তৃণা সাহা এবং নীল ভট্টাচার্য
এক সময় আমার কাছে লক্ষ্মীপুজো মানেই ভাইবোনদের সঙ্গে আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া আর পুরোটা সময় কাটানো। আমরা ভাইবোনেরাই এত জন ছিলাম যে বরাবরই একটা জমজমাটি আড্ডা বসত। সেই কথা খুব মনে পড়ে। তাঁরা প্রত্যেকেই এখন বিবাহিত। নিজেদের মতো করে পুজো হয় সেখানে। প্রত্যেকের বাড়িতে আলাদা আলাদা নিয়ম। সব মিলিয়েই আর একসঙ্গে সময় কাটানো হয়ে ওঠে না।
ছিমছাম পুজো বা ধুমধাম পুজোর সংজ্ঞাটা আসলে কী, বা দু’টোর মধ্যে পার্থক্যই বা কী, আমি বুঝি না। পুজোর টানে মানুষজন বাড়িতে চলেই আসেন। সারা দিন ব্যস্ততার ফাঁকে আলাদা করে আমন্ত্রণ জানানো হয় তো হয় না, কিন্তু তারপরেও কম করে ২০-২৫ জন হয়েই যায়!
এই তো আজ, মঙ্গলবার সকালেই নীল আর আমি বাড়ি ফিরেছি। এখন পুজো কার্নিভাল নিয়ে একটু ব্যস্ত ছিলাম। কালকের জন্য মোটামুটি প্রস্তুত হয়েই আছে সবটা। কালকে রাতে মায়ের পুজো দেব বাড়িতেই।
নীল আসলে আমার নেপথ্য সমর্থক! ‘আমি আছি’, এটাই বলে খালি। ওর বাকি দায়িত্ব হল খাবার চেখে দেখা। আর যদি অঞ্জলি দিতে পারে, তা হলে দেবে। আসলে আমি আর আমার শাশুড়ি, দু’জনেই একেবারে না খেয়ে অঞ্জলি দিই। পুজোর সময়টাতে যে নীল থাকবে, এটাই সবচেয়ে বড় বিষয়!
বাকি খাওয়া-দাওয়ার দায়িত্ব বরাবর আমিই সামলাই। নীলদের বাড়ির প্রধান প্রসাদ হচ্ছে এক বিশেষ প্রকারের ক্ষীর। ওটাই হচ্ছে ভট্টাচার্য পরিবারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক অংশ। আমার শ্বশুরবাড়িতে আবার খিচুড়ি ভোগের বিষয়টা নেই। কিন্তু আমার বাড়িতে খিচুড়ি ভোগ তালিকায় থাকবেই। কাজেই দুই বাড়ি মিলিয়ে খুব একটা অসুবিধা হয় না। মায়ের বাড়ি থেকে খিচুড়ি ভোগ আসে। আর এই বাড়ি থেকে লুচি, আলু-কপির তরকারি, আমের চাটনি, পায়েস ইত্যাদি পাঠানো হয়। ফলে দুই ধরনের ভোগই আমাদের খাওয়া হয়।
কালকের দিনে যে আলাদা করে ডায়েট থেকে ছুটি, এমনটা নয়। আমি এমনিতেও পুজোয় সারাদিন না খেয়েই থাকি। একেবারে পুজো দিয়ে তার পর খাব। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে ‘ওয়ান মিল আ ডে’ ডায়েটের সমানই হয়ে যায়। ওই জন্য রাতের বেলা আলাদা করে ডায়েট মানা হয় না। আর তা ছাড়া ঠাকুরের ভোগ খেলে ডায়েট নষ্ট হয় না। ঠাকুরের আশীর্বাদ থাকে তো তাতে!
মায়ের কাছে এই বছর আলাদা করে কিছু চাহিদাও নেই আমার। আমার সঙ্গে সবাই যেন ভাল থাকে এবং সবাইকে নিয়ে যেন শান্তিতে থাকতে পারি, এইটুকুই চাইব।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।