গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
দেশে ৪০০ আর বাংলায় ৩৫ পারের স্লোগান তুললেও প্রার্থী ঘোষণায় রাজ্যে এখনও ৪০ পার করতে পারেনি বিজেপি। এখনও পর্যন্ত বাংলার প্রার্থী ঘোষণার ক্ষেত্রে তিন দফায় তালিকা প্রকাশ করেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু বিস্ময়কর ভাবে এমন দু’টি আসনের প্রার্থীর নাম সোমবার পর্যন্ত অঘোষিত, যেগুলি জানতে দলের নেতাদেরই আগ্রহ সব চেয়ে বেশি। একটি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসন ডায়মন্ড হারবার এবং অপরটি পর পর দু’বার জেতা আসানসোল। শুধু বিজেপি নয়, শাসক তৃণমূলও এই দুই আসনের প্রার্থীর নাম জানতে চায়। অন্য দিকে, এই দুই কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম ঘোষণায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ‘গজেন্দ্রগমন’ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে দলের অন্দরেও। সেই সঙ্গে নানা নাম এবং নানা কারণ নিয়ে জল্পনার স্রোত বইছে।
অভিষেক ২০১৪ সালে ডায়মন্ড হারবার আসনে যখন ৭১,২৯৮ ভোটে জিতেছিলেন, তখন বিজেপি লাখ দু’য়েক ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল। ২০১৯ সালে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে। কিন্তু অভিষেকের জয়ের ব্যবধান ছিল ৩,২০,৫৯৪ ভোট। এ বার দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরে প্রথম ভোট অভিষেকের। অন্য দিকে, বিজেপির লড়াই তৃণমূলের সেনাপতি হয়ে ওঠা অভিষেকের বিরুদ্ধে। অথচ ২ মার্চ প্রথম তালিকা প্রকাশের পরে একটি মাস কেটে গেলেও ওই আসনের প্রার্থী কে হবেন, তা ঘোষণা করতে পারল না বিজেপি।
ঠিক উল্টো চিত্র আসানসোলে। ২০১৪ সালে ওই আসনে বিজেপি জিতেছিল ৭০,৪৮০ ভোটে। ২০১৯ সালে সেই ব্যবধান বেড়ে হয় ১,৯৭,৬৩৭ ভোট। যদিও জয়ী বাবুল সুপ্রিয় সাংসদ পদ ছেড়ে তৃণমূলে গিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী হওয়ার পরে ওই আসনে উপনির্বাচনে বিপুল ভোটে পরাজিত হয় বিজেপি। ৩,০৩,২০৯ ভোটের ব্যবধানে জেতা অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিন্হা এ বারেও ওই আসনে তৃণমূলের প্রার্থী। যে নামটি আনুষ্ঠানিক তালিকা ঘোষণার আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এখন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর নাম জানেন না শত্রুঘ্ন।
দুই আসন নিয়েই একটা সময় পর্যন্ত অনেক নামের জল্পনা ছিল। শেষ পর্যন্ত আসানসোলে প্রার্থী নিয়ে দু’টি নামের আলোচনা রয়েছে রাজ্য বিজেপির অন্দরে। এক জন এখনও টিকিট না পাওয়া প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনের বিদায়ী সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। অপর জন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া অতীতে আসানসোলের মেয়র এবং পাণ্ডবেশ্বরের প্রাক্তন বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি। যদিও ওই আসনের জন্য প্রথম তালিকায় ভোজপুরি শিল্পী পবন সিংহের নাম ছিল। তবে নাম ঘোষণার পরে পরেই নিজে থেকে সরে দাঁড়ান পবন। রাজনীতি থেকে দূরত্ব রাখার কথাও বলেন। পরে অবশ্য অবস্থান বদলে পবন রাজনীতি করতে চান বলেও ঘোষণা করেছেন। তবে তিনি কোন দলে যোগ দেবেন তা জানাননি। বিজেপি শিবিরে এমন জল্পনাও রয়েছে যে, পবনকেই আবার আসানসোলের প্রার্থী ঘোষণা করার ভাবনা থেকে পুরোপুরি সরে আসেননি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
তবে এমন কোনও কারণ নেই ডায়মন্ড হারবারের ক্ষেত্রে। প্রথম দিকে বিজেপি ওই আসনের জন্য প্রার্থী খুঁজতেই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিল। ‘কঠিন’ আসন বলে রাজি হননি পদ্মের অনেক পরিচিত মুখই। তবে এখন দাবিদার তিন জন। ২০১৪ সালে প্রার্থী হওয়া অভিজিৎ দাস, সদ্য কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে আসা কৌস্তভ বাগচি এবং পদ্মের আইনজীবী নেত্রী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল। কে প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে জল্পনা থাকলেও বিজেপি সূত্রে খবর, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে এ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কথা হয়ে গিয়েছে। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের আসন বালুরঘাটে ভোটগ্রহণ দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল। আপাতত তিনি নিজের আসনের মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন। রাজ্যের মন্ত্রী বিপ্লব মিত্রকে তৃণমূল প্রার্থী করায় ওই আসন এ বার ‘কঠিন’। তাই অন্য আসনের প্রার্থী নিয়ে আগ্রহ না দেখিয়ে নিজের জয় নিশ্চিত করাই সুকান্তের আশু লক্ষ্য।
রাজ্য বিজেপির একাংশ মনে করছে, ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থীর নাম ঘোষণায় বিলম্বের পিছনে শুভেন্দু এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অন্য অঙ্ক রয়েছে। ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি ওই আসনে প্রার্থী হতে চান। ধর্মের ভিত্তিতে ডায়মন্ড হারবার আসনের যে জনবিন্যাস, তাতে নওশাদ প্রার্থী হলে ভোট ভাগাভাগির অঙ্ক অনেকটাই বদলে যেতে পারে। বামফ্রন্ট তথা সিপিএম জোটসঙ্গী আইএসএফকে ওই আসন ছেড়ে দিতেও রাজি। কিন্তু তাঁর নিজের দলই এখনও পর্যন্ত নওশাদকে টিকিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়নি। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি প্রার্থী ঘোষণার আগে আইএসএফের দিকে তাকিয়ে আছে বলেই মনে করছেন পদ্মশিবিরের অনেকে। তাঁদের দাবি, নওশাদ প্রার্থী হলে এক রকম, নইলে অন্য কোনও অবস্থান নেবেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। যদিও বিজেপির ভিতরেও এমন মতামত রয়েছে যে, ‘তারকা’ আসনে যোগ্য প্রার্থীর অভাবেই এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সেটা আসানসোলের ক্ষেত্রেও সত্য বলে তাঁদের দাবি। তবে যাঁরা ডায়মন্ড হারবারের প্রার্থী ঘোষণায় বিলম্বের জন্য ‘নওশাদ তত্ত্ব’ দেখছেন, তাঁদের দাবি অন্য। রাজ্য বিজেপির ওই নেতারা বলছেন, শুধু অভিষেকের আসনের প্রার্থী ঘোষণা বাকি রাখলে বিরূপ সমালোচনা হবে বলেই ‘জুড়িদার’ করে রাখা হয়েছে আসানসোলকে। তবে বিরূপ আলোচনা তাতেও থামেনি। তৃণমূলের পক্ষে বার বারই দাবি করা হচ্ছে, ‘হারের ভয়ে’ বিজেপির কেউ ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী হতে চাইছেন না। সেই প্রচার যত বাড়ছে, দুই আসনের প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে চাতকের মতো দিল্লির দিকে তাকিয়ে থাকা বিজেপি নেতা-কর্মীদের অস্বস্তিও ততই বাড়ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy