্ষের বিমান ধ্বংস করে দিতে সক্ষম।
সুখরেভস্কির কথায়, “এটা সত্যিই আমাদের কাছে রয়েছে এবং সঠিক ভাবে কাজ করছে।’’
সুখরেভস্কি আরও বলেছেন, ‘‘আমি যদি ভুল না করি তা হলে ইউক্রেন এমন পঞ্চম দেশ যার কাছে লেজ়ার অস্ত্র রয়েছে। আমরা এখন এ কথা বুক ঠুকে বলতে পারি।’’
কর্নেল সুখরেভস্কির দাবি, ‘‘আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও ভাল কাজ করছে এই অস্ত্র। আমরা ইতিমধ্যেই এর সাহায্যে ২ কিলোমিটারেরও বেশি উচ্চতায় ওড়া বিমান ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছি।’’
যদিও সেই অস্ত্র নিয়ে আরও কোনও বিশদ বিবরণ দেননি সুখরেভস্কি। তবে জানা গিয়েছে ইউক্রেনের কাছে থাকা এই নয়া অস্ত্রের নাম ‘ট্রাইজুব’। ‘ট্রাইজুব’ একটি ইউক্রেনীয় শব্দ, ইংরেজিতে যার অর্থ ‘ট্রাইডেন্ট’। বাংলায় অর্থ ‘ত্রিশূল’, যা শিবের অস্ত্র।
‘ট্রাইজুব’ একটি লেজ়ারভিত্তিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এই ধরনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ড্রোন, রকেট এবং মর্টারের মতো উড়ে আসা অস্ত্র শনাক্ত এবং ধ্বংস করতে পারদর্শী।
যুদ্ধের ময়দানে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম অস্ত্রগুলির তুলনায় এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করা অনেক সুবিধাজনক বলে মনে করা হয়। পাশাপাশি ‘ট্রাইজুব’-এর মতো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গুলি ছোড়ার ক্ষমতা অনেক বেশি।
লেজ়ারভিত্তিক অস্ত্রের ব্যবহার সাধারণ যুদ্ধাস্ত্রের থেকে আলাদা। লেজ়ার অস্ত্র ব্যবহার করতে শুধুমাত্র বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়, যে কারণে এই অস্ত্র ব্যবহারের খরচ তুলনামূলক ভাবে কম।
উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন লেজ়ার বিম ব্যবহার করে আকাশকে নিরাপত্তা দেওয়ার অস্ত্রের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ ইজ়রায়েলের হাতে থাকা আয়রন বিম।
রকেট এবং ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়াও মর্টারের গোলা এবং ড্রোন ধ্বংস করতে সক্ষম ইজ়রায়েলি এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। যদিও ২০২৩ সালের অক্টোবরে প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলা প্রতিরোধ করতে পুরোপুরি ভাবে সক্ষম হয়নি আয়রন বিম।
আমেরিকার কাছেও ‘এন/এসইকিউ-৩ লেজ়ার ওয়েপন সিস্টেম’ নামে এই ধরনের একটি অস্ত্র রয়েছে। এ বার এই ধরনের লেজ়ারভিত্তিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইউক্রেনের হাতে এসেছে বলেও খবর।
যুদ্ধ বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে ‘ট্রাইজুব’। গোলাবারুদ ছাড়াই শত্রুদের বিমান ধ্বংস করতে পারবে ইউক্রেনীয় এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।