সন্ধে হলেই এক মুঠো বিনোদন নিয়ে এসে ছোট পর্দার ধারাবাহিকগুলো বদলে দেয় গৃহস্থ জীবনের রং। সাংসারিক গল্প অন্য মাত্রা পায় তারই সৌজন্যে।
খড়ি, ঊর্মি, শ্রীময়ী তাই শুধু আর স্ক্রিপ্টে, প্লটে বন্দি না থেকে হয়ে ওঠে ঘরের মেয়ে। একেবারে লক্ষ্মীমন্ত। আর অগণিত দর্শকের বিষ নজরে পড়েন তাদের সংসারের 'অলক্ষ্মী'রা। তবে সেই বিষ-কন্যেদের জৌলুস কম নয় মোটেও। আসুন জেনে নিই তেমনই কয়েক জনের কথা।
রীতা কয়রাল শুধু বাংলা ধারাবাহিক নয়, বাংলা ছবির একটি বড় অধ্যায়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অভিনেত্রী রীতা কয়রালের নাম। প্রয়াত অভিনেত্রীকে মানুষ মনে রেখছেন দুষ্টু চরিত্রে অভিনয়ের সুবাদেই। ‘আত্মজ’, ‘অসুখ’, ‘পারমিতার একদিন’ সহ একাধিক ছবিতে নিজেকে প্রমাণ করেছেন অভিনেত্রী। কিন্তু মানুষ তাঁকে চিরকাল মনে রাখবে ‘বড় বউ’ ছবির জন্য। এ ছাড়া 'এক আকাশের নীচে', 'বিন্নি ধানের খই', 'সোনার হরিণ'-সহ একাধিক ধারাবাহিকেও কাজ করেছেন তিনি। আদতে লক্ষ্মী হলেও, রীতা মানুষের ভালবাসা পেয়েছেন অলক্ষ্মী রূপেই।
স্বাগতা মুখোপাধ্যায় নাটকের মঞ্চ থেকে শুরু করে টিভির পর্দা, দাপটের সঙ্গে নিজেকে প্রমাণ করেছেন স্বাগতা। তাঁর গানের গলাও খুব সুন্দর। খল চরিত্রে নজরকাড়া চিরকালই। স্ক্রিনের দুর্গা আর পটল কুমারকে এক সময়ে কম জ্বালাতন করেননি তিনি! দর্শক সে সব উপভোগ করেছেন চুটিয়ে।
মৌমিতা গুপ্ত পর্দায় কথা বলার ধরন, চোখের বাঁকা দৃষ্টি, নিজের সংসার ও ছেলের প্রতি একাধিপত্য– এ সব গুণেই জনপ্রিয় অভিনেত্রী মৌমিতা। ‘বউ কথা কও’, ‘ভানুমতীর খেল’ তাঁর সেরা কয়েকটি কাজের তালিকায়।
রীতা দত্ত চক্রবর্তী ‘উড়ন তুবড়ি’র জাঁদরেল শাশুড়ি তিনি এই মুহূর্তে। এক দিকে পারিবারিক ব্যবসা, অসুস্থ স্বামী, অন্য দিকে ছেলে অর্জুনকে হাতছাড়া না করার প্রবল প্রচেষ্টা। ও দিকে বৌমাও দমে যাওয়ার পাত্রী নয় মোটেই। অভিনেত্রী রীতা ভাল-মন্দ দু'রকম চরিত্রে অভিনয় করলেও মানুষ তাঁকে বেশি পছন্দ করেন অলক্ষ্মী রূপেই।
চান্দ্রেয়ী ঘোষ অলক্ষ্মী, ডাইনির চরিত্রই বেশি করেছেন অভিনেত্রী চান্দ্রেয়ী। আর সে পথেই তিনি জায়গা করে নিয়েছেন দর্শক মনে। বিশেষত রানি কটকটি হিসেবেই তিনি অধিক পরিচিত। রূপকথার গল্পের সেই চরিত্রে তাঁর সাজ পোশাকও প্রশংসিত হয়েছিল। অলক্ষ্মীও যে এত সুন্দর হয়, তা অভিনেত্রী যেন প্রমাণ করে ছেড়েছেন।
ঊষসী চক্রবর্তী ধারাবাহিক কবেই শেষ। তবু জুন আন্টিকে ভোলেননি দর্শক। সংসারের আসল অলক্ষ্মী বলতে যা বোঝায়, সেটা বোধ হয় জুন আন্টি দেখিয়েছিলেন চোখে আঙুল দিয়ে। অন্যের স্বামীকে ছিনিয়ে নিয়ে নিজের স্বামী করতে এতটুকু সুযোগও বাদ দেননি তিনি। তাঁকে নিয়ে মিমে ছেয়ে গিয়েছিল নেটপাড়া। বাস্তবের ঊষসী কিন্তু একেবারে উল্টো, ভাল মনের মানুষ।
সুদীপ্তা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিপছিপে শরীর, গভীর চোখ, উগ্র রূপটান। রাণী মণিমল্লিকাকে দেখে এক নজরে মনেই হবে না খলনায়িকা তিনি। তবে ‘সাত ভাই চম্পা’ সিরিয়ালে এই রূপেই সুদীপ্তা নজর কেড়েছেন সকলের।
শর্বরী মুখোপাধ্যায় কৃষ্ণকলিতে বৈষ্ণব সেজে তিনি শ্যামা’কে দিন রাত যে ভাবে নাস্তানাবুদ করেছেন, তা একমাত্র শ্যামা’ই জানে। শ্যামার গলার স্বর অবধি কেড়ে নিতে চেয়েছিলেন। অভিনেত্রী শর্বরী ছোট পর্দায় নিজের জমি শক্ত করেছিলেন ‘জয়ী’ তে অলকা চরিত্রের মাধ্যমেই।
রুকমা রায় ‘বাঘ বন্দী’ খেলা ও ‘প্রতিদান’ এ ডাইনির চরিত্রে নজর কেড়ে ছিলেন অভিনেত্রী রুকমা। প্রশংসা পেয়েছেন আদর্শ মেয়ে বা বউমার চরিত্রেও। দর্শক মহলের একাংশের মতে অভিনেত্রীর একটা এক্স-ফ্যাক্টর আছে, যে কারণে সব সময়েই দর্শকের মন জয় করতে পারেন তিনি।
মিশমি দাস অভিনয় শুরু তাঁর সাময়িক বিরতির কথা গুঞ্জন তুলেছিল প্রতি গৃহস্থ ঘরেই। সকলে ভেবেছিলেন, ‘ঊর্মি’ বোধ হয় এ বার আনন্দে সংসার করতে পারবে সাত্যকির সঙ্গে। কিন্তু সে পরিকল্পনায় জল ঢেলে আবারও পর্দায় ফিরে এসেছেন অভিনেত্রী মিশমি দাস।