‘বিগ বস’-এ যাচ্ছেন না রূপঙ্কর
ছোটবেলা কেটেছে শ্যামবাজারে। প্রথম ঠাকুর দেখা বাগবাজার সর্বজনীনে। ছোটবেলার পুজো মানেই বাগবাজার, হেদুয়া ,কলেজ স্কোয়্যার। এই ঠাকুরগুলো দেখে চলে আসতাম শ্যামবাজার লেডিস পার্কে। ওটাই ছিল পাড়ার পুজো। ওখানেই বাবা-মা, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটত। আমার প্রথম রোল খাওয়াও পুজোতেই তার আগে রোল বলে কোনও বস্তু আছে বলেই আমার জানা ছিল না!
কলেজে পড়ার সময়ে পুজো কাটত পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে। রাত জেগে বা হেঁটে ঠাকুর দেখতে ভাল লাগত না একেবারেই। একটার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসতাম। আমার বন্ধুরা প্রায় সবাই একই মেয়ের প্রেমে পড়েছিল। পাড়ার সব ছেলেকেই সে প্রায় নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাত! পুজোর সময়ে ওই মেয়েটি বেরোলে তার পিছনে পাড়ার ছেলেরাও বেরিয়ে পড়ত। আমিও বেরোতাম ওদের সঙ্গে। তবে মেয়েটির প্রতি কোনও দুর্বলতা দেখানোর সাহস পাইনি। আমার এক বন্ধু আগে থেকেই শাসিয়ে রেখেছিল, ওই মেয়েটির বাড়ির চারপাশে আমাকে দেখলে নাকি মেরে হাড় গুঁড়ো করে দেবে। সেই ভয়ে আমি কোনও দিন সেই মেয়ের দিকে তাকালামই না!
পুজোর সময়ে নাটকের শো করতাম। এত ব্যস্ত থাকতাম, প্রেম করার সময় পাইনি। এখন বিখ্যাত না কুখ্যাত জানি না! পুজোয় কলকাতায় খুব একটা থাকতে পারি না। প্রতি বছরই বিদেশে বা দেশের অন্য কোথাও অনুষ্ঠান থাকে। কোভিডের কারণে গত দু’বছর কোথাও যাইনি অবশ্য।এই বছর পুজোয় বেঙ্গালুরুতে থাকব। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ওখানে অনুষ্ঠান আছে।
কলকাতার থিম পুজো আমার ভাল লাগে না। আমার কাছে আটপৌরে পুজোর আনন্দ অনেক বেশি। আগে যেমন হত। ওই পুজোয় হয়তো গ্ল্যামার ছিল না, কিন্তু একটা প্রাণ, আন্তরিকতা ছিল। এটা খুব মিস করি।
পুজোর সময়ে পরিবারকে ছেড়ে থাকার কথা আমি ভাবতেই পারি না! এই ক’দিন আগেই আমার কাছে ‘বিগ বস’-এ প্রতিযোগী হিসেবে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব এসেছিল। বিরাট অঙ্কের টাকা। এতটাই লোভনীয় প্রস্তাব যে, সেখানে কেকে প্রসঙ্গ বা তর্ক-বিতর্ক খুব একটা বড় ব্যাপার হত না। আয়োজকরা আমাকে বলেছিলেন, তিন মাস আমাকে এমন একটা জায়গায় থাকতে হবে, যেখানে কোনও ফোন থাকবে না, বাড়িতে ফোন করতে পারব না। এ দিকে এই তিন মাসের মধ্যেই পুজো রয়েছে। পুজোয় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে না, এটা তো ভাবতেই পারি না! প্রস্তাবটা আমি ফিরিয়ে দিয়েছি। বাড়ির লোকের চেয়ে টাকা কখনওই বড় নয় আমার কাছে।
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের অংশ।