উত্তর কলকাতাকেই আমি ভালবাসি, তাই উত্তরকেই আমি বুকে নিয়ে চলি।
সে অনেক দিনের কথা। তখন ‘রান্নাঘর’ শুরু হয়নি, চাকরি করব ভেবে চলে গিয়েছিলাম দিল্লিতে। প্রথমে গুরুগ্রামে থাকি, সেখানে মন বসল না। থাকতে শুরু করলাম সিআরপার্কে। ভাবলাম, এ বার বুঝি একটু মন বসবে। কিন্তু ওহ্ বাবা, দু’সপ্তাহের বেশি সেখানে থাকতে পারলাম কই? এতটাই ভালবাসি আমি কলকাতাকে।
আমার ছোটবেলা কেটেছে বরাহনগরে। গঙ্গার এক্কেবারে ধারে আমাদের পাড়া। হাঁটাপথ...গঙ্গা মানেই উদারতা। ছোটবেলায় কখনও জেটিতে, কখনও ঘাটে বসে ওই নিরন্তর বয়ে যাওয়া গঙ্গার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। ছুটির দিন বা গরমের ছুটিতে আমাদের পাসটাইম কাটত গঙ্গায়। জলে দাপাদাপি, ঝাঁপাঝাঁপি, সে এক আলাদা মজার ব্যাপার। বাড়িতে প্রচুর নালিশ আসত। তাতে কী? আমাদের ‘কুছ পরোয়া নেহি’।
আমি বড় হয়েছি একান্নবর্তী পরিবারে। আর উত্তর কলকাতায় পাড়া ফিলিংসটা এখনও অটুট। বরাহনগরের পাড়া, আমার বাড়ি আমায় শিখিয়েছে শেয়ার করতে শেখা। মনে আছে, সে সময় শুধু আমাদের বাড়িতেই টিভি। পাড়ার সবাই আসত খেলা দেখতে। তাঁদের জন্য খাবারদাবার তৈরি...সে এক আলাদা আনন্দ। আমি এখন মা। কিন্তু এই জেনারেশনকে দেখছি যেটা চাই, সেটাই চাই। এই তো, আদির হাত থেকে রিমোট কেড়ে নিলেও কান্নাকাটি করতে থাকে।
আরও পড়ুন: ছোটবেলার কলকাতা যেন একটু বেশি ভাল ছিল
আমি উত্তরে মানুষ, কিন্তু বিয়ের পর আমি দক্ষিণ কলকাতাতেই থাকি
আবার ফিরে আসি বরাহনগরে। পাড়ায় যখন ঝগড়াঝাটি হত, পাড়ার হর্তাকর্তা এসে ব্যাপারটা সামাল দিতেন। এখন দেখি কেউ কাউকে মানে না, কেয়ার করে না, খারাপ লাগে।
আমি উত্তরে মানুষ। এখন বিয়ের পর আমি দক্ষিণ কলকাতায় থাকি। কিন্তু তাই বলে উত্তর কলকাতাকেই আমি ভালবাসি, দক্ষিণকে বাসি না, এমনটা নয়। আমি উত্তরকে আমার বুকে নিয়ে চলি। সেই নস্টালজিয়া, সেই অলিগলি...কিন্তু আমি এটাও বিশ্বাস করি, উত্তর কলকাতায় সারাজীবন থাকলে আজকে আমি যে পরিচিতি পেয়েছি সেটা কোথাও না কোথাও গিয়ে পেতাম না। পাড়া কালচারের ভাল দিক যেমন রয়েছে, খারাপ দিকও তো রয়েছে।ওরা এগোবার কথা ভাবে না। ওরা ভাবে, এগনো মানে পুরনো সমস্তকিছুকে ভুলে যাওয়া। কিন্তু আদপে তো তা নয়। মিলিয়ে মিশিয়ে এগিয়ে যাওয়াটাই আসল।
আরও পড়ুন: কালবৈশাখীর আঁচলের তলায় শান্তির ঘুম পাড়ায় আমার কলকাতা
সুদীপার কোলে ছোট্ট আদিদেভ
কলকাতায় আমার পছন্দের জায়গা আউটরাম ঘাট, বেলুড় মঠ। আমার বাড়িতে সবাই বেলুড় মঠ থেকে দীক্ষা নেওয়া। এ ছাড়াও আর এক পছন্দের জায়গা হল ভিক্টোরিয়া। আরও বিষদে বলতে গেলে ভিক্টোরিয়ার এক্কা গাড়ি। খুব পছন্দের।কলকাতা শহরের ফুসফুসে হাওয়া খেতে খেতে প্রিয়জনের সঙ্গে ঘোরা...এ কি কম কথা!
আমি যে খেতে ভালবাসি সেটা তো সকলেই জানেন। কিন্তু তারই মধ্যে মাটন রোল, ফুচকা আর বিরিয়ানি...ভেবেই খিদে পেয়ে গেল, আমার সবচেয়ে প্রিয়।কলকাতাকে নিয়ে লিখতে গেলে আমার আর শেষ হবে না। এ ভাবেই বেঁচে থাক আমার কলকাতা। ভালবাসায় থাক। ভালবাসতে শেখাক।