Follow us on

Download the latest Anandabazar app

© 2021 ABP Pvt. Ltd.

Advertisement

২২ নভেম্বর ২০২৪ ই-পেপার

শতবর্ষের দোরগোড়ায় দাঁড়ানো এই নিরামিষ ধাবা টেক্কা দেয় শহরের যে কোনও আমিষ রেস্তরাঁকে

‘বলবন্ত সিংহ ইটিং হাউস’-এর সামনে বাঙালির ভিড় শহরের যে কোনও রেস্তরাঁর কাছে ঈর্ষণীয়।

অর্পিতা রায়চৌধুরী
কলকাতা ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৪:০৭

বলবন্ত সিংহ ইটিং হাউস

বাঙালি আমিষের বশ। প্রচলিত এই ধারণা রোজ দিনভর এসে ধাক্কা খায় ভবানীপুরের হরিশ মুখার্জি রোডের এক ধাবায়। তিন প্রজন্মের এই ধাবার বয়স এখন ৯৯। শতবর্ষের দোরগোড়ায় দাঁড়ানো এই খাবারের জায়গায় প্রথম থেকেই নিরামিষ রান্না হয়ে আসছে। তার স্বাদগ্রহণের জন্য ‘বলবন্ত সিংহ ইটিং হাউস’-এর সামনে বাঙালির ভিড় শহরের যে কোনও রেস্তরাঁর কাছে ঈর্ষণীয়।

প্রতিযোগীদের ঈর্ষার কারণ হয়ে থাকার প্রধান কারণ, খাবারের গুণমানের সঙ্গে আপস না করা। জানাচ্ছেন ধাবার ম্যানেজার প্রসেনজিৎ মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, এই ধাবায় সব খাবার তৈরি হয় খাঁটি ঘি দিয়ে। সেই ঘি বাজারচলতি নয়। নিজেদের ঘরে তৈরি ঘিয়ে ধাবার সব খাবার রান্না করা হয়।

এই রীতি মেনে চলা হচ্ছে প্রথম দিন থেকেই। তবে প্রথম থেকেই পঞ্জাবি খাবারের জন্য এত সুখ্যাতি ছিল না এই ধাবার। সে সময় এখানে মূলত চা পাওয়া যেত। সেই বিখ্যাত দুধ চায়ের ধারা আজও বইছে। রোজ এই ধাবা থেকে অন্তত ২ হাজার থেকে ৪ হাজার চা বিক্রি হয়। শনি এবং রবিবার বিক্রি বাড়ে। মাটির ভাঁড়ে মশলাদার ঘন দুধের চায়ে তৃপ্তির চুমুক দেন ক্রেতারা। কখনও কখনও সেই চায়ে যোগ হয় কেশরের পরশ। কেশর চায়ের সঙ্গে পাল্লা দেয় দুধ কোলা। কলকাতায় এই রেসিপি এসেছে তাদের হাত ধরেই।

Advertisement
মাটির ভাঁড়ে চা সঙ্গে সিঙ্গারা

মাটির ভাঁড়ে চা সঙ্গে সিঙ্গারা


দাবি, এই ধাবার। দুধ, চিনি বরফের সঙ্গে মেশে ক্রেতার পছন্দমতো ঠান্ডা পানীয়। সঙ্গে থাকে আরও একটি উপাদান। সেই গোপন উপাদান ফাঁস করতে নারাজ তাঁরা।

তবে সাফল্যের সবথেকে বড় রহস্য সততা। বিশ্বাস করতেন বলবন্ত সিংহ। স্বাধীনতার আগে পঞ্জাবের রোপর থেকে পা রেখেছিলেন কলকাতায়। যদুবাবুর বাজারের কাছে এক জায়গায় চাকরি করতেন হিসারক্ষকের। তার পর দায়িত্ব পান এই ধাবার। সে সময় এটা ছিল নিছক চায়ের দোকান। নামও ছিল তৎকালীন মালিকের নামে। তিনি কলকাতা ছেড়ে পঞ্জাব ফিরে যান। দোকানের দায়িত্ব বর্তায় বলবন্ত সিংহের উপর। তিনি ধীরে ধীরে দোকানের পরিধি আরও বড় করেন। সেই বিস্তৃতি আজও জারি তাঁর দুই প্রজন্ম পরেও।



আজও এই ধাবা বিশ্বাস করে, তাদের কাছে এটা ব্যবসার থেকেও বেশি পরিষেবা। সেই পরিষেবার ছায়ায় নিশ্চিন্ত হন দূরদূরান্ত থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে রোগী ভর্তি করাতে আসা পরিজনরা। রাতবিরেতে এই অসহায় মুখগুলোর কথা ভেবেই সারা দিন খোলা থাকে বলবন্ত সিংহ ইটিং হাউস।

খাবারের মধ্যে এখানে শীতকালে তুমুল চাহিদা থাকে ‘সরসোঁ দা সাগ’-এর সঙ্গে ‘মক্কী কী রোটি’-র। বাঙালির শীতবিলাসে বহু দিনই পিঠেপুলি, কেক পেস্ট্রির সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে সর্ষে শাক এবং মকাইয়ের রুটি। পঞ্জাবের বিশেষ এই খাবারের চাহিদা শীতের পাশাপাশি কমবেশি থাকে বছরভরই। এ ছাড়া পনীর এবং তড়কাও খুব জনপ্রিয়।

দুধ কোলা , কেশর চা

দুধ কোলা , কেশর চা


লকডাউনে ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে। তবে অতিমারির আতঙ্ক কিছুটা ফিকে হতেই আবার ক্রেতারা ফিরে এসেছেন। সব রকম প্রতিবন্ধকতা জয় করে আগামী দিনেও গঙ্গাপারের রসনায় পঞ্চনদের দেশের স্বাদ পরিবেশন করে যেতে চায় ভোজনবিলাসীদের প্রিয় প্রাচীন এই ঠিকানা।

(ছবি: বলবন্ত সিংহ ইটিং হাউস-এর ফেসবুক পেজ থেকে)

Advertisement