কলকাতা মানেই আমার কাছে নস্ট্যালজিয়া। উত্তর কলকাতার বনেদি বাড়ি, সাবেক চৌকাঠ, নিউমার্কেটের নাহুমস, ময়দান, ভিক্টোরিয়া, ফোর্ট উইলিময়াম— সবই আমার কাছে স্মৃতিমেদুরতার কোলাজ। কলকাতা ছেড়ে না গেলেও এই শহর আচ্ছন্ন করে রাখে স্মৃতিকে। এই জিনিসটা কিন্তু মুম্বই বা অন্য শহরে পাই না। আমার তো মুম্বইতেও বাড়ি আছে। তবে কাজ না থাকলে কলকাতাতেই থাকি। মুম্বই আমার কাছে খুবই ‘শুষ্কং কাষ্ঠং’ মনে হয়। সে দিকে কলকাতা কিন্তু আন্তরিকতায় ভরা।
কলকাতা নিয়ে বলতে গেলে তো খাবারের কথা আসবেই। দক্ষিণ ভারতীয়, চাইনিজ থেকে বিরিয়ানি। পার্ক স্ট্রিটের ফ্লুরিজে ব্রেকফাস্ট, বারবি কিউয়ে ডিনার অথবা বিবেকানন্দ পার্কের লেবু চা এবং ফুচকা! কলকাতায় রকমারি খাবার তো বলে শেষ করা যায় না। আমি তো সল্টলেকে থাকি। এখানে কিন্তু দিব্যি ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আমি স্ট্রিট ফুড খাই। কলকাতায় শ্যুটিং থাকলে সে সময়েও রাস্তায় দাঁড়িয়ে মনের সুখে খাই। শ্যুটিংয়ে একটা নিরাপত্তা থাকে তো। অবাঞ্ছিত ভিড় এড়িয়ে স্ট্রিট ফুড এনজয় করা যায়।
কলকাতায় না থাকলে সবথেকে বেশি মিস করি এই খাবার। আর মিস করি বাংলা ভাষা। আমার কাছে বাংলা হল পৃথিবীর সবথেকে মিষ্টি ভাষা। চারদিকে বাংলা হরফ দেখে যা আনন্দ পাই, সেটা বলে বোঝাতে পারব না। ভাল, মন্দ তো সব শহরেই থাকে। আমি কলকাতার ভাল দিকটাই বেশি খুঁজে পাই। দেশের অন্য শহরের তুলনায় কলকাতাকে অনেক বেশি নিরাপদ মনে হয়। তবে একটা কথা, কলকাতার দোকানপাট যদি রাতে আরও একটু জাগত, বেশি ভাল হত। আমি কিন্তু নাইটলাইফের কথা বলছি না। সাধারণ শপিং মল যদি রাতে আরও একটু বেশি ক্ষণ খোলা থাকত, আমাদের মতো পেশার লোকজনদের সুবিধে হত। শুধু আমাদেরই প্যাক আপ হতে দেরি হয়, তা তো নয়। এখন আরও অনেক চাকরিতেই কাজ শেষ হয় বেশ রাতে। অনলাইন শপিং ছাড়া তাঁদের জন্য ঘুরে ঘুরে দোকানবাজার করার সময় কিন্তু রাতেই।
১০০ টাকা নিয়ে নন্দন চত্বরে ঘুরে বেড়াচ্ছি, ছোটবেলার সে স্মৃতি এখনও টাটকা
মুম্বই আমার কাছে খুবই ‘শুষ্কং কাষ্ঠং’ মনে হয়। সে দিকে কলকাতা কিন্তু আন্তরিকতায় ভরা।
ঋতাভরী চক্রবর্তী
আমি মানছি, কলকাতা অনেক দিকে পিছিয়ে আছে। অর্থনৈতিক দিক থেকে তো অনেকটা পথ এখনও পাড়ি দিতে হবে। কিন্তু অন্য দিকে মনে হয়, এই শহরটা অনেকের থেকে এগিয়েও আছে। এই শহরটা এখনও বই পড়ে। কলেজ স্ট্রিট থেকে পার্ক স্ট্রিট। বিভিন্ন ধরনের বইয়ের দোকান এই শহরে। এটা অন্য শহরে পাই না। আমি তো বইপাগল। তাই বইয়ের দোকান আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
কলকাতায় প্রিয়তম জায়গাগুলির মধ্যে আমার কাছে অন্যতম হল কলেজ স্ট্রিট। বইপাড়ায় ঘুরে ঘুরে বই কেনা আর তার পর প্যারামাউন্টে ডাব সরবতে তৃপ্তির
চুমুক। এটা কলকাতা ছাড়া আর কোথায় পাব বলুন তো? আমার কলকাতাযাপনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে চিড়িয়াখানা, যাদুঘর, নন্দন চত্বর,
যাদবপুরে মিলনদা’র ক্যান্টিন— সব কিছু। মায়ের হাত ধরে এই জায়গাগুলোয় কত বার গিয়েছি ছোটবেলায়। মা হয়তো জীবনানন্দ সভাঘরে কিছু বলছেন। আমি ঘুরে বেড়াচ্ছি নন্দন চত্বর জুড়ে। হাতে ১০০ টাকা। সেই দিয়ে দুল কিনছি। আইসক্রিম খাচ্ছি। আবার কখনও ঢুকে পড়ছি অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস-এ প্রদর্শনী দেখতে।
এ ভাবেই ছোটবেলা থেকে কলকাতা ঢুকে পড়েছে আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। প্রাণের শহর, প্রতিবাদী শহর, ভালবাসার এই শহরকে ছেড়ে থাকার কথা ভাবতে পারি না।