Follow us on

Download the latest Anandabazar app

© 2021 ABP Pvt. Ltd.

Advertisement

১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ই-পেপার

হিমালয়ের কাছে যেতে কলকাতা থেকে ধনৌল্টীর পথে

অর্পিতা রায়চৌধুরী
০১ মার্চ ২০২১ ১৮:৩৫

অকৃপণ প্রকৃতির সৌন্দর্য্যে পরিপূর্ণ ধনৌল্টী

অকৃপণ প্রকৃতির সৌন্দর্য আছে। জমজমাট বাজার নেই। দেবদারু, ওক, রডোডেনড্রনের ঘন জঙ্গলে ছাওয়া পাকদণ্ডী আছে। লোকজনের ভিড় নেই। এ রকম কোনও জায়গায় যদি হারিয়ে যেতে চান, তা হলে আপনার আদর্শ গন্তব্য ধনৌল্টী। উত্তরাখণ্ডে মুসৌরি-চাম্বা পথের ধারে ধনৌল্টী এখনও ঠিক শৈলশহর হয়ে উঠতে পারেনি। বরং একে গাড়োয়াল হিমালয়ের কোলে হারিয়ে যাওয়ার ঠিকানা বলতে পারেন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২৫০ মিটার উচ্চতায় ধনৌল্টী থেকে হিমালয়ের অপূর্ব নিসর্গ বেশির ভাগ বাঙালির কাছেই অজানা এবং অধরা।

তেহরি গাড়োয়াল জেলার এই জনপদে বেড়াতে যাওয়ার আদর্শ সময় হল সেপ্টেম্বর থেকে জুন। এখানে হোটেলের ভিড় এখনও ব্যাঙের ছাতা হয়নি। তাই হোটেল বা হোম স্টে-এর জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে অন্য হোটেলের ঢালু ছাদের ডিশ অ্যান্টেনার বদলে হিমালয়ের বরফঢাকা চূড়াই চোখে পড়ে। ধনৌল্টীতে এসে ম্যালে যাওয়ার তাড়া নেই। কেনাকাটার পশরায় ব্যাগ ভর্তি করারও সুযোগ নেই। এখানে হিমালয় আর আপনার প্রেমপর্বের যোগ্য সঙ্গত দেবে ধূমায়িত কফি। সরলবর্গীয় বৃক্ষের ছায়ায় পাকদণ্ডী বেয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় আপনার পাশে চলে আসতে পারে গাড়োয়ালি কিশোর।

Advertisement
 তেহরি বাঁধের জলাশয়ে নৌকাবিহারের সুযোগও রয়েছে আপনার জন্য।

তেহরি বাঁধের জলাশয়ে নৌকাবিহারের সুযোগও রয়েছে আপনার জন্য।


ফুটিফাটা গাল আর নিষ্পাপ হাসি দেখে মনে পড়ে যাবে ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ ছবির সেই বালকের গান। গাড়োয়ালি কিশোরের হাতে ধরা ঘোড়ার রশি। বাচ্চাদের ঘোড়ার পিঠে বসিয়ে পাকদণ্ডি ধরে ঘুরিয়ে আনে ওরা। পারিশ্রমিক নিয়ে জোরজবরদস্তি নেই। যা চেয়েছে, তা কমানোর জন্য দরদাম শুরু করলে আবার লজ্জা পেয়ে যায় হাসিমুখ নামিয়ে নেয়। জানাতে ভোলে না, প্রিয় নায়কের ছবির নামে পোষ্যের নাম রেখেছে ‘দবং’। এবং গোটা ধনৌল্টীতে দবং-ই নাকি সবথেকে ভদ্র ঘোড়া।

পাহাড়ের ঢালে সবুজের অঢেল সমারোহ

পাহাড়ের ঢালে সবুজের অঢেল সমারোহ


হিমালয়ের শান্ত পরিবেশেও অ্যাডভেঞ্চারের ষোলো আনা সুযোগ আছে। ‘অম্বর’ এবং ‘ধারা’ দু’টি ইকো পার্কে পাহাড়ের ঢালে সবুজের অঢেল সমারোহের মাঝেই স্কাই ওয়াক, রক ক্লাইম্বিং এবং হাইকিং-এর বন্দোবস্ত। আপনার অ্যাডভেঞ্চারের সঙ্গী হবে অসংখ্য পাখির ডাক। কপাল নেহাত মন্দ হলে শাখামৃগদের দৌরাত্ম্যের মুখেও পড়তে হতে পারে। বেশির ভাগ বাঙালির আবার ‘সাইট সিয়িং’ না করলে বেড়ানোর আনন্দ সম্পূর্ণ হয় না। তাদের জন্য আছে দেওগড় কেল্লা এবং দশাবতার মন্দির। যাঁদের ইতিহাসে আসক্তি, তাঁদের কেল্লা এবং দশাবতার মন্দির ভাল লাগবে। ষোড়শ শতকের এই কেল্লার দেওয়ালের ভাস্কর্য তাক লাগিয়ে দেয়। দশাবতার মন্দিরটিকে মনে করা হয় গুপ্ত যুগের সমসাময়িক।

হিমালয় এবং ইতিহাসের যুগলবন্দিতেও আশ না মিটলে আছে সুরকন্দ দেবীর মন্দির এবং কানাতাল অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্প। এই জায়গাগুলি দেখা হয়ে গেলে গাড়ি নিয়ে চলে যান তেহরি। ধনৌল্টী থেকে ২৩ কিমি দূরে তেহরিতেই আছে দেশের মধ্যে সবথেকে লম্বা এবং বিতর্কিত বাঁধ। ভাগীরথীর উপর এই বাঁধের বিরোধিতা করে দীর্ঘ দিন সত্যাগ্রহ আন্দোলন করেছেন পরিবেশবিদ সুন্দরলাল বহুগুণা। তার পরেও বাঁধ আটকানো যায়নি। তেহরি বাঁধের জলাশয়ে নৌকাবিহার করেন পর্যটকরা। ধনৌল্টী থেকে তেহরি যাওয়ার পাহাড়িয়া পথটিও ভারী মনোরম।

এ বার গাড়োয়াল হিমালয়ে বেড়াতে যাওয়ার জন্য ব্যাকপ্যাক বাঁধলে তালিকায় দেহরাদূন, মুসৌরির পাশাপাশি রাখুন আপাত ব্রাত্য ধনৌল্টীকেও।

কলকাতা থেকে কীভাবে যাবেনঃ

কলকাতা থেকে দেহরাদুন অথবা হরিদ্বার পৌঁছে সড়কপথে চলে আসুন ধনৌল্টী। দেহরাদুন থেকে ধনৌল্টীর দূরত্ব ৪০ কিমি। হরিদ্বার থেকে এলে পাড়ি দিতে হবে ৮৭ কিমি দূরত্ব।

Advertisement