অনলাইন ঘটকালির ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এক তরুণীর সঙ্গে আলাপ। আলাপ থেকে বন্ধুত্ব, প্রেম। সেই সম্পর্ককে বিয়ের পিঁড়ি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দু’জনে। কিন্তু বিয়ে দূরের কথা, তরুণীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন হবু পাত্র।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, তরুণের নাম শিন। মধ্য চিনের হুবেই প্রদেশে থাকেন তিনি। অভিযুক্ত তরুণীর নাম শিয়াওয়ু। পূর্ব চিনের জিয়াংসু প্রদেশের বাসিন্দা শিয়াওয়ু। ২০২২ সালের অগস্ট মাসে অনলাইন ঘটকালির ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আলাপ দু’জনের।
এক মাস অনলাইনে কথা বলার পর শিনকে প্রেম নিবেদন করেন শিয়াওয়ু। তবে সামনাসামনি কখনওই শিনের সঙ্গে দেখা করতেন না তরুণী। ফোন এবং চ্যাট করেই কথা বলতেন তাঁরা। মাঝেমধ্যে শিয়াওয়ু তাঁর ছবিও পাঠাতেন শিনকে। ২০২৩ সালে তাঁরা বিয়ে করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন।
বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়েই শিয়াওয়ুর প্রস্তাব শুনে চমকে ওঠেন শিন। তরুণী জানান যে, তাঁদের পরিবারের প্রথা অনুযায়ী বিয়ের আগে পাত্রপক্ষের তরফে ১,৮৮,০০০ ইউয়ান (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২২ লক্ষ টাকা) কন্যাপণ দিতে হবে। শিন যদিও কোনও আপত্তি জানাননি।
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে শিন ১০ হাজার ইউয়ান (ভারতীয় মুদ্রায় ১ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা) মূল্যের উপহার নিয়ে শিয়াওয়ুর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান। কিন্তু সেই সময় শিয়াওয়ু অনুপস্থিত ছিলেন। শিনকে তিনি জানান, অসুস্থ থাকার কারণে বাড়ি যেতে পারেননি।
শিয়াওয়ুর পরিবারের সঙ্গে দেখা করে বাড়ি ফিরে যান শিন। এর পর নানা অজুহাতে শিনের কাছ থেকে শিয়াওয়ু টাকা চাইতে শুরু করেন। কখনও মায়ের অস্ত্রোপচারের খরচ জোগানোর জন্য, কখনও আবার বোনকে উপহার দেওয়ার জন্য শিনের কাছ থেকে টাকা নিতেন তিনি। কিন্তু কখনওই শিনের সঙ্গে দেখা করতেন না শিয়াওয়ু।
শিনের দাবি, ২০২৩ সালে শিয়াওয়ু তাঁর কাছ থেকে মোট ২,২০,০০০ ইউয়ান (ভারতীয় মুদ্রায় ২৫ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা) নেন। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে শিয়াওয়ু অবশেষে তাঁর বাবা-মা এবং বোনকে নিয়ে শিনের সঙ্গে দেখা করতে রাজি হন। শিয়াওয়ুর বাবা-মা এবং বোনের সঙ্গে অবশ্য আগেই দেখা হয়েছিল শিনের।
শিয়াওয়ুর সঙ্গে প্রথম দেখা হওয়ার পর শিনের মনে সন্দেহ জাগে। শিয়াওয়ু তাঁকে নিজের যে ছবিগুলি পাঠিয়েছিলেন সেই ছবিগুলির সঙ্গে কোনও মিলই খুঁজে পাচ্ছিলেন না শিন। ছবির সঙ্গে আসল চেহারার কেন অমিল রয়েছে তা শিয়াওয়ুর কাছে জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন যে, ছবি যেন সুন্দর আসে তাই তিনি ‘এডিট’ করেছিলেন। প্রেমিকার কথা মেনেও নেন শিন।
চলতি বছরের মে মাসে বিয়ের তারিখ পাকা করতে শিয়াওয়ুর পরিবারের সঙ্গে বাবা-মাকে নিয়ে দেখা করতে যান শিন। সেই উপলক্ষে শিয়াওয়ুর পরিবারের সকলের জন্য পোশাক কেনেন তিনি। কেনাকাটা করতে ৪০ হাজার ইউয়ান (ভারতীয় মুদ্রায় ৪ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা) খরচ করেন শিন।
দেখা করার পর শিয়াওয়ুর ফোন ঘাঁটাঘাঁটি করছিলেন শিন। তখন শিয়াওয়ুর সঙ্গে এক তরুণের বার্তালাপ নজরে পড়ে তাঁর। শিয়াওয়ু বার বার সেই তরুণের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন এবং তাঁকে চিত্রনাট্য অনুযায়ী অভিনয় করতে বলছিলেন। এই প্রসঙ্গে শিয়াওয়ুকে প্রশ্ন করায় তিনি এড়িয়ে যান।
দু’বছর ধরে তরুণীর অ্যাকাউন্টে ৫৫ লক্ষ টাকা পাঠিয়েছেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ তরুণী সেই সম্পর্কে ইতি টানতে চাইলেন। শিনের সঙ্গে শিয়াওয়ুর বোন শিয়াওমিয়াও দেখা করে সে কথা জানান।
শিয়াওমিয়াও জানান, শিনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর পর শিয়াওয়ু মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেছেন। তাই তিনি আর এই সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে চান না।
শিনের মনে সন্দেহ জাগায় পুলিশের দ্বারস্থ হন তিনি। তদন্ত করে পুলিশ জানতে পারে যে, শিন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। আসলে ওই তরুণী বিবাহবিচ্ছিন্না এবং এক সন্তানও রয়েছে তাঁর।
সন্তান প্রতিপালনের খরচ জোগাতে এই ‘ফাঁদ’ পেতেছিলেন শিয়াওয়ু। এমনকি, পরিবারের সকল সদস্যকে ভাড়া করে এনেছিলেন তরুণী। সকলেই পেশায় অভিনেতা।
শিনকে ছবি পাঠানোর সময় নিজের ছবি পাঠাতেন না শিয়াওয়ু। অনলাইন মাধ্যম থেকে মডেলের ছবি ডাউনলোড করে তা শিনকে পাঠাতেন। প্রতারণার অভিযোগে ওই শিয়াওয়ুকে আটক করেছে পুলিশ।