Advertisement
Back to
Ananta Roy and Narendra Modi

অনন্ত রাগ প্রকাশ্যে ঝরল মোদীর সভায়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষেও মুখে নেই হাসি, কথাতেও ঝাঁজ

রাজ্যসভার সাংসদ করেও অনন্ত রায়কে বিজেপির করা যায়নি। এটা অনেক দিন থেকেই হাড়ে হাড়ে বুঝছে বিজেপি। বৃহস্পতিবার কোচবিহারে প্রধানমন্ত্রীর সভায় থাকলেও দলের অস্বস্তিই বাড়ালেন ‘মহারাজ’।

Why BJP leader Ananta Roy is not happy even after meeting with PM Narendra Modi

(বাঁ দিকে) অনন্ত রায়। নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কোচবিহার ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ২০:৫৭
Share: Save:

বৃহৎ কোচবিহার আলাদা রাজ্য চাই। গত লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে সমর্থন দেওয়ার সময়ে এমনই শর্ত দিয়েছিলেন তখন ‘গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন’ (জিসিপিএ)-এর সভাপতি অনন্ত রায়। যাঁকে রাজবংশী সমাজের অনেকে ‘মহারাজ’ বলেও সম্বোধন করেন। তিনি এখন রাজ্যসভায় বিজেপির সাংসদ। কিন্তু তার পরেও নিজের পুরনো দাবি থেকে সরছেন না অনন্ত। আর এ নিয়ে বার বার প্রকাশ্যে মুখ খুলে বিজেপির ‘অস্বস্তি’ বাড়িয়েছেন।

সেই একই ‘অস্বস্তি’ তৈরি হল বৃহস্পতিবার কোচবিহারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাতেও। এমনকি, সভার শেষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা বৈঠকের পরেও অনন্ত যা বলছেন, তা বিজেপির পক্ষে ‘স্বস্তিজনক’ নয়। কারণ, প্রকাশ্যেই অনন্তকে মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে, ‘‘মোদীজি তৃতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী হবেন। কিন্তু এই জেলায় কী হবে জানি না!’’

বিজেপি সূত্রের খবর, সভামঞ্চের ঠিক পিছনেই মোদীর বিশ্রামের জন্য তৈরি অস্থায়ী ঘরে অনন্তের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন মোদী। সেখানে হাজির ছিলেন সুকান্তও। তবে সেই বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে মুখে কুলুপ সকলের। অনন্ত শুধু বলেন, ‘‘কী নিয়ে কথা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী আমায় কী বলেছেন, তা আমি ভোট মিটে যাওয়ার পরেই বলব।’’

এই মন্তব্যের পিছনে অনন্তর কী বার্তা রয়েছে? তা স্পষ্ট করেননি অনন্ত। বরং গম্ভীর মুখ এবং ঝাঁজালো গলায় উত্তর দিয়েছেন, ‘‘বললাম তো, ভোট মিটে গেলে সব বলব।’’ ভোটের পরে কী বলবেন অনন্ত? তিনি কি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কোনও প্রতিশ্রুতি আদায় করতে পেরেছেন? না কি শাহের মতো মোদীও তাঁকে ধমকই দিয়েছেন?

Why BJP leader Ananta Roy is not happy even after meeting with PM Narendra Modi

কোচবিহারে রাসমেলা ময়দানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সমাবেশে। —নিজস্ব চিত্র।

বৃহস্পতিবার কোচবিহারের রাসমেলা ময়দানে প্রধানমন্ত্রীর সভামঞ্চে প্রথম সারিতেই বসেছিলেন অনন্ত। মোদীর পাশে ডান দিকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তার পরেই অনন্তের আসন। ওই ময়দানেই গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সভামঞ্চে ছিলেন অনন্ত। পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়েও মোদীর মঞ্চে ছিলেন তিনি। তবে বৃহস্পতিবার দৃশ্যতই তাঁকে খানিকটা অপ্রতিভ দেখিয়েছে। মনে হয়েছে মহারাজ মঞ্চে সশরীরে থাকলেও মানসিক ভাবে নেই। অন্তত প্রত্যক্ষদর্শীরা তেমনই বলছেন। বস্তুত, তাঁরা কয়েকটি দৃশ্যের উদাহরণও দিচ্ছেন। যেমন, মোদী মঞ্চে উঠেই হাতজোড় করে সকলের দিকে এগিয়ে যান। অনন্তের কাছে গেলেও প্রথমে মহারাজের তাঁর হাত নীচেই ছিল। পরে মোদীকে প্রতিনমস্কার জানান তিনি। মোদী আসার আগে অনেক নেতা বক্তৃতা করেছেন। কিন্তু অনন্ত সেই তালিকায় ছিলেন না। মোদীর বক্তৃতার সময়ে মঞ্চে বসা সকলকে হাততালি দিতে দেখা গেলেও অনন্তের হাত ওঠেনি। মোদীর সঙ্গে স্লোগান দিতে গিয়ে মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক বা সুকান্ত মুষ্টিবদ্ধ হাত মাথার উপরে তুললেও অনন্তর ঠোঁট বা হাত নড়েনি একটি বারও। একে বারে শেষে মোদী যখন সকলকে মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালাতে বলেন, তখন ঝিকিমিকি আলোয় ভরে যায় রাসমেলা ময়দান থেকে মঞ্চ। কিন্তু একটি মোবাইল ফোন জ্বলেনি। অনন্তের।

সভার পরে এ নিয়ে প্রশ্নও করা হয়েছিল অনন্তকে। মঞ্চে তো ফ্ল্যাশ জ্বালালেন না! ভোটে অনন্ত-ফ্ল্যাশ জ্বলবে তো? দ্রুত গাড়ির দরজা বন্ধ করতে করতে মন্তব্য ছুড়ে দেন অনন্ত, ‘‘মোদীজি তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসবেন। কিন্তু এখানে (কোচবিহারে) কী হবে, ফ্ল্যাশ জ্বলবে কি না বলতে পারছি না।’’

এর আগে এই ময়দানেই দু’টি সভায় অনন্ত যখন মঞ্চে ছিলেন, তখন গোটা মাঠ জুড়ে ছিলেন অনন্তর সাবেক দল (জিসিপিএ)-এর সমর্থকরা। বিজেপির পতাকার চেয়ে বেশি ছিল রাজবংশী সম্প্রদায়ের হলুদ ঝান্ডা। কিন্তু এ বার যে তেমন হবে না, তা আগেই জানা গিয়েছিল। অনন্তই বলেন, ‘‘আমি মঞ্চে থাকব। কিন্তু জনগণ কী করবে তা আমি বলতে পারব না।’’ কেন এমন বলছেন অনন্ত? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এখানকার মানুষের একটাই দাবি। সেটা পূরণ না হলে তাঁরা কী করবেন, তা আমি তো ঠিক করতে পারি না!’’ সেই সঙ্গে এটাও বলেছিলেন যে, ‘‘এখনও পর্যন্ত রাজবংশীদের কোনও দাবিই কেন্দ্রীয় সরকার পূরণ করেনি। তবে এ বার ক্ষমতায় এসে করবে বলে মনে করি।’’

অনন্ত যে বশে নেই তা আগেই বুঝেছে বিজেপি। মার্চ মাসেই তিনি বলেছিলেন, ‘‘বিজেপি আমায় সাংসদ করেছে। কিন্তু সম্মান দেয়নি। ডাস্টবিনের মতো ফেলে রেখেছে। ’’ সেই সময়ে আচমকা দলের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হননি অনন্ত। তাঁর ঘনিষ্ঠদের সূত্রে জানা গিয়েছিল, শাহের ফোন পেয়েই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন তিনি। সে প্রসঙ্গে পরে অনন্ত বলেছিলেন, ‘‘আমায় অমিত শাহজি ফোন করেছিলেন। উনি বলছেন ‘নো ইউটি, নো ভোট’ ক্যাম্পেন বন্ধ করতে হবে। আমার কথাই উনি শোনেননি। আমি এমন কোনও ক্যাম্পেন চলছে বলেও জানি না। কারা করছে, তারা রাজবংশী কি না, সেটাও আমার জানা নেই। সে সব বলার সুযোগ না দিয়েই শাহ ফোন কেটে দেন।’’

শাহের ফোনেই কি তিনি ক্ষুব্ধ? সেই প্রশ্নের জবাবে তখন অনন্ত বলেছিলেন, ‘‘আমার ক্ষোভের কোনও বিষয় নেই। এখানকার মানুষ পৃথক রাজ্যের দাবি নিয়ে ক্ষুব্ধ। বাজেট অধিবেশনের সময়েই আমি শাহের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টা উত্থাপন করেছিলাম। তখন উনি বিষয়টা দেখবেন বলে জানান। কিন্তু তার পরে এখনও পর্যন্ত কিছু হয়নি। এটা নিয়ে কারও মধ্যে ক্ষোভ জন্মেছে বা ভোট বয়কটের ডাক উঠেছে বলে শুনিনি। সেটা হলেও আমার সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ নেই। শাহ আমাকে বন্ধ করতে বলছেন। কিন্তু আমি যেটা জানিই না, সেটা বন্ধ করব কী করে?’’ এখনও যে সেই ক্ষোভ মেটেনি তা অবশ্য বৃহস্পতিবার স্পষ্ট। মঞ্চে মোদীকে বিশাল একটি মালা পরানো হয়। সেই সময়ে অনন্তকে স্থানীয় নেতারা কাছে আসতে বললেও নিজে থেকেই দূরে থেকে যান তিনি। সভার সরাসরি সম্প্রচারে যা দেখা গিয়েছে। তবে এর পরে মোদীর কাছাকাছি আসনেই বসেন অনন্ত। কিন্তু ওইপর্যন্তই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy