স্রোতস্বিনী গঙ্গার দুই তীর বেয়ে গড়ে উঠেছে শহর। অসংখ্য হোটেল, ধর্মশালা, লজ মিলিয়ে অতিনিবাসের এখানে অভাব নেই। গঙ্গামুখী হোটেলের চাহিদা সবসময়েই বেশি। নিরামিষ আহারে বিমুখ না হলে হরিদ্বারের খাওয়া দাওয়া মন্দ লাগার কথা নয়। কলকাতায় স্ট্রিটফুড খেয়ে অভ্যস্ত হলে হরিদ্বারের রাস্তায় পাতায় পরিবেশন করা ডালপুরি খেতে ভুবলবেন না।
হরিদ্বারের মতো শহরে ‘দর্শনীয়’ স্থান চিহ্নিত করা বেশ মুশকিল। এক দিক দিয়ে দেখতে গেলে সারা দেশই ধরা দেবে এই বর্ণময় ক্যালাইডোস্কোপের রংমিলান্তিতে। শহরের সবথেকে জমজমাট জায়গা ‘হর কি পৌড়ী’ ঘাট। এই শব্দের অর্থ ভগবান বিষ্ণুর পায়ের ছাপ। ভক্তদের বিশ্বাস, এই ঘাটের ব্রহ্মকুণ্ডেই পড়েছিল অমৃতের ফোঁটা। অর্ধ কুম্ভ এবং পূর্ণ কুম্ভে এই ঘাটেই সবথেকে বেশি ভক্ত সমাগম হয়। মেলা না থাকলেও বছরভরই হর কী পৌড়ী পুণ্যার্থীদের ভিড়ে সরগরম। প্রতি দিন সূর্যাস্তের সময় এই ঘাটে সংস্কৃত মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে গঙ্গারতি এক অনন্য দৃশ্য। ক্লক টাওয়ারের কাছে বড় বড় প্রদীপের স্ট্যান্ড হাতে একাধিক পূজারী সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আরতি করেন। গোধূলি থেকে সন্ধ্যা নামা পর্যন্ত চলতে থাকা সেই পর্ব দেখতে ভিড় করেন বহু বিদেশি পর্যটকও। আরতি দেখা হয়ে গেলে গঙ্গায় ভাসিয়ে দিতে পারেন ছোট্ট পাতার টুকরিতে জ্বলতে থাকা মাটির প্রদীপ। মনোবাঞ্ছা পূরণ অথবা স্বর্গত পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধা জানিয়ে পালিত হয় এই রীতি।
‘চণ্ডীদেবী মন্দির’, ‘মনসাদেবী মন্দির’, ‘ভারতমাতা মন্দির’, ‘মায়াদেবী মন্দির’, ‘সপ্তঋষি আশ্রম’, ‘গৌরীশঙ্কর মহাদেব মন্দির’, ‘সুরেশ্বরী দেবী মন্দির’-সহ অসংখ্য মন্দির ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হরিদ্বার জুড়ে। পাশাপাশি আছে বহু আশ্রমও।
পুণ্যার্জনের পাশাপাশি হরিদ্বারে এসে দেখতে পারেন রাজাজি জাতীয় উদ্যানেও। শিবালিক হিমালয়ে দেহরাদুন, হরিদ্বার, পৌড়ী গাড়োয়াল— এই তিন জেলায় বিস্তৃত অভয়ারণ্যটি সম্প্রতি ব্যাঘ্র প্রকল্পের পরিচয়ও পেয়েছে। হরিদ্বারের চিল্লা বন্যপ্রাণ সংরক্ষণকেন্দ্রটি পরবর্তীতে সংযুক্ত হয়েছে এই অরণ্যের সঙ্গে। বাঘের দর্শন দুর্লভ হলেও রাজা সি গোপালাচারীর নামে নামকরণ হওয়া এই অভয়ারণ্যে দেখা পেতে পারেন ভালুক, চিতল, সম্বর এবং অজগরও।
যে কোনও পুণ্যভূমির মতো হরিদ্বারের বাজারও বর্ণময় এবং আকর্ষণীয়। বাজারে সাজানো পশরার মধ্যে অন্যতম হল পুজোর জিনিসপত্র। গঙ্গাজল সংগ্রহের পাশাপাশি আমবাঙালির উদ্দেশ্য থাকে হরিদ্বারের বাজার থেকে ঠাকুরঘরের যাবতীয় উপকরণ সংগ্রহও।
হরিদ্বারে এসে অমৃতকুম্ভের সন্ধান না করলে কার্যত অসম্পূর্ণই থেকে বাঙালির লোটাকম্বলের বৃত্তান্ত।
কলকাতা থেকে কীভাবে যাবেনঃ
উপাসনা এক্সপ্রেস, কুম্ভ এক্সপ্রেস, দুন এক্সপ্রেস-সহ একাধিক ট্রেনে কলকাতা থেকে হরিদ্বার পৌঁছন যায়। একান্তই আকাশপথে যেতে হলে দেহরাদুনের জলি গ্রান্ট বিমানবন্দর অবধি যেতে হবে। সেখান থেকে সড়কপথে হরিদ্বারের দূরত্ব ৩৭ কিমি।