সারা বছর প্রতিমা থাকে এক মারাঠি দম্পতির বাড়িতে।
অতিমারির মাঝেই আরও একটি পুজো। ইংল্যান্ডের এসেক্স শহরতলির মেঘলা আকাশে মাঝেমাঝে শরতের সোনা রোদের ঝলক দেখা দিচ্ছে। পুজো এসে গিয়েছে। পুজোর গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
ক্লিনিক থেকে ফেরার পথে চোখে পড়ে বিশাল কাশ বন। মনের কোণে আগমনী গানের সুর গুনগুনিয়ে ওঠে।
এসেক্স শহরতলির দুর্গাপুজো এ বার হচ্ছে ব্যাসিলডনের ফ্রিপা হলে। হলটির চারদিকে খোলা মাঠ, ছোটদের খেলার জায়গা রয়েছে। গাড়ি রাখার জায়গারও অভাব নেই।
গতবছর আমরা শুধু ‘ড্রাইভ থ্রু’ পুজোর আয়োজন করতে পেরেছিলাম। গাড়ি নিয়ে এসে এক ঝলক প্রতিমা দর্শন করে চলে যাচ্ছিলেন সকলে। লক ডাউন ছিল বলে এক জায়গায় জড়ো হয়ে হইচই করা যায়নি। তাই এবছর পুজো নিয়ে উত্তেজনা একটু অন্যরকম। কোভিড বিধির কথা মাথায় রেখে অবশ্য একটি খোলমেলা হল খুঁজে বার করা হয়েছে। এ বছর কলকাতা থেকে অনেক জিনিসপত্র আনা হয়েছে। প্রতিমা ও পুজোর জায়গা সাজানো হচ্ছে তা দিয়ে। এবারের থিম ‘ঘরে ফেরা’।
এসেক্স শহরতলির পুজোর বৈশিষ্ট্য হল, ভারতের সব প্রদেশের মানুষ একসঙ্গে দেবীর আরাধনার আয়োজন করেন। সারা বছর প্রতিমা থাকে এক মারাঠি দম্পতির বাড়িতে। পুজোর ক’দিনের ভোগও রান্না করেন নানা প্রদেশের মানুষ। পঞ্জাব, অসম, পশ্চিমবঙ্গ— বিভিন্ন জায়গার লোকে পুজোর কাজে হাত লাগান। পুজোর হলে প্রতিমাকে নিয়ে আসা হয় ইংরেজ প্রতিবেশির ভ্যানে করে। ভ্যানের মালিকের নাম মাইক। প্রতিমাকে গাড়িতে তোলার সময়ে সকলের সঙ্গে মাইকও বলেন, ‘‘বলো দুগ্গা মা কি জয়!’’
গত বছরের পুজো লক ডাউনের মধ্যে হয়েছিল বলে উৎসবের আনন্দ পরিপূর্ণ ভাবে উপভোগ করা যায়নি। সব হয়েছিল, কিন্তু তবু যেন অনেক কিছু বাকি রয়ে গিয়েছিল। এখনও অতিমারি কাটেনি ঠিকই, তবে পুজোর উত্তেজনা যেন একটু একটু করে ফেরত আসছে। বিদেশে বড় হওয়া কিশোর-কিশোরীরাও পুজোর খোঁজ নিচ্ছে।
সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখা আর্য, নেহা, তৃষা কোথায় একসঙ্গে ঠাকুর দেখতে যাওয়ার পরিকল্পনায় ব্যস্ত। লন্ডনের পুজোর ওয়েবসাইট ভাল করে দেখে ফেলেছে ওরা। পুজোয় পরার জন্য জামা-কাপড় বাছা শুরু হয়ে গিয়েছে।
মারাঠি গিন্নি চিত্রা খুব খুশি যে এ বার আবার সকলে মিলে সিঁদুর খেলা হবে। রানি বৌদি নারকেল নাড়ু বানিয়ে ফেলেছেন। পুজোয় কোন কোন গানের সঙ্গে নাচ হবে, তার তালিকা তৈরি করেছেন অনির্বাণ, উজ্জ্বল, উপল। গুজরাতি কন্যা রত্নার উপর দায়িত্ব পড়েছিস সকলকে নিয়ে গরবা নাচের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে মালিনী, অমৃত আর অর্পিতা। নাটক, গান, নাচ কবিতা সব মিলিয়ে এক ভরপুর আনন্দের আয়োজন। পুজোর সব মুহূর্ত ভিডিয়োয় তুলে ধরবেন পেশায় ভ্লগার সঞ্চিতা। পুরোহিত হলেন পেশায় শল্য-চিকিৎসক, দীপঙ্কর। পুজোর দিনে যাতে ফাঁকা থাকেন, তা আগে থেকেই মিলিয়ে রাখেন তিনি। এখানে পুজো মানেই গল্প, আড্ডা, ছবি তোলা, ফুচকা খাওয়া আর সকলকে কাছে পাওয়া। এসেক্সের সকলে এই উৎসবের জন্য সারা বছর ধরে একটু একটু করে তৈরি হই।
(লেখক পেশায় চিকিৎসক)