Follow us on

Download the latest Anandabazar app

© 2021 ABP Pvt. Ltd.

Advertisement

২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ই-পেপার

আমার কলকাতায় হাত বাড়ালেই বন্ধু আর পা বাড়ালেই পথ

কলকাতার মতো বিরিয়ানি যে কোথাও পাওয়া যায় না। এ কথা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।

সুপ্রিয় দত্ত
কলকাতা ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১১:৪৯

সুপ্রিয় দত্ত, অভিনেতা

শক, হুণ, দল, পাঠান, মোগল যদি ভারতবর্ষে এক দেহে লীন হয়ে থাকে, কলকাতাতেও বহু বর্ণ এসে মিলেমিশে গিয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই। পৃথিবীর কত দেশের মানুষ কবে থেকে এই শহরের বাসিন্দা বলুন তো! আমরা কোনও দিন তাঁদের আলাদা পরিচয় নিয়ে ভেবেছি? সকলে আমাদের কাছে কলকাতাবাসী। এ ছাড়া তাঁদের অন্য পরিচয় আমাদের কাছে নেই। এটাই এই শহরের বিশেষত্ব। তার কাছে সকলের অন্য সত্তা মুছে যায়। কারণ সকলকে আপন করে নিতে পারে কলকাতা। তাই এই শহরে কোনও দিন জাতপাত সংক্রান্ত সমস্যা আমি অন্তত দেখিনি। আপনারা বলতে পারেন ’৪৬-এর দাঙ্গার কথা। কিন্তু আমি তো তখনও জন্মাইনি। আমার বয়স হতে চলল ৬০ বছর। আজন্ম কলকাতার মানুষ। আমার প্রজন্মে কোনও দিন এই শহরে জাতপাত নিয়ে সমস্যা দেখিনি। দেশের অন্য শহর কিন্তু জাতপাতের প্রশ্নে এত নিরুপদ্রব নয়।

কলকাতার এই আন্তরিক পরিবেশের কথা খুব মনে পড়ে যখন বাইরে থাকি। আর যেটা সবথেকে ভাল লাগে এই শহরের, তা হল নাটকের মহড়া। থিয়েটারমোদীরা হয়তো বলবেন মুম্বই, পুণেতেও মঞ্চাভিনয়ের পুরনো ধারা আছে। কিন্তু কলকাতায় যে পাগলের মতো ভালবাসা, সেটা কিন্তু কোথাও নেই। অন্য শহরে পেশাদার অভিনেতা। তাঁরা থিয়েটারে অভিনয় করে উপার্জন করেন। কিন্তু কলকাতার মতো শুধু অর্থের প্রত্যাশা না করে স্রেফ অভিনয়কে ভালবেসে কাজ করে যাওয়া— এ ছবি অন্য কোথাও নেই। নাটককে ভালবেসে প্রায় দরজা জানালা বিক্রি করে কাজ করে যান থিয়েটারকর্মীরা। এই আবেগের শৃঙ্খলহীনতার জন্যই কলকাতা এত প্রিয়। অন্য সব শহর আমার কাছে খুব যান্ত্রিক মনে হয়। সেখানে কলকাতার এই জমায়েতই তো পাব না। তবে কলকাতায় থিয়েটারে প্রান্তিক মানুষের অংশগ্রহণ কিন্তু তুলনামূলক ভাবে কম। আশা রাখি, এই ছবিটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টাবে।

Advertisement

সব মিলিয়ে কলকাতা কিন্তু এখনও আমার কাছে সিটি অব জয়। এ রকম একটা প্রাণবন্ত শহর আনন্দনগরী হবে না তো, আর কোন শহর হবে? আমি এখন ‘আজাদি’ বলে একটা নাটকে অভিনয় করছি। এত সিরিয়াস বিষয়ের নাটকেও যে অসংখ্য মুগ্ধ দর্শক ভিড় করবেন, আমি ভাবতেই পারিনি। এটা কলকাতা বলেই সম্ভব। সংস্কৃতির পাশাপাশি কলকাতার আরও যে দিকটা আমাকে টানে, তা হল অবশ্যই এর স্বাদবৈচিত্র। এই শহরে তো খাবারদাবারের জন্য আলাদা জোন রয়েছে। কোনও স্কুলের সামনে গেলে আচারওয়ালার কাছে হজমি, আচার, তেঁতুল। পাশেই ফুচকাওয়ালা। আবার, অন্য জায়গায় গেলে অন্য খাবার। এক একটা খাবারের জন্য আলাদা আলাদা মহল্লা। এই ছবি অন্য কোথাও পাবেন না কিন্তু। কলকাতার মতো বিরিয়ানি যে কোথাও পাওয়া যায় না। এ কথা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। কলকাতার মতো কিছুটা খাবারদাবার পাওয়া যায় ঢাকায়। তবে কলকাতার মতো বৈচিত্র কিন্তু সেখানেও নেই।

বাঙালি যে শুধু খায়, তা নয়। একইসঙ্গে প্রতিবাদ করে। প্রতিক্রিয়া জানায়। যে যা-ই বলুক, আমি এখনও বিশ্বাস করি, বাঙালি আজ যা ভাবে, ভারত কাল তা
ভাবে। রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বাকিদের তুলনায় বাঙালি অনেক অনেক এগিয়ে আছে। আর এগিয়ে আছে বলেই সব রকম রাজনৈতিক বৈপরীত্য ভুলে এখানে এখনও কফির কাপে তুফান ওঠে। মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের আড্ডা জমে ওঠে মুড়ি চপের ঠোঙায়। এই আবেশের জন্যই কলকাতা আজও আছে কলকাতায়। সেটুকুই ভরসা দেয়। বলে, কলকাতার রাজপথে অসুস্থ হয়ে পড়লেও সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে সংবেদনশীল হাত। কলকাতা বিশ্বাস করে, হাত বাড়ালেই বন্ধু। আর পা বাড়ালেই পথ।

Advertisement