Follow us on

Download the latest Anandabazar app

© 2021 ABP Pvt. Ltd.

Advertisement

২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ই-পেপার

শিলনোড়ায় বাটা মশলা, কয়লার আঁচে রান্না, প্রায় শতবর্ষ ধরে কলকাতার স্বাদকোরকের তৃপ্তি

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলিয়ে বহু পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে ‘জগন্নাথ হোটেল’। কাঁসার থালাবাসনের বদলে এসেছে স্টেনলেস স্টিলের থালা।

অর্পিতা রায়চৌধুরী
কলকাতা ০৩ মার্চ ২০২১ ১৮:২৭

৯ দশক পেরিয়ে ‘জগন্নাথ হোটেল’ এখনও চলছে রমরমিয়ে।

৯০ বছর আগে গিরি গোবর্ধন পালুই মেদিনীপুরের ঘাটাল থেকে এসেছিলেন কলকাতায়। শুরু করেছিলেন পাইস হোটেল। আরাধ্য দেবতার নামে নামকরণ করেছিলেন নিজের উদ্যোগের— ‘জগন্নাথ হোটেল’। সে সময় ব্রিটিশ কলকাতায় পাইস হোটেলের চাহিদা তুঙ্গে। গিরি গোবর্ধনের ব্যবসা জমে উঠতে দেরি হল না। ৯ দশক পেরিয়ে সেই হোটেল এখনও চলছে রমরমিয়ে।

ভোজনরসিকদের প্রিয় গন্তব্য এই ভোজনালয়। কলেজ স্ট্রিটে বর্ণপরিচয় বাজার তৈরির সময় ৮ বছর স্থানান্তরিত হয়েছিল হোটেল। আবার ফিরে এসেছে পুরনো জায়গায়।

Advertisement



মৃত্যুর আগে হোটেলের দায়িত্ব জামাইকে দিয়ে যান গিরি গোবর্ধন। এখন হোটেলের দেখভাল করছেন প্রতিষ্ঠাতা গিরি গোবর্ধনের নাতি, মানস মণ্ডল। জানালেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলিয়ে বহু পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে এই হোটেল। অতীতে মেঝেতে আসন পেতে বসে কাঁসার থালাবাসনে খেতেন অতিথিরা। এখন সে জায়গায় এসেছে টেবিল চেয়ার। কাঁসার বদলে স্টেনলেস স্টিলের থালা। তার উপরেই বিছিয়ে দেওয়া হয় কলাপাতা। আটপৌরে ঘরানায় তার উপরেই পরিবেশিত হয় সরু চালের ভাত, সোনামুগের ডাল, সঙ্গে মাছের মাথা দিয়ে ছ্যাঁচড়া।



এই সুস্বাদু গৌরচন্দ্রিকার পরে শুরু হয় আসল ভোজনপর্ব। চিংড়ির মালাইকারি, চিতলের পেটি-সহ ভেটকি, পাবদা, পারসে, ট্যাংরা, আড়, পারসে, বোয়াল মিলিয়ে প্রায় ১২-১৩ রকম মাছের পদ রান্না হয় এই হোটেলে। সঙ্গে থাকে মাটন ও চিকেনের পদও। পুরনো রীতি মেনে ব্রয়লার মুরগির প্রবেশ এখনও নৈব নৈব চ। ক্রেতাদের পাতে তুলে দেওয়া হয় দেশি মুরগির পদ। এই হোটেলের রাঁধুনিদের হাতের মাটন কষাও ক্রেতারা চেটেপুটে খান। নিরাশ হবেন না নিরামিষাশীরাও। তাঁদের স্বাদকোরকের কথা ভেবে আছে এঁচোড়ের ডালনা এবং পাঁচমিশালি তরকারি। শেষপাতে খেজুরের আমসত্ত্বের চাটনি।



রান্নার স্বাদ অক্ষুণ্ণ রাখতে এই হোটেলে ওড়িশা থেকেই রন্ধনশিল্পীদের নেওয়া হয়। তিন প্রজন্মের মালিকানায় তাঁরাই এখনও রান্না করে চলেছেন। উনুনে কয়লার আঁচে, বাটা মশলার পাকে রাঁধা হয় বাঙালি হেঁসেলের পঞ্চব্যঞ্জন। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা, আবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা অবধি অতিথিদের পাতে খাবার পরিবেশন করে আদি ও অকৃত্রিম এই ভোজনালয়।

বাহারি আদবকায়দা, সুদৃশ্য অন্দরসজ্জা থেকে যোজন দূরে এই হোটেলের নিজস্বতা তার কাঠের টেবিল চেয়ারের আটপৌরে পরিবেশই। তার সঙ্গে মিশে যায় রান্নার স্বর্গীয় স্বাদের অনুপান। সঙ্গে থাকে ক্রেতাদের জন্য যত্ন এবং আন্তরিকতা। এই মূলধন সম্বল করেই আরও অসংখ্য দশক পার হতে চায় সুপ্রাচীন এই ভোজনালয়।

Advertisement