সন্দেশখালিতে মহিলাদের সমাবেশ। —নিজস্ব চিত্র।
লোকসভা ভোটের আবহে স্টিংকাণ্ডের পরেই সন্দেশখালিতে পুরনো জমি ফিরে পেতে কার্যত মরিয়া হয়ে উঠেছে শাসক তৃণমূল। সোমবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ তুলে ত্রিমোহিনী এলাকায় মিছিল জমায়েত করলেন প্রচুর মহিলা। সেই মিছিলে নেতৃত্ব দেন সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো।
গত ফেব্রুয়ারি-মার্চ সন্দেশখালির যে সব এলাকায় বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শাহজাহান ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে জমি দখল, নারী নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল, ত্রিমোহিনী তার মধ্যে একটি। বিক্ষোভ আছড়ে পড়ার পর ওই সব এলাকায় কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল শাসকদল। স্টিং অপারেশনের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই তাদের নতুন উদ্যমে দেখা গেল। সোমবার ফেরিঘাট থেকে মিছিল করে ত্রিমোহিনী এলাকায় আসেন মহিলারা। সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। সমাবেশে আসা কাকলি মণ্ডল, সুপ্রিয়া পাত্রেরা বলেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী নোংরা রাজনীতি করেছেন সন্দেশখালি নিয়ে। সন্দেশখালির মহিলাদের অসম্মান করেছেন। তাই শুভেন্দু অধিকারীর উপযুক্ত শাস্তি চাই।’’
সুকুমার বলেন, ‘‘সন্দেশখালিতে মহিলাদের দিয়ে নাটক করিয়ে ভোটে ফায়দা তুলতে চেয়েছিল বিজেপি। মহিলাদের ধর্ষিতা বানিয়ে গোটা বাংলার অপমান করেছে বিজেপি। এতে সন্দেশখালির মহিলারা গর্জে উঠেছেন। তাঁরা প্রতিবাদ করছেন, মিছিল করছেন।’’ ত্রিমোহনীর সমাবেশ থেকে বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী তথা সন্দেশখালির ভূমিকন্যা রেখা পাত্রকেও নিশানা করেছেন তৃণমূল বিধায়ক। তিনি বলেন, ‘‘রেখা পাত্র প্রতিবাদের মুখ নন, নাটকের মুখ, ষড়ষন্ত্রের মুখ। রেখা পাত্র প্রতিবাদের মুখ হতে পারেন না। রেখা পাত্র কোনও আন্দোলন করেননি। যদি আন্দোলন করতেন, তবে গঙ্গাধর কয়াল ও রকম ভাবে বলতেন না। তা হলে গঙ্গাধর কয়াল বলতেন না যে, রেখা পাত্র ২০০০ টাকা নিয়ে ধর্ষণের কেস সাজিয়েছে।’’ প্রসঙ্গত, রবিবারও সন্দেশখালির সরবেড়িয়ার আকুঞ্জিপাড়ায় বিক্ষোভ দেখান মহিলাদের একাংশ। তাঁরা শাহজাহানের মুক্তির দাবি জানিয়েছিলেন। শুভেন্দুরও শাস্তি চেয়েছিলেন তাঁরা।
স্টিং ভিডিয়োতে সন্দেশখালি-২ ব্লকের বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়ালকে দেখা গিয়েছে। ভিডিয়োয় গঙ্গাধর দাবি করেছেন, সন্দেশখালিতে মহিলাদের ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। মেয়েদের দিয়ে সাজিয়ে অভিযোগ করানো হয়েছে। সেই সূত্রেই রেখার নাম করেছিলেন গঙ্গাধর। দাবি করেছিলেন, রেখা নাকি দু’হাজার টাকার বিনিময়ে ধর্ষণের অভিযোগ করেছিলেন। গঙ্গাধরকে ওই ভিডিয়োতে আর এক মহিলার নাম করে বলতে শোনা যায়, তাঁকে আদালতে গোপন জবানবন্দি দিয়ে সাত-আট মাস আগে গণধর্ষণ হয়েছে বলে অভিযোগ করতে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনি তা-ই করেছিলেন। শুভেন্দুর আপ্তসহায়কের (পীযূষ) নাম উল্লেখ করে গঙ্গাধরকে ওই ভিডিয়োতে বলতে শোনা যায়, “পীযূষ ন্যাজাটের শুভঙ্কর গিরিকে (বিজেপির সন্দেশখালি বিধানসভার আহ্বায়ক) বিভিন্ন নির্দেশ দিতেন। আর শুভঙ্কর আমাকে বলে দিত, আমি সেই মতো কাজ করতাম।” প্রশ্নোত্তর পর্বের ওই ভিডিয়োর একটি অংশে গঙ্গাধরকে বলতে শোনা যায়, “শুভেন্দুবাবুর নির্দেশে সব হয়েছে। উনি আমাদের বলেন, এখানে তাবড় নেতাদের গ্রেফতার করাতে না পারলে তোমরা দাঁড়াতে পারবে না। আর গ্রেফতার করাতে গেলে ধর্ষণের অভিযোগ করাতে হবে।’’
বিজেপি অবশ্য ভিডিয়োটিকে ‘ভুয়ো’ এবং ‘বিকৃত’ বলে দাবি করেছে। সিবিআই তদন্ত চেয়েছে তারা। ভিডিয়োয় যে বিজেপি নেতার দাবি নিয়ে এত শোরগোল, সেই গঙ্গাধরও ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছেন। শুভেন্দুর দাবি, এই ভিডিয়োর নেপথ্যে তৃণমূলের হাত রয়েছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই নিশানা করেছেন বিরোধী দলনেতা।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম সংবাদের শিরোনামে উঠে আসে সন্দেশখালি। রেশন দুর্নীতি মামলায় সেখানকার বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালাতে গিয়ে আক্রান্ত হন ইডি আধিকারিকেরা। কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনার পরেই সন্দেশখালিতে আন্দোলন শুরু হয়। শাহজাহান ও তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে জমি দখলের পাশাপাশি নারী নির্যাতন, ধর্ষণের অভিযোগ তুলে পথে নামেন স্থানীয় মহিলাদের একাংশ। থানায় ধর্ষণের একাধিক অভিযোগও দায়ের হয়। পরে শাহজাহানকে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশ। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে পরে তাঁকে সিবিআই হেফাজতে নেয়। বর্তমানে শাহজাহান ইডি হেফাজতে রয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy