সৌরভ চক্রবর্তী
তখন সিরিয়াল করি। বারুইপুরের এক পুরনো রাজবাড়িতে শ্যুটিং চলছিল। আমার সে দিন লেট কলটাইম। তখন রাত আটটা বাজে। প্রথমে অন্য ঘরে বসেছিলাম। মেকআপ রুমটি আগে খুলছিল না কেয়ারটেকার। পরে দরজা খুলে দিতেই আমি গিয়ে বসলাম ভিতরে। মেকআপ রুমের শৌচাগারের সামনে পোশাক বদলের জন্য ছোট্ট একটা ঘর। সেখানে অদ্ভুত একটা ছবি রাখা ছিল, যার দিকে বেশি ক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না। আর আমার মাথার পিছনে ছিল একটা আলো। সব মিলিয়ে ঘরের পরিবেশটাই কেমন অন্য রকম!
পুরনো বাড়ি বলে আমরা অনেকেই ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম চারপাশটা। সহ অভিনেত্রীকে মজা করে বলেছিলাম, আমার সঙ্গে থাকা হালকা রাশির লোকেরা, আমি কাছে থাকলেই ভূত দেখতে পায়। আমার ভারী রাশি। তাই আমি পাই না। এই বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছি। ওই অভিনেত্রী তখন মেকআপ করছিল। কিছু ক্ষণ পরেই ওই ঘর থেকে একটা বিকট আওয়াজ! আমরা ছুটে যাই অনেকেই। গিয়ে দেখি নায়িকা ও তার মেকআপ আর্টিস্ট প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছে। আমাকে বলছে, কেন আমি আগে ওই ভূত দেখার কথাটা বললাম! শুনলাম ওরা দু’জনে একটা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল বাঁধছিল। হঠাৎ দেখে ওরা নিজেরা নড়ছে, কিন্তু আয়নায় ওদের প্রতিচ্ছবি নড়ছে না। প্রচণ্ড ভয় পেয়ে কিছুক্ষণের জন্য ওরা থেমে গিয়েছিল।
এর পরে আর একটি অভিজ্ঞতা হয় ধানবাদে, আমার পরিচালিত ওয়েব সিরিজ ‘ধানবাদ ব্লুজ়’-এর শ্যুটিংয়ের সময়ে। আমরা একটা জুটমিলে সারা রাত শ্যুট করছিলাম। সকালে প্যাকআপ হবে। তখন সকলের শরীর ভরা ক্লান্তি। পাশে ঘন জঙ্গল। চারপাশ নিকষ কালো অন্ধকারে ঢাকা। সবাই আমরা কথা বলছি টুকটাক। আমার চিফ অ্যাসিস্ট্যান্ট আর আমি দু’জনে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। হঠাৎ আমার অ্যাসিস্ট্যান্টের গলার স্বর বদলে গেল। দেখি ও কাউকে বলছে, “এই… সরে যাও… এ ভাবে তাকিয়ে আছ কেন?” আমরা সবাই অবাক হয়ে দেখছি ওর দিকে। কেউ তো দাঁড়িয়ে নেই ওর মাথার পিছনে। জিজ্ঞেস করলাম, কাকে বললি? ও বলল, “ওই যে, ওই লোকটাকে।” আমরা বললাম, কই, কেউ তো নেই! ও নিজেও যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। নিজে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল বলে ঘটনার অভিঘাতে ওর গলার স্বর পরিবর্তন হয়েছিল। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে ওর অনেকটা সময় লেগে যায়।
আর একটি সিরিজ কার্টুন করার সময়েও একটা ভৌতিক অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমার। একটা দৃশ্যে প্রচুর রক্ত দরকার ছিল। আমরা আগে থেকে বালতিতে নকল রক্ত গুলে তৈরি রাখতাম। একটা পুরনো বাড়িতে শ্যুট হচ্ছিল। আমরা আগে থেকে মেঝেতে নকল রক্ত ঢেলে রেখেছিলাম, যাতে নায়িকা পায়েল সরকার এলেই শ্যুট শুরু করে দেওয়া যায়। সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আমরা সবাি তখন আলোচনা করছি কী ভাবে কী করা যায়। কিছুক্ষণ পরে নীচের তলা থেকে আর্তনাদ! আমরা সবাই ছুটে গিয়ে দেখি সিলিং থেকে দেওয়াল বেয়ে রক্ত নামছে। প্রায় একশো ধারা চারটে দেওয়াল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে। আয়না বেয়েও রক্ত পড়ছে। পায়েল ভয়ে বিকট চিৎকার করছে! প্রথমে আমরাও বুঝিনি কোথা থেকে এমনটা ঘটছে। সারা ঘর তখন রক্তের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে। কিছু ক্ষণ পরে অবশ্য কারণটা বোঝা গেল। উপরের তলার মেঝেয় যে রক্ত ঢেলেছিলাম শ্যুটিংয়ের জন্য, কাঠের দেওয়াল বেয়ে সেটাই গড়িয়ে নামছে। পরে পরিস্থিতি সামলে নেওয়া গেলেও আমরা সকলেই কিন্তু কিছু ক্ষণের জন্য ভয়ে সিঁটিয়ে গিয়েছিলাম সে দিন!
এই প্রতিবেদন 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।