হাতে হাতে তালি দিয়ে গুপী-বাঘা আকাশ থেকে হাঁড়ি হাঁড়ি রাজভোগ-পান্তুয়া হাজির করেছিল অনাহারী প্রজাদের জন্য। তা দেখে সকলের চক্ষু ছানাবড়া। আর এই অতিমারি আবহে মেঘ মুলুক থেকে সোজা খাবার পৌঁছে যাবে আপনার প্লেটে, কোনও ভূতের রাজার বর ছাড়াই। শুধুমাত্র অর্ডারটি দেওয়ার অপেক্ষা। ম্যাজিকের নাম ‘ক্লাউড কিচেন’। ‘গোস্ট কিচেন’, ‘শেয়ার্ড কিচেন’ বা ‘ভার্চুয়াল কিচেন’ নামেও যা পরিচিত। কোভিড ১৯-এ যখন সারা বিশ্ব জর্জরিত, জীবনযাপন চলে গিয়েছে লকডাউনে, ঠিক তখন এই কনসেপ্ট শুধুমাত্র ক্রেতার মুখেই হাসি ফোটায়নি, রেস্তরাঁ ব্যবস্থাও এক নতুন দিগন্ত খুঁজে পেয়েছে যেন এতে। জন্মগ্রহণ আগে হলেও জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে এই লকডাউনের সময়।
টেক অ্যা ওয়ে কাউন্টার থেকে খাবার কিনে বাড়ি ফিরে নিজের ডাইনিং টেবিলে বসে খাওয়ার অভ্যাস নতুন নয়। ক্লাউড কিচেনেরও মূল মন্ত্র খানিকটা তাই। এখানে শুধুমাত্র ডেলিভারি হয়, বসে খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। অর্ডারের ব্যবস্থা প্রায় পুরোটাই অনলাইন। ‘ডেলিভারি অনলি’ মডেলে চলে। ফুড অ্যাপ, ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপ থেকে অর্ডার করা যায়। এক দিকে আপনার যেমন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাদবদল হল, তেমন ওদিকে রেস্তরাঁ মালিকদের পকেটেও খানিকটা স্বস্তি এল। রেন্ট, ওয়েটার, স্টাফ এমন নানা খরচাপাতি কমল। এ যেন এক অন্য মেঘ পিওনের সন্ধান, যে কিনা নিয়ে আসে রসনাতৃপ্তির সংবাদ।
কথা বললাম দু'টি ক্লাউড কিচেনে।
মেঘ বলেছে খাব খাব: পেটপুজোর নতুন ঠিকানা 'ক্লাউড কিচেন'
ঘোষ ক্লাউড কিচেনের কর্ণধার তাপসী ঘোষ বললেন, "হোম ডেলিভারি না খুলে ক্লাউড কিচেন খোলার পরিকল্পনা, যাতে বেশি লোকের কাছে পৌঁছনো যায়। আমা
চৌরঙ্গী ক্লাউড কিচেনের কর্মচারী সুশান্ত বললেন, প্রথমে বাড়িতে রান্না করে এই রান্নাঘরের যাত্রা শুরু। ক্রমে পাড়া ছাড়িয়ে অন্যান্য জায়গা থেকেও অর্ডার আসতে শুরু করে। এর পর একই ছাদের নীচে ৪-৫টি ব্র্যান্ড মিলে শুরু হয় এই ক্লাউড কিচেন। প্রায় সাত বছর ধরে চলছে এই কিচেন। অন্য দিকে ঘোষ ক্লাউড কিচেনের কর্ণধার তাপসী ঘোষ বললেন, "হোম ডেলিভারি না খুলে ক্লাউড কিচেন খোলার পরিকল্পনা, যাতে বেশি লোকের কাছে পৌঁছনো যায়। আমাদের মতো ছোটখাটো ননব্র্যান্ডেড ব্যবসায়ীদের জন্য ক্লাউড কিচেন খুবই ফলপ্রদ।"
শুধুমাত্র ডেলিভারি রেস্তরাঁর ধারণা এই প্রথম। যে কোনও রেস্তরাঁ চালাতে যা খরচ, তার প্রায় ৫০ শতাংশ কমে ব্য বসা করা যায়। শহর কলকাতার এক অন্যাতম জনপ্রিয় ফুড অ্যা পের তো নিজস্ব ক্লাউড কিচেনও রয়েছে। সেখানে তারা রেস্তরাঁদের সাহায্য করে ‘পড’ স্পেস দিয়ে। পড একটা অস্থায়ী জায়গা, যেখানে রান্না করার ব্যাবস্থা করা যায়। একই ছাদের তলায় আলাদা কামরায় নানা ধরনের কুইজিনের ব্যবস্থা। অল্প বাজেট অথচ রেস্তরাঁ খোলার স্বপ্ন যাঁদের, তাঁদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ। ক্লাউড কিচেনের সব থেকে বড় সুবিধা, কোনও অঞ্চলে রেস্তরাঁর অস্তিত্ব না থাকলেও সেই অঞ্চলে খাবার পৌঁছনো সম্ভব– ‘অফ প্রেমাইজ ইজ দ্যঅ নিউ প্রেমাইজ’। ঠিক এইখানে এদের পথ আলাদা হোম ডেলিভারির থেকে।
একটা সময় পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে ওঠা হোম ডেলিভারিরও প্রায় একই কনসেপ্ট ছিল। নিজেদের পাকশালে রান্না করে বাড়ি বাড়ি ডেলিভারি দেওয়া। আপনি ফোন করে দিলেন আর খাবার আপনার দোরগোড়ায়। ক্লাউড কিচেনের ব্যবস্থা একটু আলাদা। এখানে শুধু নিজের পাড়া নয়, বন্ধুর পাড়াতেও বসে অর্ডার করতে পারবেন। মেনুর অপশনও প্রচুর। নানা ধরনের কুইজিন মিলবে একই ছাদের তলায়। আর তাই 'মেঘ করা' মানেই 'মন খারাপ করা বিকেল' নয়। মেঘ করলেই স্বাদ বদল। পেটপুজোর নতুন আস্তানার নাম ক্লাউড কিচেন।