‘বিশেষ করে পুজোর সময় কলকাতা যেভাবে সেজে ওঠে সেটা ভীষণই ভাল লাগে’
শিল্পী হিসেবে আমি ফিল করি কলকাতার মানুষ ভীষণ আবেগপ্রবণ। এটা খুব ভাল লাগে। রাস্তাঘাটে বেরোলেই দেখি আমাকে চিনতে পেরে মানুষজন দৌড়ে আসে। এটা আমার মনে হয় অন্য কোনও শহরে নেই। আমি কলকাতাতেই কাজ করতে চাই। মানুষের ইমোশনাল দিকটার জন্যই বোধহয়।
আমিও ইমোশনালি কলকাতার সঙ্গে জড়িত। আর জড়িত বলেই এই শহরে আছি। যখন কলকাতাকে চিনতাম না তখনকার বিষয়টা আলাদা ছিল। যখন চিনলাম তখন, বিশেষ করে পুজোর সময় কলকাতা যেভাবে সেজে ওঠে সেটা ভীষণই ভাল লাগে। প্রথম এই ব্যাপারটা মিস করেছিলাম যখন কিছুদিন মুম্বইতে থাকতে হয়েছিল। তখন মুম্বইতে সবাইকে ধরে ধরে বলতাম, ‘‘পুজোর সময় কলকাতার যেখানেই থাকবে মনে হবে কিছু একটা যেন হচ্ছে। ওই সময় এতটাই সেজে থাকে শহরটা।’’
আমি ছোট থেকে আসানসোলে থেকেছি। কলকাতাকে বড় শহর হিসেবে জানতাম। ছোট থেকেই ইচ্ছে ছিল এই শহরে এসে সেটল করব। এখানকার লাইফস্টাইল আমার পছন্দের ছিল। এখানে আসার আগে যেগুলো টিভিতে দেখতাম বা বইয়ে পড়তাম। সেই অনুযায়ী ভাবতাম কলকাতার অংশ হব। সেটা হয়ে গিয়েছি। হতে পেরে খুব ভাল লাগে। রুটিরুজি, ভালবাসা, প্রেম— সবই আমাকে দিয়েছে কলকাতা।
‘স্ট্রাগল করার সময় বাসে, ট্রেনে বা হেঁটে হেঁটেই ঘুরতাম, সেই সূত্রে অনেক রাস্তা-গলি চেনা হয়ে গিয়েছে’
আমি যখন প্রথম কলকাতা আসি তখনকার থেকে এখন শহরটা অনেক বেশি সাজানো। আমার মনে হয় নতুন করে আর সাজানোর কিছু নেই।
কলকাতার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভীষণ ভাল। ট্রাম থেকে মেট্রো সবই আছে। ট্রামে ধর্মতলা থেকে খিদিরপুর খুব ভাল লাগে চড়তে। যদিও দু’বছর আগে লাস্ট চড়েছি। যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন ভাল তেমনই খুব সস্তাও। এটা অন্য কোনও শহরে পাওয়া যাবে না। অন্তত আমি যেক’টা শহর ঘুরেছি পাইনি। এই যে শেয়ারিং অটো, এটা কোনও শহরে আমি দেখিনি। মুম্বই, দিল্লিতে দেখেছি ক্যাবের মতো অটোও হায়ার করতে হয়।
আমি ভোজনরসিক নই। তাই খাওয়া নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে পারব না। তবে কলকাতার বিরিয়ানি আমার খুব ফেভারিট। এখানকার মতো বিরিয়ানি আর কোথাও পাওয়া যায় না। কোত্থাও না। আর অবশ্যই কলকাতার মিষ্টি। আমি বাইরে থেকে এসেছি বলে এটা বুঝতে পেরেছি। আমার মনে হয়,কলকাতার যে কোনও ছোট দোকানেও মিষ্টির যে কোয়ালিটি থাকে তা অন্য কোনও শহরে পাওয়া যাবে না। অন্য শহরে মিষ্টি খেতে গিয়ে এরকম এক্সপিরিয়েন্স হয়নি।
কলকাতাকে চেনা খুব সহজ নয়। তবুও এই শহরের অনেক অলিগলি আমি চিনি। স্ট্রাগল করার সময় বাসে, ট্রেনে বা হেঁটে হেঁটেই ঘুরতাম। সেই সূত্রে অনেক রাস্তা-গলি চেনা হয়ে গিয়েছে। কলকাতার কিছু কিছু জায়গা আছে যেখানে স্ট্রাগলের সময় খুব কষ্টে কাটিয়েছি। এখনও মাঝে মাঝে সেসব জায়গায় গেলে একা দাঁড়িয়ে থাকি। যেমন, সন্তোষপুর ব্রিজের ওপর অনেক সময় গাড়ি দাঁড় করিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকি। এক সময় আমার ঘরে ফ্যান ছিল না। তখন এই ব্রিজে ঠিক এইভাবে দাঁড়িয়ে হাওয়া খেতাম। এটা এখনও খুব ইমোশনাল জায়গা হয়ে আছে।