প্রীতি সরকারের ভৌতিক অভিজ্ঞতা
‘ভূত’ আছে কি নেই, সেই বিষয়ে তর্কে যেতে চাই না। তবে সেই দিন যা আমি দেখেছিলাম, তা যদি নিজের চোখে প্রত্যক্ষ না করতাম, তা হলে হয়তো আমিও তার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতাম। ঘটনাটি কত বছর আগের তা মনে নেই সঠিক। তবে যত দূর মনে পড়ে, তখন আমি স্কুল পড়ুয়া। তিন তলা বাড়ির একদম নীচের তলায় আমার বাবা-মা থাকতেন এবং দোতলায় ছিল আমার আর আমার দাদার আলাদা ঘর।
আমার মনে আছে এক দিন আমি সন্ধ্যাবেলায় উপরে গিয়েছিলাম পড়াশোনা করার জন্য। নিজের ঘরে যাওয়ার আগে দোতলার মাঝখানে থাকা একটি ডাইনিং টেবিলে রাখা বই খাতা গোছাচ্ছিলাম। আমার ঘরটা ছিল ওই ডাইনিং টেবিলের ডান দিকে। বই খাতা গোছাতে গোছাতে আমার চোখ যায় টেবিলের সামনের বড় জানলার দিকে। যা দিয়ে আমাদের বাড়ির সামনের বাড়িটা স্পষ্ট দেখা যায়। যদিও দু’টো বাড়ির মাঝে বেশ কিছুটা জায়গা ফাঁকা ছিল। বলা যেতে পারে, একটা ছোট্টখাট্টো মাঠের ব্যবধান।
তবুও আমার মনে পড়ে, আমি স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিলাম, ওই বাড়ির একটি জানলা দিয়ে কেউ যেন এক জন আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে। এতটা পড়ে হয় তো মনে হতেই পারে এ আর এমন কী! সেই অজ্ঞাত পরিচয় মানুষটি হয়তো সেই বাড়িরই কেউ। বিশ্বাস করুন, সেটা হলেও হয়তো এতটা ভয় পেতাম না।
এখানে বলে রাখি, যে জানলা দিয়ে সে আমাকে দেখছিল সেই জানলাটা ওই বাড়ির রান্নাঘরের কোনও অংশের। আর আমি খুব ভাল ভাবেই জানি ওই জানলা দিয়ে কারও দেখা পাওয়া সম্ভবই নয়। কারণ সেটা খুবই উপরের দিকে বসানো। কোনও স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে এতটা উপরে ওঠা মুশকিল।
এর থেকেও বেশি ভয়ঙ্কর ছিল সেই ব্যক্তিটির মুখের ভঙ্গি। সারা মুখে লেপটে রয়েছে লাল আবির। বীভৎস সেই চাহনি। অথচ আমার তাকানোর কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেখান থেকে সরে যায় সে। আমি জানি না সেই দিন আমি কাকে দেখেছিলাম। কিন্তু আর এক মুহূর্তও থাকিনি সেখানে। এক ছুটে নেমে আসি মায়ের কাছে।
এই প্রতিবেদন ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।