মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
সরকারি খাতায় বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির জন্য ক্ষতিপূরণের অঙ্ক ২০ হাজার টাকা। অথচ উত্তরবঙ্গে সাম্প্রতিক টর্নেডোয় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিকদের ফের বাড়ি তৈরির জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এতে নির্বাচনী বিধি ভেঙে ভোট-রাজনীতির অভিযোগও তুলেছেন বিরোধীরা। প্রশ্ন উঠছে, সেই কারণে কি এই ক্ষতিপূরণে এখনও সবুজ সঙ্কেত দেয়নি নির্বাচন কমিশন? এমনকি এ নিয়ে ধন্দ রয়েছে প্রশাসনের অন্দরেও।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ২০২০ সালের আগে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাওয়া কাঁচাবাড়ির ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৭,৬০০ টাকা দিত রাজ্য। ওই বছরেরই ২৫ জুন রাজ্য জানায়, আমপানকে বিশেষ ঘটনা (স্পেশ্যাল কেস) ধরে পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত পাকা এবং কাঁচাবাড়ির জন্য ২০ হাজার টাকা করে অনুদান (নিউ হাউস বিল্ডিং গ্রান্ট) দেওয়া হবে। আর বাড়ির আংশিক ক্ষতির জন্য সেই অঙ্ক হবে পাঁচ হাজার টাকা করে। ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সব জেলাশাসক, ডিভিশনার কমিশনারদের লিখিত ভাবে রাজ্য জানায়, ‘স্টেট এগজ়িকিউটিভ কমিটি’-র অনুমোদনক্রমে পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত কাঁচাবাড়ির জন্য ২০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ (হাউস বিল্ডিং গ্রান্ট) দেওয়া হবে। কিন্তু এখন বিরোধীদের অভিযোগ, ভোটের মুখে উত্তরবঙ্গে এখন সেই ২০ হাজার টাকার বদলে তার ছ’গুণ বা ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল ও প্রশাসন।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এক্স হ্যান্ডলে অভিযোগ করেন, ৯ এপ্রিল ক্ষতিপূরণের অনুমতি দেয় কমিশন। তাতে বলা হয়, ‘কমিশন অনুমোদন দিচ্ছে। তবে শর্ত হল, সরাসরি উপভোক্তাদের সেই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে চালু দরেই (২০ হাজার টাকা)। এবং এর মধ্যে কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জড়িত থাকতে পারবেন না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেই শর্ত উড়িয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
সূত্রের দাবি, কমিশনের সেই অনুমতির পরে ত্রাণ-পুনর্গঠনের কাজ হয়েছে উত্তরবঙ্গের টর্নেডো-ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে। সরকারি বিধি অনুযায়ী ২০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়েছে। তবে মমতা বা অভিষেকের ঘোষিত ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার অনুমোদন কমিশনের থেকে এখনও পাওয়া যায়নি বলেই সূত্রের খবর। যদিও নির্বাচনী প্রচারসভা থেকে অভিষেক কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন, “নির্বাচন কমিশন আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে কেস করতে চাইলে করতে পারে। কিন্তু আমরা অর্থসাহায্য করবই।”
আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, ২০২০ এবং ২০২১ সালের ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত সরকারি আদেশের পরে এখনও পর্যন্ত সেই অঙ্কের বদল ঘটেনি। ফলে বিরোধীদের প্রশ্ন, সংশ্লিষ্ট এলাকায় আবাস নিয়ে চাহিদা বা বঞ্চনার অভিযোগ তুলনায় বেশি রয়েছে বলেই কি ওই প্রকল্পের সমতুল বরাদ্দ দিতে চাইছে রাজ্য?
রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “আবাস নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। কারণ, যোগ্যরা বঞ্চিত। তাই ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার ঘোষণা করতে হয়েছে।” পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের পাল্টা মন্তব্য, “এ সব অভিযোগের যুক্তিই নেই।... একটা দুর্নীতিও ধরতে পারেনি।’’ কমিশনের উদ্দেশে তাঁর সংযোজন, ‘‘২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার অনুমতি মিলেছে। মানুষ কি ত্রিপলের তলায় থাকবেন?’’
আধিকারিকদের অনেকে জানাচ্ছেন, বিপর্যয়ের প্রাথমিক তথ্য তৈরি হয় ব্লক স্তরে। তা পরে বদলাতেও পারে। পঞ্চায়েতগুলি ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখে বিডিও এবং এসডিও-দের মাধ্যমে রিপোর্ট পাঠায় জেলাশাসকের কাছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি হয়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজ শুরু হয়। নবান্নের নির্দেশে ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গে গিয়েছেন পঞ্চায়েতের আধিকারিকেরা। ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট তৈরির কথা তাঁদেরই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy