অওয়ধি রান্নার মূল বৈশিষ্ট্য হল এর সুগন্ধ, জানালেন মঞ্জিলত। সেই সঙ্গে মশলা কম, মৃদু এবং একদম চটচটে হবে না এই রান্না। পারিবারিক সেই রীতিতেই রান্না করতেন মঞ্জিলত। বাড়িতে কোনও অনুষ্ঠান থাকলে তাঁর রান্নার স্বাদে মুগ্ধ হয়ে যেতেন আমন্ত্রিতরা। বন্ধুবান্ধবরা অনুরোধ করতেন মঞ্জিলতকে, তিনি যেন এই রান্নাকে শুধু তাঁর অন্দরমহলে আটকে না রাখেন। কিন্তু প্রথম দিকে বন্ধুদের আব্দার উড়িয়ে দিতেন মঞ্জিলত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মনে হল, করাই যাক না! ‘‘আমার কাছে ব্যবসার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল অওয়ধের খাবারকে তুলে ধরা। এর যে আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে, সেটা সকলকে জানানো’’, বলছেন মঞ্জিলত।
তাঁর হাতের রান্না খেতে হলে আগে থেকে বুকিং করতেই হবে। কারণ যেরকম বুকিং থাকে, সেরকমই রান্না করেন তিনি। প্রতিদিন হয়তো ৩৫ থেকে ৪০ জন অতিথির আসন পড়ে তাঁর অওয়ধি রান্নার ঠিকানায়। অনেকেই চলে আসেন বুকিং ছাড়াই। অনেক দূর থেকে মানুষ আসেন কসবায় তাঁর হাতে আসল অওয়ধি রান্নার স্বাদ পেতে। মঞ্জিলত চেষ্টা করেন, তাঁদের ফিরিয়ে না দিতে। কিন্তু মাঝে মাঝে তিনিও অপারগ। এখন দুপুরের পাশাপাশি নৈশভোজের ব্যবস্থাও হয়েছে। আছে বাড়িতে খাবার নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও।
মঞ্জিলতের প্রয়াসের বয়স ৬ বছর। এর মধ্যে তাঁর ব্যবসা কতটা বেড়েছে সেটা বড় কথা নয়। তার থেকেও যে জিনিসটা তাঁকে আনন্দ দেয় তা হল, বাঙালির প্রিয় খাবারের তালিকায় মোগলাই, চাইনিজ, সাউথ ইন্ডিয়ান, কন্টিনেন্টালের পাশাপাশি তিনি যোগ করতে পেরেছেন ‘অওয়ধি’ ধারাকেও। আসল স্বাদ এবং রান্নার পদ্ধতির সঙ্গে আপস করতে চান না তিনি। ‘ফিউশন’ শব্দটায় তাঁর ঘোরতর আপত্তি। তিনি মনে করেন ‘ফিউশন’ তৈরির থেকে কয়েক যুগ ব্যাপী শিকড়ের প্রতি সৎ থাকা অনেক কঠিন। তিনি বিশ্বাস করেন, সমঝদাররা আসল স্বাদের জন্য বেশি অর্থ ব্যয় করতে দ্বিধা বা কার্পণ্য করবেন না।
সেই বিশ্বাস থেকেই গুণমানের সঙ্গে আপস না করেই মঞ্জিলত বিরিয়ানির সঙ্গে তৈরি করেন লখনউয়ের গলৌটি কাবাব, পসিন্দা কাবাব এবং ঘুটওয়া কাবাব। থাকে বোটি এবং হান্ডি কাবাবও। কাবাব মানেই যে শুকনো ঝোলবিহীন নয়, সেটাও বার বার বলতে চান তিনি। মঞ্জিলতের রসুইয়ে রোজকার মেনুতে উঁকি দিয়ে যায় ইয়াখনি পোলাউ, রেজালা এবং অবশ্যই তাঁর হেঁসেলের বিশেষত্ব ‘উল্টা তাওয়া পরাঠা’। শেষপাতে মিষ্টিমুখের জন্য হাজির শাহি টুকরা, হালুয়া অথবা ক্ষীরের মধ্যে কোনও এক জন।
মঞ্জিলত যতটা অওয়ধি, তার থেকেও বেশি কলকাতার। তাই লখনউ ঘরানার বিরিয়ানিতে আলু না থাকলেও তিনি সেই প্রণালী থেকে সরে এসেছেন। এটা তাঁর কাছে ‘ফিউশন’ নয়। বরং গোমতীর তীরে লখনউ ছেড়ে আসা হতভাগ্য নবাবের শেষ জীবনের দিনলিপি। সিপাই বিদ্রোহ দমনের পরে যে দিনলিপি লেখা হয়েছিল গঙ্গার পাশে কলকাতার মেটিয়াবুরুজে ব্রিটিশদের দেওয়া নির্বাসনে।