Follow us on

Download the latest Anandabazar app

© 2021 ABP Pvt. Ltd.

Advertisement

৩০ অক্টোবর ২০২৪ ই-পেপার

শতবর্ষ প্রাচীন এই পাইস হোটেলে নেতাজিকে নিজের হাতে খাবার পরিবেশন করেছেন প্রতিষ্ঠাতা

কলেজ স্ট্রিটে প্রেসিডেন্সি কলেজের কাছে নতুন ঠিকানায় থিতু হওয়ার পরেও কেটে গিয়েছে ৮০ বছর। সে দিনের হিন্দু হোটেল আজ ‘স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেল’

অর্পিতা রায়চৌধুরী
কলকাতা ০৪ মার্চ ২০২১ ১১:৪১

হিন্দু কলেজ তখন নাম পাল্টে প্রেসিডেন্সি কলেজ হয়ে গিয়েছে ৫০ বছরেরও বেশি আগে। কিন্তু সে সময়েও লোকে তাকে চেনে হিন্দু কলেজ নামেই। তার ঠিক পিছনে পাইস দোকান খুলেছিলেন মানগোবিন্দ পণ্ডা। ওড়িশার কটক থেকে তিনি কলকাতায় এসেছিলেন চাকরি করতে। চাকরির পাশাপাশি ১৯১২-’১৩ সাল নাগাদ শুরু করেছিলেন এই ভাতের হোটেল। হিন্দু কলেজের পাশে বলে নাম রেখেছিলেন ‘হিন্দু হোটেল’।

Advertisement



পরে পুরনো ঠিকানার কাছেই নতুন জায়গায় উঠে আসে হোটেলটি। কলেজ স্ট্রিটে প্রেসিডেন্সি কলেজের কাছে নতুন ঠিকানায় থিতু হওয়ার পরেও কেটে গিয়েছে ৮০ বছর। সে দিনের হিন্দু হোটেল আজ ‘স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেল’। নাম পরিবর্তনের সলতে পাকানো চলছিল তখন থেকে, যখন প্রেসিডেন্সি কলেজের এক উজ্জ্বল ছাত্র প্রায়ই দুপুরে ভাত খেতে আসতেন এখানে। ভালবাসতেন পুঁইশাকের চচ্চড়ি এবং মুড়িঘণ্ট। সেই ছাত্রকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে ইতিহাসের বহু অধ্যায়। আজও, প্রতি বছর ২৩ জানুয়ারি দিনটিতে তাঁর জন্মদিন পালিত হয় এই হোটেলে। প্রথম ১০০ জন ক্রেতার জন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা রাখা হয়। জানালেন হোটেলের বর্তমান মালিক অরুণাংশু পণ্ডা। তাঁর কথায়, ‘‘মানগোবিন্দ পণ্ডা ছিলেন আমার ঠাকুরদা। তাঁর মুখে শুনেছি, কলেজজীবনের পরেও সুভাষচন্দ্র বসু এসেছিলেন এই হোটেলে। দাদু নিজের হাতে পরিবেশন করতেন তাঁকে। সাবেক বাঙালি খাবার খুব ভালবাসতেন সুভাষ। আমাদের কাছে পয়লা বৈশাখের থেকেও তাঁর জন্মবার্ষিকী বেশি গুরুত্বপূ্র্ণ দিন।’’

 চিংড়ি মাছের মালাইকারি

চিংড়ি মাছের মালাইকারি


শোনা যায়, সুভাষ একা নন। এই হোটেলের খাবার পছন্দ করতেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, অরবিন্দ ঘোষ-সহ স্বাধীনতা সংগ্রামের আরও অনেক নেতা। খাওয়ার পাশাপাশি এই হোটেল ছিল তাঁদের গুপ্ত বৈঠকেরও জায়গা। পুরনো সেই অধ্যায়ের কী কী এখনও আছে? শুনে অরুণাংশুর উত্তর, ‘‘মালিক কর্মচারী আর হোটেলের সাজসজ্জা পাল্টেছে। খাবারের স্বাদ কিন্তু অপরিবর্তিত।’’ সে দিনের মতো আজও সব রান্না হয় উনুনের কয়লার আঁচে ঘানির সরষের তেলে। গুঁড়ো মশলার প্রবেশ এখনও নিষিদ্ধ। প্রত্যেক রান্নায় পড়ে বাটা মশলা। পাচকরা আসেন মেদিনীপুর এবং পড়শি রাজ্য ওড়িশা থেকে।

ইলিশ থেকে মৌরলা মাছের ঝাল সবই পাবেন মেনুতে।

ইলিশ থেকে মৌরলা মাছের ঝাল সবই পাবেন মেনুতে।


পাইস হোটেলের রীতি মেনেই নেই কোনও নির্দিষ্ট মেনুকার্ড। বাজারে যখন যা তরকারি পাওয়া যায়, সেটা কেনা হয়। মাছের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এই হোটেলে রোজ ১২ থেকে ১৫ রকম মাছের পদ রান্না হয়। ট্যাংরা, পারসে, পাবদা, মৌরলা, ইলিশ, চিংড়ি, পমফ্রেট, বাটা, আড়, চারাপোনার মতো মাছ রোজই থাকে হোটেলের কড়াইয়ে। কালোজিরে লঙ্কাবাটা দিয়ে দৈনন্দিন ঝোলের পাশাপাশি থাকে চিংড়ি মাছের মালাইকারি, ভেটকির পাতুরির মতো বিশেষ পদও। সঙ্গে মাটন এবং চিকেনের পদও। ভোজনরসিকদের মতে, এই হোটেলের বিশেষত্ব হল মাছের মাথা দিয়ে পুঁইশাকের চচ্চড়ি এবং মৌরলা মাছের ঝাল। কাঁচা আমের টক ঝাল মিষ্টি পাতলা চাটনি এখানে পাওয়া যায় বছরভর।

মেঝেতে আসনপিঁড়ি হয়ে কাঁসার বাসনে খাওয়ার বদলে এসেছে কাঠের চেয়ার টেবিল। তবে পুরনো আটপৌরে গন্ধকে খুব যত্ন করে আজও গায়ে জড়িয়ে রাখতে ভালবাসে নেতাজির স্মৃতিধন্য এই হোটেল।

Advertisement